দর্শনায় কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিতে ব্যস্ত নেতৃবৃন্দ : আজ কেরুতে আসছেন তৌফিক

দর্শনা অফিস: আগামী সপ্তাহে বন্ধ হতে পারে কেরুজ চিনিকলের ২০২৪-২৫ আখ মাড়াই মরসুম। মরসুম চলাকালীন সাময়িক স্থগিত করে রাখা শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের নির্বাচনী তফসিল ঘোষনায় জোর দিয়েছে ভোটাররা। যে কারণে ফের নির্বাচনী আলোচনায় সরগরম হচ্ছে কেরুজ আঙিনা। ভোটের পক্ষে-বিপক্ষে গোপনে কাঠি নাড়লেও প্রকাশ্যে নেতৃবৃন্দ এক কাতারেই থাকছেন সবসময়। মনদ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ না ঘটলেও ভোটার ঠিকই টের পাচ্ছে রহস্যের নেপথ্যে কে বা কারা। সকল মনদ্বন্দ্ব ও ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করেও ভোটের দাবিতে সোচ্চার সকলে। ভোটের পরিবেশ ও পরিস্থিতি সরেজমিন পরিদর্শনে কেরুজ চিনিকলে আজ আসছেন কুষ্টিয়া আঞ্চলিক শ্রম অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক তৌফিক হাসান।
জানা গেছে, ১৯৩৮ সালে কেরুজ চিনিকল প্রতিষ্ঠিত হলেও এখানে শ্রমিক ইউনিয়নের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৫৮ সালে। সে থেকে গতানুগতিকভাবে প্রতি দু’বছর পরপরই নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি দায়িত্ব পালন করে আসছে। কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের ১৮ অনুচ্ছেদের ‘ক; ধারায় উল্লেখ রয়েছে রাষ্ট্রীয় জরুরী অবস্থা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অনুরুপ কোন কারণ ছাড়া কার্যনির্বাহী কমিটির মেয়াদ ২ বছর পার হলে ওই কমিটি অবৈধ, অকার্যকর ও বাতিল বলে গণ্য হবে। শুরুর দিকে নিয়ম মাফিক নির্বাচনের সকল কার্যক্রম পরিচালিত হলেও জটলা সৃষ্টি হয় ৬ ফেব্রুয়ারি। ১৮ জানুয়ারি কার্যনির্বাহী পরিষদের শেষ বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক বেশ ধকল সামলে ২৫ জানুয়ারি সাধারণসভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভা থেকে যেমন নির্বাচন পরিচালনা কমিটি চুড়ান্ত হয়েছে, তেমনি ১৬ ফেব্রুয়ারিও ভোটের দিনক্ষণ নির্ধারিত করা হয়। তারই মধ্যে বেশ কয়েকটি বাধার দেয়াল টপকাতে হয়েছে নেতৃবৃন্দকে। অবশেষে বড় বাধার দেয়াল সৃষ্টি হয় ৬ জানুয়ারিতে এ নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী সৌমিক হাসান রূপমকে অন্যত্র চিনিকলে বদলিকে কেন্দ্র করে। ৭ জানুয়ারি শ্রমিক নেতৃবৃন্দ রূপমের বদলি আদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে নির্বাচন সাময়িক স্থগিত রাখতে মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে লিখিত আবেদন করেন। সে আবেদনের প্রেক্ষিতে নির্বাচন সাময়িক স্থগিত করা হয়। মাঝখানেও কেরুজ এলাকায় ঘটে যায় অপ্রীতিকর কয়েকটি ঘটনা। যা ২-৩ দিনের মধ্যেই স্বাভাবিক পরিবেশেও রূপ নেয়। ফলে ১৭ ফেব্রুয়ারি শ্রমিক নেতৃবৃন্দের ৩২ জন স্বাক্ষরিত পুনরায় তফসিল ঘোষণাসহ ভোটের দাবিতে লিখিত দেন মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে। সে পত্রে কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে সে দায়ভারও নিজেরা নেবেন বলেও জানান। সে মোতাবেক নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান, মিলের মহাব্যবস্থাপক (অর্থ) আব্দুছ ছাত্তার কুষ্টিয়া আঞ্চলিক শ্রম অধিদপ্তর, চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জকে নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিষয়ক পত্র দেন। এরই মধ্যে শ্রমিক নেতৃবৃন্দ ভোটের দাবিতে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের সাথেও করেছেন বৈঠক। এছাড়া কেরুজ এলাকা নিরাপত্তা নিশ্চিত করণে কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যেই প্রতিটি প্রবেশ পথে গেট স্থাপনের পাশাপাশি নিরাপত্তাকর্মীর ব্যবস্থাও করেছে। অচিরেই সিসি টিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন মিলের ব্যবস্থাপনা পর্ষদের পক্ষ থেকে। সেক্ষেত্রে নিরাপত্তা বিঘিœত হওয়ার সুযোগ নেই। আগামী ১০ বা ১১ মার্চের মধ্যে চলতি আখ মাড়াই মরসুম বন্ধ হতে পারে। সেক্ষেত্রে দেশের বিভিন্ন জেলার মরসুমি শ্রমিক-কর্মচারিরাতো বাড়ি ফিরবেন। নির্বাচন বিলম্বিত হলে দূরের ওই ভোটারদের কোনভাবে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না বলে দাবি করছেন নেতৃবৃন্দ। এদিকে দেশের ৯টি চিনিকলের মধ্যে নর্থবেঙ্গল, রাজশাহী, ফরিদপুর, নাটোর, জিল বাংলা, মোবারকগঞ্জ, জয়পুরহাট, ঠাকুরগাঁও চিনিকল সহ রেইন উইক জঞ্জেশ্বরের নির্বাচন শেষ হয়েছে। স্মরণকালের রেকর্ড ভাঙ্গার পথে কেরুজ চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের নির্বাচন। শ্রমিক নেতৃবৃন্দ মনে করেন এবারের ভোট কোন কারণে বন্ধ রাখা হলে তা হবে ইউনিয়নের ৬৭ বছরের কলঙ্কিত অধ্যায় রচিত। দেরিতে হলেও শ্রমিক-কর্মচারীদের দাবি পূরণের কিছুটা আশ্বাস মিলছে। গতকাল রোববার বিকেলে কুষ্টিয়া আঞ্চলিক শ্রম অধিদপ্তর থেকে প্রেরিতে পত্রে জানা গেছে, কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের দ্বি-বার্ষিক নির্বাচন সংক্রান্ত সার্বিক পরিস্থিতি সরেজমিনে তত্বাবধান করতে ৩ মার্চ বেলা ১১টার দিকে ওই দপ্তরের সহকারী পরিচালক তৌফিক হোসেন পরিদর্শন করবেন। এ পত্রে অনেকটাই আশার বাণী বলে মনে করছে মিলের ভোটাররা।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More