স্টাফ রিপোর্টার: এ বছর মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তির যোগ্যতায় চমক দেখিয়েছে চুয়াডাঙ্গার ছেলে আফরোজ গালিব কাব্য। তার মেরিট পজিশন ৮৬তম। তিনি চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার জেহালা ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের আহাদ আলী মোল্লা ও ফরিদা খাতুনের একমাত্র ছেলে। ওই গ্রামের মকবুল মোল্লা ও সাকিবা বেগমের নাতি আফরোজ গালিব কাব্য। কাব্যর পিতা আহাদ আলী মোল্লা আলমডাঙ্গার সৃজনী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক ও দৈনিক মাথাভাঙ্গার বার্তা সম্পাদক। কাব্যর মা ফরিদা খাতুন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স। তারা বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা কোর্টপাড়ার স্থায়ী বাসিন্দা। এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা গত শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয়। এবার আবেদন জমা পড়েছিল ১ লাখ ৩৫ হাজার ২৬১টি। কোটাসহ মেডিকেলে মোট আসন ৫ হাজার ৩৮০টি। সেই হিসাবে এই বছর ১টি আসনের জন্য ২৫ জন (২৫ দশমিক ১৪) পরীক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন। এ পরীক্ষার ফলাফল গতকাল রোববার প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত ফলাফলে চুয়াডাঙ্গার সন্তান হিসেবে শীর্ষে অবস্থান করছেন আফরোজ গালিব কাব্য। সে ৮৬তম মেরিট পজিশন নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। আফরোজ গালিব কাব্যকে প্রথমে সেসময়ের চুয়াডাঙ্গা কিন্ডারগার্টেন ভি.কুইন্স ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি করা হয়। ২০১৪ সালে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে চুয়াডাঙ্গার ভিক্টোরিয়া জুবিলি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন। ২০১৬ সালে ওই স্কুল থেকে পিইসি পরীক্ষায় ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পান তিনি। ২০১৯ একই বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষায় ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি লাভ করেন। ওই বিদ্যালয় থেকে ২০২২ সালে সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পেয়ে এসএসসি ও চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ থেকে ২০২৪ সালে সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পেয়ে এইচএসসি উত্তীর্ণ হন। ছেলেবেলা থেকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার ইচ্ছাতে বাবার পূর্ণ সমর্থন থাকলেও মায়ের ইচ্ছা ছিল ছেলে ডাক্তার হবে। পরে বাবার সমর্থনও কমে আসে। বাবা-মায়ের স্বপ্নপূরণে এবং মানব দেহ সম্পর্কে জানার আগ্রহ থেকে কাব্য নিজেও মেডিকেল কলেজে ডাক্তারি পড়ার লক্ষ্য স্থির করেন। কাব্যর আগ্রহের বিষয় আগ্রহের বিষয় ভাষা, ইতিহাস, দর্শন। অবসর সময় কাব্য পৃথিবীর বিভিন্ন দার্শনিকের লেখা বই ও ইতিহাস পড়েন। কাব্য তার শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আমার স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। এছাড়া আমি ব্যক্তিগতভাবে কিছু স্যারের কাছে গিয়ে শিক্ষালাভ করেছি ও দিকনির্দেশনা পেয়েছি। তারা হলেন, শিলা ম্যাডাম, অশোক স্যার, নাজিম স্যার, শাহিন স্যার (ইংরেজি), শাহিন স্যার, রেজাউল স্যার, আতিয়ার স্যার, বকুল স্যার, রাজ্জাক স্যার, রোকন স্যার, শহিদুল স্যার (ইংরেজি), নুরুল স্যার (গণিত) সালাম স্যার, স্বপন স্যার (জীববিজ্ঞান), দোস্ত মোহাম্মদ স্যার (রসায়ন), একরামুল স্যার (পদার্থবিজ্ঞান), হেমায়েত স্যার (উচ্চতর গণিত)সহ অনেক শিক্ষক ও গুরুজন আমাকে শিক্ষা ও পরামর্শ দিয়েছেন। সঠিক পরামর্শের কারণেই হয়তো সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তটা নিতে পেরেছিলাম। কাব্য বলেন উচ্চমাধ্যমিকে স্বাভাবিক পরিশ্রম করেছি। পড়ার ফাঁকেও অনেক কিছু করেছি। প্রথম থেকেই মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির আদলে পড়াশোনা করেছি। অ্যাডমিশনের সময় উন্মেষের ফুল কোর্স ও রেটিনার মডেল টেস্ট ব্যাচে প্রস্তুতি নিয়েছি। একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে আমার চেয়েও হয়তো অনেকে অনেক বেশি পরিশ্রম করেছেন। কিন্তু অনেকেই হয়তো আমার মতো ফলাফল বা সাফল্য পাননি। ভাগ্যের একটা বিষয় থাকেই। সৃষ্টিকর্তার সাহায্য ছাড়া আমার এ সাফল্য অর্জন সম্ভব হতো না। আলহামদুলিল্লাহ। পরবর্তীতে যারা মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে ইচ্ছুক তাদের জন্য আমার পরামর্শ হলো, মূল বই বুঝে বুঝে পড়তে হবে। বই দাগানো অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অনেকে বিভিন্ন পিডিএফ দেখে বই দাগিয়ে থাকে। কার্যকর পদ্ধতি হলো নিজে কোনো অধ্যায় পড়ার পর বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হলে অধ্যায়টি আবার পড়া। এভাবে দুই তিনবার পড়া শেষ হলে অধ্যায়ের যে অংশটুকু মনে থাকছে না শুধু সেই অংশটুকু দাগানো উচিত। এতে করে পরবর্তীতে দাগানো অংশটুকু পড়লেই পুরো অধ্যায়টি পড়া হয়ে যায়। পরিশেষে আমি আমার প্রিয় চুয়াডাঙ্গাসহ দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই। আমি যেন সাফল্যের সাথে ঢাকা মেডিকেলে অধ্যয়ন সম্পন্ন করতে পারি এবং আমার নিজ গ্রাম কৃষ্ণপুরের সাধারণ মানুষসহ জেলার সবাইকে সেবা করতে পারি। সেবা করতে পারি দেশবাসীকে। একজন ভালো চিকিৎসকের পাশাপাশি একজন ভালো মানুষও হতে চাই আমি। এ জন্য সবার দোয়া চাই।
এদিকে কাব্য ঢাকা মেডিকেলে ভর্তির যোগ্যতা অর্জনা করায় অসংখ্য মানুষ তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন এবং দোয়া করেছেন। তার এ ফলাফলে অত্যন্ত খুশি হয়ে দৈনিক মাথাভাঙ্গার সম্পাদক সরদার আল আমিন ও সম্পাদক পতœী লুনা শারমিন শশী বলেছেন, আমাদের সন্তান আফরোজ গালিব কাব্য যে ফলাফল করেছে তাতে চুয়াডাঙ্গাবাসীর মুখ উজ্জ্বল করেছে। ভবিষ্যতে সে আরও দায়িত্ববান হয়ে এগিয়ে যাবে এবং চুয়াডাঙ্গাকে সারাদেশে মেলে ধরবে। আমরা তার জন্য দোয়া করি।
পূর্ববর্তী পোস্ট
চুয়াডাঙ্গা জেলা উন্নয়ক সমন্বয় কমিটির সভায় জেলা প্রশাসক জহিরুল ইসলাম
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.