ডাক্তার নার্স করোনায় আক্রান্ত : বিপাকে গাংনী হাসপাতাল

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুরের গাংনী হাসপাতালের ডাক্তার, নার্সসহ ৬ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় আশঙ্কায় হাসপাতালে কর্মরত ও সেবা নিতে আসা রোগী ও তার স্বজনেরা পড়েছেন বিপাকে। এছাড়া গাংনী হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স আমেনা খাতুনের স্বামী আবু শামা ও মেডিকেল টেকনোলজি ল্যাব সুনিতা রানীর স্বামী অশোক চন্দ্র বিশ্বাস করোনা পজেটিভ। হাসপাতাল থেকে করোনা সংক্রমিত হয়েছেন বলে ধারনা তাদের। ইতোমধ্যে মেডিকেল টেকনোলজি ল্যাব সুনিতা রানীর করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়েছেন।

আক্রান্তরা হলেন, গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রিয়াজুল আলম, আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সাদিয়া সুলতানা, ডা. হামিদুল ইসলাম, সিনিয়র স্টাফ নার্স আমেনা খাতুন, উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার তানভীর আহমেদ ও অফিস সহকারী আসাদুজ্জামান লিটন। এর মধ্যে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রিয়াজুল আলম সুস্থ হয়েছেন।

আক্রান্ত কয়েকজন ডাক্তার জানান, করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা নেয়ার ৫ দিন পর ফলাফল পাওয়া গেছে। ওই ৫ দিন হাসপাতালের ইনডোর আউটডোরে রোগী দেখেছেন তারা। তাদের কাছ থেকে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

এদিকে গাংনী হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স আমেনা খাতুনের করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করলেও ফলাফল পেতে কয়েকদিন সময় লেগেছে। এর মধ্যে তিনি হাসপাতালের দুটি ওয়ার্ডেই কর্মরত ছিলেন। তার কাছ থেকে অন্যান্য রোগী ও তার স্বজন ছাড়াও সহকর্মীরা সংক্রমিত হতে পারে বলে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে করোনা পজেটিভ ডাক্তার নার্স ও অফিস সহকারীর সংস্পর্শে আসা হাসপাতালের অন্যান্য কর্মীদের হোম কোয়ারেন্টাই না করায় ক্ষোভ জানিয়েছেন তার স্বজনেরা।

গাংনী হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ৪ আগস্ট হাসপাতালের আরএমও ডা. সাদিয়া আক্তার, নার্স আমেনা খাতুন ও স্টোরকিপার দবির উদ্দীন আক্রান্ত শনাক্ত হন। এর আগে ২৬ জুলাই আক্রান্ত শনাক্ত হন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (এসএসিএমও) এসএম তানভির আহম্মেদ। একই সময়ে মেডিকেল অফিসার ডা. হামিদুল ইসলাম স্বস্ত্রীক ও অফিস সহকারী আসাদুল ইসলাম লিটন কোভিড-১৯ পজিটিভ হয়েছেন।

আক্রান্ত ব্যক্তিরা নিজ নিজ বাড়িতে লকডাউনে রুম আইসোলেশনে আছেন। হাসপাতালের ল্যাব টেকনিশিয়ান সুনিতি রায়ের স্বামী আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন ৪ আগস্ট। ফলে সুনিতা রায় নিজ বাড়িতে লকডাউনে রয়েছেন। তিনি গাংনী হাসপাতালের করোনাভাইরাস নমুনা সংগ্রহকারী দলের অন্যতম সদস্য। তিনি লকডাউনে থাকায় নমুনা সংগ্রহ নিয়ে একটা সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এছাড়াও এসএম তানভির আহম্মেদ আক্রান্ত ব্যক্তিদের বাড়িতে ওষুধ পৌঁছুনো ও তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের নমুনা সংগ্রহকারী দলের সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন। অপরদিকে প্রধান সহকারী আসাদুল ইসলাম লিটন ঢাকায় অপারেশন করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। বাকিরা স্থানীয়ভাবে আক্রান্ত।

স্থানীয় ও স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলার একটি বড় অংশ নিয়ে গঠিত গাংনী উপজেলা। ফলে জেলার প্রায় অর্ধেক মানুষের স্বাস্থ্যসেবার একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে সাধারণ মানুষ চিকিৎসাসেবা নিয়ে থাকেন। এ অবস্থায় হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও অফিস স্টাফ আক্রান্ত হওয়ায় স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এম রিয়াজুল আলম বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণরোধে অনেক সাফল্য রয়েছে আমাদের। এ সাফল্য ধরে রাখা এখন অসম্ভব হয়ে পড়বে। হাসপাতালে কর্মরতদের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় চিন্তিত স্বাস্থ্য বিভাগ।

 

গাংনীতে ডাক্তার সাদিয়া-মেহেদি দম্পতি লকডাউনে

গাংনী প্রতিনিধি: গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. সাদিয়া সুলতানা করোনাভাইরাস সংক্রমিত। গত মঙ্গলবার রাতে পাওয়া নমুনা পরীক্ষায় তিনি কোভিড-১৯ পজিটিভ বলে সিভিল সার্জন সূত্রে জানা গেছে। নিয়মানুযায়ী স্বপরিবারে লকডাউনে আছেন তিনি। তার স্বামী মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার মাহবুবুল হাসান মেহেদি একই বাসায় লকডাউনে রয়েছেন বলে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে।

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ এম রিয়াজুল আলম বলেন, ডা. সাদিয়া সুলতানা করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কার্যক্রমে ফ্রন্ট লাইনযোদ্ধা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। গেলো ৩০ জুলাই ডা. সাদিয়া সুলতানার নমুনা পাঠানো হয়। কোভিড-১৯ পজিটিভ হওয়ায় তাকে চৌগাছা বাসভবনে তার স্বামীসহ লকডাউনে রাখা হয়েছে। কোভিড-১৯ নেগেটিভ না হওয়া পর্যন্ত তারা লকাডাউনে থাকবেন। তবে ডাক্তার সাদিয়া সুস্থ আছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More