ডিজেলের দর বৃদ্ধিতে মেহেরপুরের কৃষিতে বিরূপ প্রভাব
জেলার অর্থনীতির মূল ভিত্তিতে কৃষিতে বিরাজ করছে চরম অস্থিরতা
মাজেদুল হক মানিক: ডিজেলের দর বৃদ্ধিতে দিশেহারা মেহেরপুরের কৃষকরা। কৃষি নির্ভর এই জেলার অর্থনীতির মূল ভিত্তিতে কৃষিতে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। উঠতি আমন ধান ঘরে তোলা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। দ্রুত দর কমানো না হলে কৃষি সেক্টর ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কৃষি সংশ্লিষ্ঠরা।
গাংনী উপজেলার ভোমরদহ গ্রামের কৃষক মিলন হোসেন। ১১ বিঘা জমিতে তিনি আমন ধান আবাদ করেছেন। ডিজেলর দর বৃদ্ধিতের কৃষকদের দুরাবস্থা নিয়ে তিনি কথা বলেন সাংবাদিকদের সাথে। তিনি বলেন, চাষাবাদ এখন যন্ত্র নির্ভর। কম্বাইন্ট হারভেস্টর দিকে ধান কেটে তা বাড়িতে আনা হয় যানবাহনে। স্যালোইঞ্জিন চালিত বিভিন্ন যান ধান তোলার খরচ দ্বিগুন বাড়িয়ে দিয়েছে। বেড়েছে ধান তোলা খরচ। খরচ বৃদ্ধিতে ধান কাটা মাড়াই বিলম্ব হচ্ছে।
মুজিবনগর উপজেলার মানিকনগর গ্রামের ধানচাষি শফি উদ্দীন বলেন, আমন ধান কাটতে এখনও প্রায় দুই সপ্তাহ সময় লাগবে। এবছর বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। তাই আমন ধান আবাদ হয়ে গেছে সেচ নির্ভর। স্যালোইঞ্জিন দিয়ে সেচ দিতে গিয়ে খরচ বেড়ে গেছে। টাকা বাড়ি না দেয়া পর্যন্ত স্যালোইঞ্জিন মালিকরা সেচ দিচ্ছেন না। আমাদের যা কিছু সবই তো চাষ থেকেই। তাহলে এভাবে ডিজেলের দাম বাড়লে আমাদের কি হবে ? প্রশ্ন করেন এই চাষি।
কৃষকরা জানান, এখন চলছে রবি মরসুম। আমন ধান কাটার পাশাপাশি সবজি, ডাল ও তৈল জাতীয় ফসল আবাদের উপযুক্ত সময়। জমি চাষ দিতে ট্রাক্টর, পাওয়ারট্রিলার ব্যবহার করা হয়। গরুর লাঙ্গল আর ব্যবহার করা হয় না। যন্ত্রনির্ভর চাষ কার্যক্রমে চরম ভাটা পড়েছে।
জেলার সবজি চাষখ্যাত সাহারবাটি গ্রামের সাইফুল ইসলাম বলেন, চাষ ও সেচ খরচ খুব বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই চাষ করবো কি করবো না তা নিয়ে দুশ্চিন্তায়। সবজি আবাদের সময় পেরিয়ে যাচ্ছে।
একই গ্রামের কৃষক তহসিন আলী বলেন, এক বিঘা জমি চাষের খরচ ছিলো ৮০০ টাকা। ট্রাক্টর মালিকরা সেই খরচ বাড়িয়ে করেছে দেড় হাজার টাকা। কম্পাইন্ড হারভেস্টরে এক বিঘা জমির ধান কাটা মাড়াই ছিলো দেড় হাজার টাকা এখন তা বেড়ে প্রায় তিন হাজার টাকায় ঠেকেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মেহেরপুর জেলার বেশিরভাগ মাঠে বৈদ্যুতিক সেচপাম্প দিয়ে সেচ দেয়া হয়। যে যে এলাকায় বিদ্যুতের ব্যবস্থা নেই সেখানে এখনও স্যালোইঞ্জিন দিয়ে সেচের কাজ করেন কৃষকরা। বোরো মরসুমে সবজি, সরিষা, মসুর আবাদের জন্য সেচ ও চাষের প্রয়োজন। ডিজেলের দর বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন এলাকার মাঠে এ কার্যক্রম এখনও শুরু করতে পারেননি কৃষকরা। ফসলের দর নির্দিষ্ট না থাকায় চাষিরা সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছেন।
কৃষকদের মতো দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা। মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক স্বপন কুমার খাঁ জানান, বর্তমান সরকারের যুগপোযোগী উদ্যোগের কারণে কৃষি যেমন যান্ত্রীকরণ হচ্ছে তেমনটি সুবিধা পাচ্ছেন কৃষকরা। চাষে এখন কৃষকদের অনেক লাভ হয়। ডিজেলের দর এমন থাকলে জেলার কৃষিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।