দামুড়হুদায় মাদক উদ্ধার নিয়ে কার্পাসডাঙ্গা ফাঁড়ি পুলিশের লঙ্কাকান্ড

এক বস্তা ফেনসিডিল হয়ে গেলো ৩৬ বোতল : কিছুই জানেনা সাক্ষীরা

স্টাফ রিপোর্টার: দামুড়হুদার মুক্তারপুরে অভিযান চালিয়ে ৩৬ বোতল ফেনসিডিলসহ শাহিন নামের এক যুবককে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে দামুড়হুদা মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। তবে এ মামলার দু’জন সাক্ষী-ই কিছুই জানেন না। আটকের সময় জনসম্মুখে জব্দ তালিকা না করে প্রায় ঘণ্টা খানেক পর এসে জব্দ তালিকা দেখিয়ে দু’জনকে জোরপূর্বক সাক্ষী হিসেবে সাদা কাগজে স্বাক্ষর করে নেন কার্পাসডাঙ্গা পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা। এছাড়া আটকের সময় গাড়ির মধ্যে একটি বস্তাও দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন মামলার একজন সাক্ষী। তবে পুলিশ বলছে বস্তা নয়, একটি ব্যাগে ৩৬ বোতল ফেনসিডিল পাওয়া গেছে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে চলছে সমালোচনার ঝড়। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইনে বলা আছে, যেখানে আটক করা হবে সেখানেই জনসম্মুখে জব্দ তালিকা করতে হবে। অন্য কোথাও গিয়ে বা ফিরে এসে জব্দ তালিকা দেখিয়ে সাক্ষী করা এটা আইনসম্মত বা গ্রহণযোগ্য নয়। আটক শাহিন একই উপজেলার হাতিভাঙ্গা গ্রামের আব্দুল মজিদের ছেলে।
জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার অনুমানিক দুপুর ১২টা থেকে সাড়ে ১২টার মধ্যে দামুড়হুদা উপজেলার মুক্তারপুরের মোল্লা বাজার নামকস্থান থেকে সাদা পোশাকে প্রাইভেটসহ শাহিনকে আটক করে কার্পাসডাঙ্গা ফাঁড়ির পুলিশের একটি দল। এরপরই জনসম্মুখে তল্লাশি না করে প্রাইভেটকারটিসহ চালক শাহিনকে মারধর করে নিয়ে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর সেই পুলিশ সদস্যরা আবারো মোল্লা বাজারে এসে দুজনকে সাক্ষী করে সাদা কাগজে স্বাক্ষর করে নিয়ে যায়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও সাক্ষী ফল বিক্রেতা কাজেম আলী দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুর আনুমানিক ১২টার দিকে সাদা পোষাকে কার্পাসডাঙ্গা পুলিশ ফাঁড়ির কয়েকজন সদস্য দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিছুক্ষণ পর একটি কালো প্রাইভেটসহ চালককে আটক করেন। এ সময় চালক শাহিনকে মারধর করছিল তারা। আমরা মারধরের কারণ জিজ্ঞাসা করলে পুলিশ সদস্যরা জানান, ‘আপনাদের পরে জানানো হবে, এখন এখানে কেউ আসবেন না’। এরপরই তারা দ্রুত প্রাইভেটসহ চালক শাহিনকে নিয়ে চলে যায়। তিনি আরও বলেন, আটকের পর তল্লাশির সময় প্রাইভেটকারের মধ্যে একটি বস্তা ছিলো বলে শুনেছি। ঘটনার প্রায় এক ঘণ্টা পর আবারো ৩/৪জন পুলিশ সদস্যরা এসে আমাকে জানান স্বাক্ষর দিতে হবে। গাড়িতে কি ছিলো তা না দেখে প্রথমে স্বাক্ষর করতে না চাইলে তারা বলেন ৩৬ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়েছে। এরপরই আমি স্বাক্ষর করেছি। তবে আটকের সময় তারা জনসম্মুখে তল্লাশি করেনি বলে জানান তিনি।
অপর সাক্ষী একই বাজারের হোটেল ব্যবসায়ী লিটন দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, আমি দোকানে ছিলাম। এ সময় প্রাইভেটকারের চালককে মারধর করতে থাকে কয়েকজন। পরে জানতে পারলাম তারা প্রশাসনের লোক। এরপরই গাড়িসহ চালককে নিয়ে চলে যায়। প্রায় দুপুর ১টার পর আমাকে ডেকে নিয়ে সাদা কাগজে স্বাক্ষর দিতে বলে কার্পাসডাঙ্গা ফাঁড়ির ৩/৪জন পুলিশ সদস্য। আমি স্বাক্ষর দিতে অনিহা প্রকাশ করি। কেন স্বাক্ষর জানতে চাইলে তারা বলেন, আমরা ৩৬ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করেছি এ জন্য স্বাক্ষর দিতে হবে।
আমি তাদেরকে জানায়, গাড়িতে কি ছিলো শুধু আমি নিজেই না, বাজারের কেউ-ই দেখেনি তাহলে কেন স্বাক্ষর দিব? এ প্রশ্নের জবাবে তারা জানান, আমরা তাকে আটক করেছি এটা আপনি দেখেছেন, তাহলে এটার জন্যেই স্বাক্ষর করেন। পরে বাধ্য হয়ে সাদা কাগজে স্বাক্ষর করেছি। তিনি আরও বলেন, গাড়িতে কি ছিলো সেটা আমি দেখিনি এবং এখানে যারা ছিল তারা কেউই দেখেনি। এক কথায় এখানে কাউকেই দেখানো হয়নি। জোর করে স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা জজ কোর্টের আইনজীবী ও জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাড. মানিক আকবর বলেন, আইনের বিধান অনুযায়ী, পুলিশ যদি কখনো কোথাও কিছু মালামাল ধরে, নিয়ম হচ্ছে তখনই সেখানেই সেটা খুলতে হবে এবং উপস্থিত যারা থাকবে তাদেরকে দেখাতে হবে যে, কি কি মালামাল রয়েছে। তারপরই স্বাক্ষর নিতে পারবে। কোন ক্রমেই ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে সাক্ষীদের ডেকে স্বাক্ষর নিতে পারবে না। আবার ক্যাম্পে নিয়ে রেখে আবার পরে এসে স্বাক্ষর নিতে পারবে না। এটা আইনি নিষেধ আছে। আইনে স্পষ্টভাবে বলা আছে, যেখানেই অভিযান চলবে সেখানেই উপস্থিত জনগণকে কি পেল পুলিশ সেটা দেখাতে হবে। এক কথায় ঘটনাস্থলেই জনসম্মুখে জব্দ তালিকা করতে হবে। যদি এটা না করে পুলিশ তাহলে কোন মূল্যে নেই। এটা আইন মানবে না।
এ বিষয়ে জানতে কার্পাসডাঙ্গা ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) শেখ নাইমুল দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, জনসম্মুখেই জব্দ তালিকা করা হয়েছে। সাক্ষীরা হয়তো অন্য কোন কারণে অস্বীকার করছে। একটি ব্যাগে ৩৬ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়েছে।
দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি হুমায়ুন কবীর দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, চালকের সিটের পাশে থাকা একটি ব্যাগের মধ্যে ৩৬ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়েছে। কোন বস্তা ছিলো না। এ ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। মামলার সাক্ষীরা কিছুই দেখেনি এবং জানেন না এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাক্ষীরা দেখেশুনেই সাক্ষী দিয়েছেন।
চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (দামুড়হুদা সার্কেল) জাকিয়া সুলতানা দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, আমি কথা বলে জেনেছি, ঘটনাস্থলেই একটি দোকানের সামনে জব্দ তালিকা করা হয়েছে। কোন বস্তা ছিলো না। ৩৬ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়েছে। যে কয়টা ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়েছে সেটিই মামলায় দেখানো হয়েছে। এটার কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। যদি আপনার (প্রতিবেদক) কোন প্রত্যক্ষ সাক্ষী থেকে থাকে তাহলে আমার কাছে পাঠিয়ে দিতে পারেন। আমি তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবো এবং বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আমলে নিবো। চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত) রিয়াজুল ইসলাম দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, আমি চুয়াডাঙ্গাতে ছিলাম না। বিষয়টি আমার জানা নেই। আগামীকাল (আজ) বিষয়টি জেনে আপনাকে বিস্তারিত জানাতে পারবো।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More