দামুড়হুদায় কলাগাছের সুতা দিয়ে তৈরি পণ্যে আশার আলো

দামুড়হুদা অফিস: চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার পাটাচোরা গ্রামে পরিত্যক্ত কলাগাছ থেকে বানানো আঁশযুক্ত সুতা দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে বিভিন্ন পণ্য। এ সুতাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ক্ষুদ্র কুটিরশিল্প। বানানো হচ্ছে নৌকা, ওয়াল ম্যাট, ফুলদানি, শিকে, কলা গাছ, ক্যাপ, হারিকেন, পাপোশসহ বিভিন্ন ধরনের কুটির শিল্প সামগ্রী। এসব পণ্য ইতোমধ্যে মানুষের নজর কাড়তে শুরু করেছে। এই সুতা তৈরির পরিত্যক্ত উপাদান দিয়ে কেঁচো কম্পোস্ট সার তৈরির কাজে প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। অফিস আদালতে এই সামগ্রী শোভা পাচ্ছে। গ্রামের ২৫ জন নারী-পুরুষ সুতা রং করে বিভিন্ন রংয়ের এই সব সামগ্রী তৈরি করছেন। গ্রামের এই কাজে প্রশিক্ষিত নারীদের নিয়ে একটি সমিতিও গঠন করা হয়েছে।
কারখানার মালিক ওই গ্রামের মারজেল মল্লিকের ছেলে শাহিন ইসলাম ও তার বন্ধু আবু সাঈদ বলেন, প্রায় বছর দেড়েক আগে তারা দুইজন মিলে উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে দেশি প্রযুক্তিতে তৈরি মেশিনে কলা গাছের বাকল দিয়ে সুতা তৈরি শুরু করেন। এতে তারা খুব একটা লাভবান না হলেও উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় গ্রামের নারীদের নিয়ে এই সুতা থেকে বিভিন্ন ধরনের খেলনা ও ব্যবহার্য সামগ্রী তৈরি শুরু করা হয়। খেলনাগুলো দেখতে খুবই আকর্ষণীয়। ইতোমধ্যে এগুলো স্থানীয়ভাবে বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে এসকল পণ্য উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন অফিস আদালতে শোভা পাচ্ছে। এই কাজে কর্মরত রয়েছেন ২০ জন নারী ও ৫ জন পুরুষ। নারীরা তাদের বাড়িতে বসে এসব সামগ্রী তৈরি করে একত্র করে সমিতিতে জমা দিচ্ছেন। এখান থেকে নিজ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় এসব বিক্রি করা শুরু হয়েছে। এতে মুনাফা আসছে। বাংলাদেশ কুঠির শিল্প করপোরেশনে এসব মালামালের নমুনা পাঠানো হয়েছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে অর্ডার আসতে শুরু করেছে। বেশি বেশি উৎপাদন করতে না পারায় সরবরাহ করতে পারছি না। সরকারিভাবে সহজ শর্তে ১০ লাখ টাকার মতো ঋণ সহায়তা পেলে এখানে ২০০ থেকে ৩০০ নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান সম্ভব হতো। সে সাথে বিদেশে রপ্তানি করতে পারলে এ থেকে ভালো লাভবান হওয়া যাবে। তিনি আরও বলেন, তার এখন ৪ মণ সুতা মজুদ আছে যার দাম ২ লাখ টাকা। এ দিয়ে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকার বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করা যাবে। এতে তার সকল খরচ খরচা বাদ দিয়ে প্রায় ১ লাখ টাকা লাভ হবে।
দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিধ মনিরুজ্জামান বলেন, কলা গাছের তৈরি সুতা দিয়ে ও বিভিন্ন ধরনের কুটির শিল্পের সামগ্রী তৈরির কাজ শুরু করা হয়েছে। এসকল সামগ্রীর মধ্যে মানুষের ব্যবহারের ক্যাপ ও ঘরে ব্যবহারের চপ্পল খুবই চাহিদাসম্পন্ন। উৎপাদন বৃদ্ধি করা গেলে খুব দ্রুত এই ক্যাপ ও চপ্পলসহ সামগ্রীগুলো বিদেশে রপ্তানী করা সম্ভব হবে। ইতোমধ্যে গ্রামে আইপিএম নামে সমিতি গঠন করা হয়েছে। এই সতিতিতে ২০ জন নারী ও ৫ জন পুরুষ রয়েছেন। এদেরকে এই কাজের উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রশিক্ষণের পর তাদের পণ্যের মান আরও ভালো হবে। এরপর প্রত্যেককে একটি করে সুতা তৈরির মেশিন ও একটি সুতা ফিনিশিংয়ের মেশিনের ব্যবস্থা করা হবে। এসকল সামগ্রী তৈরিতে সবার আগে প্রয়োজন হবে প্রচুর পরিমাণ কলাগাছ। তাই কলা চাষের জন্য এলাকার চাষিদেরকেও উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এতে করে কলার চাহিদাও পূরণ হবে।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More