তুলির আঁচড়ে সেজেছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার
পুষ্পার্ঘ ও শ্রদ্ধাঞ্জলির তোড়া তৈরিতে ব্যস্ত ফুল ব্যবসায়ীরা
আনোয়ার হোসেন: আজ রাতেই শ্রদ্ধা জানানো হবে ভাষা শহীদদের। রক্তস্নাত ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি বহন করা মহান শহীদ দিবস। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বাংলা ভাষাভাষি মানুষ এদিন স্মরণ করবে বাঙালি জাতির সূর্য সন্তান ৫২’র ভাষা আন্দোলনের বীর শহীদদের। ইতিহাসের পাতায় রক্ত পলাশ হয়ে ফোটা সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, সফিউর, আউয়াল, অহিউল্লাহর রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি। শহীদ মিনারের বেদীজুড়ে আঁকা হয়েছে আলপনা। লাল-শাদা আঁচড়ে স্পষ্ট হচ্ছে চারুকর্ম। দেয়াল দেয়ালে বর্ণমালার অক্ষরে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মাতৃভাষার মর্ম। শনিবার বিকেলে শহীদ মিনার এলাকায় দেখা যায়, সৌন্দর্য বাড়াতে শহীদ মিনারের মূল বেদীসহ আশপাশের রাস্তা ও রাস্তায় নতুন রঙ করা হচ্ছে। ঝাড়ু ও ধোয়ামোছাসহ পরিষ্কার করার কাজ চলছে পুরোদমে। আলপনা, সাজসজ্জা ও গাছের গোড়ায় রঙ করার কাজ চলছে।
অমর একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে দিবসটি পালন করে সারা বিশ্বে। আমাদের দেশে এই দিবসটি পালন করা হয় গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে। আয়োজন করা হয় সরকারি, বেসরকারি নানা অনুষ্ঠান। অমর একুশে উপলক্ষে শহীদ মিনারকে সাজানো হচ্ছে বর্ণিল সাজে। সারা বছর অবহেলায় ও অযতেœ পড়ে থাকলেও শহীদ মিনারকে এখন যেন নতুনভাবে রূপ দেয়া হচ্ছে। অমর একুশে উপলক্ষে কয়েকদিন ধরেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চলেছে পরিষ্কার ও সাজসজ্জার কাজ। গতকাল শনিবার থেকে শুরু হয়েছে তুলির আঁচড়ে শহীদ মিনারকে সাজিয়ে তোলা। শহীদ মিনারের মূল বেদিতে আঁকা হচ্ছে সুন্দর সুন্দর আলপনা। একেকজনের নিপুণ হাতে আঁকা হতে থাকে একেকটি আলপনা। নিমেষেই অন্য আরেকজনের তুলির ছোঁয়ায় সেখানে বসে যায় নানা রঙ কিংবা নকশা। এভাবে লাল ইটের বেদি, ইটের দেয়াল কিংবা পিচঢালা রাস্তা সবই হয়ে ওঠে শিল্পীর ক্যানভাস। প্রথমে মূল বেদির কাজ শেষ হওয়ার পর শুরু হয় রাস্তায় আলপনা আঁকা। দোয়েল চত্বর থেকে শুরু করে পলাশি পর্যন্ত আলপনা আঁকা হয়।
একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনে চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরসহ সারাদেশে চলছে জোর প্রস্তুতি। এর মধ্যে ফুল বিক্রির ধুম পড়েছে। বিশেষ করে পুষ্পার্ঘ ও শ্রদ্ধাঞ্জলির তোড়া তৈরিতে ব্যস্ত ফুল ব্যবসায়ীরা। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় ফুলের তোড়া। ফুলের দোকানগুলোতে ফুলের তোড়ার পাশাপাশি মাথার রিঙ, রজনিগান্ধার মালা, রক্তজবা ও চন্দ্রমলি¬কার সমন্বয়ে মালা তৈরি করা হচ্ছে। প্রতিটি ফুলের দোকানে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। রাশি রাশি ফুল, বাঁশের চাটাই আর শোলায় তৈরি হচ্ছে ছোট বড় ও মাঝারি আকারের তোড়া।
দোকান মালিক ও কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে অনেক অর্ডার পড়েছে। গত কয়েকদিনে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ফুলের তোড়ার অর্ডার পাওয়া গেছে। সে অনুযায়ী তোড়া তৈরির কাজ করছেন কারিগররা। এখনও অর্ডার পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন কয়েকজন ব্যবসায়ী।