টানা দাবদাহের পর স্বস্তির বৃষ্টি : প্রাণিকুলে শীতল পরশ
নেমেছে তাপমাত্রার পারদ : নিয়ন্ত্রণে আসছে লোডশেডিংও
স্টাফ রিপোর্টার: টানা ১১দিন তীব্র্র তাপদাহের পর স্বস্তির বৃষ্টিতে ভিজেছে চুয়াডাঙ্গা। গতকাল শুক্রবার দুপুর ২টা ৪৫ মিনিট থেকে শুরু হয় বৃষ্টি। বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ঝরেছে। এ সময় বিভিন্ন এলাকায় মানুষকে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখা যায়। জেলায় সর্বোচ্চ ১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে ছিলো বজ্রপাতও। তবে প্রাণ-প্রকৃতির তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে জানা গেছে। বৃষ্টির পর গড় তাপমাত্রা কিছুটা কমেছে। বেলা ৩টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হলেও বৃষ্টিপাতের পর সন্ধ্যা ৬টায় জেলার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান এসব নিশ্চিত করেন। গতকাল দেশের সব বিভাগেই কমবেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে কমেছে তাপমাত্রা। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দুই দিন আগেও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রির বেশি ছিল। গতকাল ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩২.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা আগের দিন ছিল ৩৩.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিকে আজও দেশের সব বিভাগে বজ্রসহ বৃষ্টির আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। এরমধ্যে ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে বেশি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে সরকারি সংস্থাটি। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি ও রাতের তাপমাত্রা হ্রাস পেতে পারে। রাজশাহী, পাবনা ও চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মৃদু তাপপ্রবাহ প্রশমিত হতে পারে। কয়েক সপ্তাহে তীব্র তাপপ্রবাহ ও লোডশেডিংয়ের কারণে দেশব্যাপী জনদুর্ভোগ বেড়েছিল। একদিকে গরমে অস্বস্তি অন্যদিকে ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিংয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছিল বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ। এ অবস্থায় কিছুটা হলেও স্বস্তি দিয়েছে বৃষ্টি। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়ে গতকাল দিনভর রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি ঝরেছে। এতে তাপমাত্রাও কমে এসেছে। বিদ্যুতের চাহিদাও কমে গেছে। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে লোডশেডিংয়ে। এ দুইদিন বিদ্যুৎ লোডশেডিং তুলনামূলক কম হয়েছে। ন্যাশনাল লোড ডেসপাস সেন্টার বলছে, বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় দেশের কোনো কোনো এলাকা লোডশেডিংয়ের আওতার বাইরে ছিল। এর মধ্যে ঢাকার দুই বিতরণ কোম্পানি কোনো লোডশেডিং করেনি। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য এলাকায়ও বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে গতকাল পর্যন্ত অনেক এলাকায়ই বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক ছিল। পিডিবি সূত্রে জানা যায়, গতকাল দুপুর ১২টায় দেশে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১১ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে সরবরাহ করা হয় ১১ হাজার ২৪ মেগাওয়াট। লোডশেডিং হয় ২৬৪ মেগাওয়াট। যা গত কয়েক দিনের চেয়ে অনেক কম। বৃষ্টিতে ঢাকার তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছে। গত কয়েক দিন যা ছিল ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি। বৃষ্টির কারণে তাপমাত্রা অন্তত ৪ থেকে ৫ ডিগ্রি কমেছে। এতে বিদ্যুতের চাহিদা কমে গেছে। এর সঙ্গে সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপে বিদ্যুতের উৎপাদনও কিছুটা বেড়েছে। চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানায়, গত ২৯ মে থেকে আজ পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে উঠানামা করছে। টানা ১১ দিন ধরে এ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ। গত সোমবার (২৯ মে) চুয়াডাঙ্গার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মঙ্গলবার (৩০ মে) চুয়াডাঙ্গার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮ দশমিক ২ডিগ্রি সেলসিয়াস। বুধবার (৩১ মে) চুয়াডাঙ্গার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার (১ জুন) চুয়াডাঙ্গার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুক্রবার (২ জুন) চুয়াডাঙ্গার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শনিবার (৩ জুন) চুয়াডাঙ্গার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রোববার (৪ জুন) চুয়াডাঙ্গার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সোমবার (৫ জুন) চুয়াডাঙ্গার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মঙ্গলবার (৬ জুন) চুয়াডাঙ্গার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বুধবার (৭ জুন) চুয়াডাঙ্গার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার (৮ জুন) চুয়াডাঙ্গার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। শুক্রবার সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিলো ৮১ শতাংশ। বেলা ১২টায় চুয়াডাঙ্গার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিলো ৬০ শতাংশ। তাপমাত্রা বেড়ে বেলা ৩টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং এসময় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিলো ৭৩ শতাংশ। দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটে শুরু হওয়া বৃষ্টি চলে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত। এই সময়ে ১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৃষ্টিপাতের কারণে সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে। রাডারে বর্তমানে আরও মেঘ দেখা যাচ্ছে। দীর্ঘ সময় ধরে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছেও বলে জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকার কারণে প্রচুর ঘাম হচ্ছে এবং গরমের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে। মেঘ কেটে গেলে জেলার তাপমাত্রা আগামী আরও এক সপ্তাহ এমন থাকতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে এ জেলার তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি থেকে ৪০ ডিগ্রির মধ্যে উঠানামা করবে। শুক্রবার যে বৃষ্টিপাত হয়েছে তার বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সঞ্চারণশীল মেঘমালার কারণে হয়েছে। মরসুমি বায়ু বর্তমানে চট্টগ্রাম পর্যন্ত এসেছে। চুয়াডাঙ্গায় খুব দ্রুত চলে আসবে। আগামী এক সপ্তাহের ভেতরে মরসুমি বায়ু চুয়াডাঙ্গায় প্রবেশ করবে। তখন ঘন ঘন বৃষ্টিপাত হবে এবং তাপপ্রবাহ থাকবে না। মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, টানা তীব্র তাপদাহের পর অবশেষে মেহেরপুরে নামল স্বস্তির বৃষ্টি। ঠা-া বাতাসের সঙ্গে বৃষ্টি মানুষের মনে এনে দিয়েছে প্রশান্তি। গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর পরই দুপুর আড়াইটা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত জেলাজুড়ে শুরু হয় ঝুম বৃষ্টি। এ সময় অনেককেই রাস্তায় নেমে গা ভেজাতে দেখা গেছে। গত কয়েকদিন ধরেই মেহেরপুরে ছিলো সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। শুক্রবার সকালেও তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮১ শতাংশ। ১৯৫৮ সালের পর মেহেরপুরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে প্রায় ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এতে প্রচ- তাপদাহে হাঁসফাঁস অবস্থা সৃষ্টি হয় জনজীবনে। এর সঙ্গে ক্রমাগত লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।
গাংনী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দীর্ঘ এক মাসেরও বেশি সময় পর মেহেরপুরের গাংনীতে দেখা মিলেছে স্বস্তির বৃষ্টি। যদিও মাঝারি বৃষ্টি তারপরেও নিচে নামতে শুরু করেছে তাপমাত্রার পারদ। গতকাল শুক্রবার দুপুরে এ বৃষ্টিতে শীতল করে পরিবেশ। আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টায় এ অঞ্চলের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে অন্যান্য দিনের প্রচ- গরম আর তাপদাহের কিছুটা ব্যতিক্রম ছিল। সকাল থেকেই আকাশে ঘন কালো মেঘ দেখা দেয়। আর দুপুরে জুম্মার নামাজের পরপরই দেখা মেলে কাঙ্খিত সেই স্বস্তির বৃষ্টি। যা একটানা চলে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত। দীর্ঘ একমাস বৃষ্টি না থাকা এবং প্রকৃতিতে দাবদহ বাড়তে থাকায় অস্বস্তি বাড়তে থাকে। এর সাথে কয়েকদিন থেকে যুক্ত হয় অতিমাত্রার লোডশেডিং। ফলে জনজীবনে নেমে আসে নানা বিপর্যয়। এর মধ্যে স্বস্তির বৃষ্টিতে শীতল করেছে পরিবেশ। এদিকে মাঝারি বৃষ্টি গাংনী উপজেলার বেশিরভাগ এলাকায় কয়েকঘণ্টা ধরে হয়। বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে মেহেরপুর শহরসহ আশেপাশের এলাকায় বৃষ্টিপাতের দেখা মেলে। কৃষকরা জানান, চলতি মরসুমে পাট ও আউশ ধান নিয়ে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছিলেন। তীব্র রোদ আর গরমে অনেক ক্ষেতের পাট ঝলসে যাচ্ছিলো। কারণ লোডশেডিংয়ের কারণে প্রয়োজনীয় সেচ দিতে পারছিলেন না কৃষকরা। তাছাড়া বৃষ্টি না থাকায় পাট গাছগুলো আকারে অনেক ছোট হয়ে আছে। বছরের এই সময়টিতে পাট গাছ অন্তত এক মানুষ সমান থাকার কথা। তবে গতকালের স্বস্তির বৃষ্টিতে পাট ক্ষেতের সমস্যা সমাধানের আশা দেখছেন চাষিরা। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই পাট ক্ষেতের চেহারা সম্পূর্ণ পাল্টে যাবে বলে মনে করছেন তারা। পাট নিয়ে এত চিন্তার কারণ হচ্ছে; পাট কাটার উপরে নির্ভর করছে আমন ধান আবাদ। আমন ধান কাটার পর সরিষা এবং সরিষা কাটার পর বোরো ধানের আবাদ করে থাকেন অনেক চাষি। তাই সময়মতো বৃষ্টি না হলে চাষাবাদের পঞ্জিকা পাল্টে যাওয়ার আশঙ্কার কথা জানালেন কয়েজন চাষি।