দর্শনা কেরুজ চিনিকলের ৯ খামারে ৯১৫ একর জমিতে আখের চাষ
দ্বিগন্ত জুড়ে সবুজ বেষ্টনি : প্রত্যাশার চাইতে ফলন বেশি হবে বলে মিল কর্তৃপক্ষের ধারণা
নজরুল ইসলাম: মাথাব্যথা যদি পুরো শরীরটাকে অক্ষম করে দেয়, তাহলে মাথাটা কেটে বাদ দিলে সক্ষমতা ফিরবে এটি নিশ্চয়ই হাস্যকর। আর মাথাব্যথার কারণ চিহ্নিত করে তার উপশম করা বিজ্ঞান বা বাস্তব সত্য। সমস্যা চিহ্নিতকরণ করে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছেন কেরুজ চিনিকল কর্তৃপক্ষ। একসময় চিনিশিল্প লাভজনক ছিলো। বিভিন্ন কারণে সে শিল্পের ঘাড়ে ভর করেছে লোকশানের বোঝা। নানা প্রতিকুলতা কাটিয়ে দর্শনা কেরুজ চিনিকলের নিজেস্ব জমিতে ২০২১-২২ রোপণ মরসুমে আখ চাষ করেছে ৯১৫ একর জমি। বিগত দিনের তুলনায় চলতি মরসুমের আখ চাষে দেখা দিয়েছে ভিন্নতা। চারা রোপণের পর থেকে প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকুলে থাকায় চারা আখের দৃষ্টিনন্দন সবুজ অভয়ারণ্য যে কারো চলার পথ একটু হলেও থামিয়ে দেবে। ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সার্বক্ষণিক তদারকি এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আখ চাষে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে বলে সচেতন মহল মনে করছে। আগামী মাড়াই মরসুম প্রত্যাশার চাইতে ফলন বেশি হবে বলে কর্তৃপক্ষ মনে করছে।
চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় অবস্থিত জেলার একমাত্র ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান দর্শনা কেরু এ্যা- কোম্পানির চিনিকল। যা ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত। এ চিনিকলের ৯টি কৃষি খামারে জমির পরিমাণ ৩ হাজার ৫৫ একর। চিনিকলের চিনি উৎপাদনের একমাত্র কাঁচামাল হচ্ছে আখ। ২০২১-২২ রোপা মরসুমে আখ রোপণ করা হয়েছে ৯১৫ একর জমিতে। যার মধ্যে ফুরশেদপুরে ১১৫ একর, বেগমপুরে ১০৫ একর, ঝাঝরিতে ১০৮ একর, ডিহিতে ১৩৫ একর, হিজলগাড়ীতে ৭০ একর, ফুলবাড়িতে ৭৩ একর, ছয়ঘরিয়ায় ৫০ একর এবং ঘোলদাড়ি কৃষি খামারে ১৪০ একর। এসব আখ থেকে ২০২২-২৩ মাড়াই মরসুমে প্রায় ২০ হাজার মেট্রিকটন আখ উৎপাদন হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। যা বিগত দিনের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করবে। দৃষ্টিনন্দন আখের এ চারা মাঠে মাঠে দোল খাচ্ছে বাতাসে। চিনিকলের নিজস্ব জমি ছাড়াও এলাকার চাষিরা আখ চাষ করেছেন ৬শ একর জমিতে। সব মিলিয়ে চলতি রোপা মরসুমে মোট আখ চাষ হয়েছে ১ হাজার ৫১৫ একর জমিতে। এরই মধ্যে চাষিদের আখ চাষমুখি করতে বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। নিজস্ব জমির আখের ব্যাপারে সার্বক্ষণিক তদারকি, চাষিদের সাথে যোগাযোগ ও উঠান বৈঠক অব্যাহত রেখেছেন। ফুরশেদপুর কৃষি খামারের ইনচার্জ এমদাদুল হক বলেন, কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক পরিচর্যা ও দায়িত্বরত শ্রমিকদের আন্তরিকতার কারণেই এ বছর খামার এলাকা জুড়ে দৃষ্টিনন্দন আখ তৈরী হয়েছে। কৃষি খামারের ফার্ম ম্যানেজার সুমন কুমার সাহা বলেন, বীজ রোপনের পর তাপমাত্রা বেশি থাকায় শঙ্কায় ছিলাম। পর্যায়ক্রমে বৃষ্টিপাত হওয়ায় সে শঙ্কা কেটে গেছে। সেচ এবং কীটনাশক সার এবং পরিচর্যা করায় চলতি রোপা মরসুমে আখ চাষে ভিন্নতা এসেছে। যার ফল আগামী মাড়ই মরসুমে পাব বলে মনে করছি। চিনিকলের ব্যবাস্থপনা পরিচালক মোশারফ হোসেন বলেন, এ শিল্পপ্রতিষ্ঠানটি জেলার একামত্র অর্থনৈতিক চালিকা শাক্তি। এর সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছে অনেক মানুষের জীবন ও জীবিকা। প্রতিষ্ঠনটিকে টিকিয়ে রাখতে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। এলাকার চাষিদের প্রতি আহ্বান থাকবে প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে যেনো লাগানো হয় আখ। এ প্রতিষ্ঠানে শুধু চিনি উৎপাদনই হয় না, ডিস্টিলারী বিভাগ থেকে সরকার যেমন পায় মোটা অংকের রাজস্ব, তেমনই প্রতিষ্ঠানটি সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে বাস্তবায়ন করে থাকে অনেক কাজ।