টানাবৃষ্টিতে মুজিবনগর সুঁচোখোলা মাঠের উঠতি ফসল পানিতে নীচে

একশ’ কোটি টাকার উঠতি ফসলের ক্ষতি : উৎকন্ঠায় কৃষক

মহাসিন আলী/শেখ শফি: টানাবৃষ্টিতে মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার নাগাবিল সংলগ্ন সুঁচোখোলা মাঠে উঠতি ফসল পানিতে ডুবে গেছে। জেলার বৃহৎ এ মাঠ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় চলতি মরসুমে একশত কোটি টাকার ফসল ক্ষতির মুখে। দ্রুত প্রভাবশালীদের হাত থেকে খাল দখলমুক্ত ও পুনঃসংস্কার করে ভৈরব নদে পানি প্রবাহ পুনরায় সংযুক্ত করা না হলে রবি মরসুমেও ওই মাঠে কৃষক বাঁধা কপি, কাঁচা ঝাল, পেঁয়াজ, গম-ভুট্টা ও ধান চাষ করতে পারবে না। বিধায় ক্ষতির পরিমাণটা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে দাবি করেন ভূক্তভোগী কৃষকেরা।

মেহেরপুর-মুজিবনগর সড়কের পশ্চিমপাশে মুজিবনগর উপজেলার দারিয়াপুর ও বাগোয়ান ইউনিয়নের বিরাট অংশ জুড়ে ভারত সীমান্তবর্তী সুঁচোখেলা মাঠ। পাকিস্তান আমলে ওই মাঠের পানি নিষ্কাশনের জন্য একটি খাল ভৈরব নদের সাথে সংযুক্ত ছিলো। বর্তমানে প্রভাবশালীরা নাগাবিল এলাকায় পুকুর তৈরি করায় খাল দখল হয়ে গেছে। এছাড়া প্রভাবশালীরা খালের কালভার্ট ইট দিয়ে বন্ধ করে ও খাল ভরাট করে ইটভাটা ও দোকান করায় মাঠের পানি ভৈরবে নামতে পারছে না। এতে সমূহ ক্ষতির আশঙ্কা নিয়ে উৎকন্ঠায় এলাকার শ’ শ’ কৃষক।

দারিয়াপুর ইউনিয়নের গৌরিনগর গ্রামের জমি জরিপকারী (আমিন) আব্দুল মজিদ পচা জানান, বিশাল এ মাঠের দৈর্ঘ্য প্রায় ৭ কিলোমিটার ও প্রস্থ প্রায় ৫ কিলোমিটার। মাঠের মাঝের একটি অংশ নাগা বিল। ওই মাঠে এলাকার শ’ শ’ কৃষক বছরে তিনটি আবাদ করে থাকে। ওই মাঠের পানি নিষ্কাশন করতে না পারলে মাত্র একটি ফলস চৈতি ধান ছাড়া আর কোনো ফসল উৎপাদন সম্ভব হবে না। এতে কৃষকদের পথে বসা ছাড়া উপায় থাকবে না।

বাগোয়ান ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের ফিরোজ আহমেদ মাস্টার জানান, ওই মাঠে তার ৪ বিঘা জমির আমন ধান ও দেড় বিঘা জমির কচু ডুবে গেছে। তিনি দেড় বিঘা জমিতে আগাম বাঁধাকপির চাষ করেছিলেন। কিন্তু জমিতে পানি উঠায় তার বাঁধাকপি নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি বলেন, এলাকার কৃষকদের হাজার হাজার বিঘা জমির ফসল তলিয়ে গেছে। এ মরসুমের ফসলের ক্ষতি আর ফেরানো যাবে না। আগামী রবি মরসুমের ফসলও আবাদ করতে পারবে কি না সন্দেহ রয়েছে। তিনি মনে করেন এ মরসুমে বিশাল এ মাঠের একশ’ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি কৃষকদের বাধ্য হয়ে মেনে নিতে হবে।

গৌরিনগর গ্রামের বয়োবৃদ্ধ ফকরুল ইসলাম, হারুন অর রশিদ ও দারিয়াপুর গ্রামের কুতুবউদ্দিন মোল্লা বলেন, পাকিস্তান আমলে দারিয়াপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম আব্দুল জলিল সরকারি সহায়তায় সুঁচোখোলার মাঠ থেকে নাগাবিল হয়ে প্রায় ৫ কিলোমিটার চাতর খাল খনন করেন যা গৌরিনগর গ্রামের মধ্যে দিয়ে ভৈরব নদে পড়ে। সরকারি ওই খালের সাথে ভৈরবের সংযোগ ও পানি সরবরাহ থাকায় কৃষক হাসি মুখে ফসল ঘরে তুলতো।

হারুন, কবির, কালাম ও কশেমসহ মাঠে কর্মরত কয়েকজন কৃষক বলেন, খাল দখল হওয়ায় পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় শুধু কৃষকের ফসল ডুবে নষ্ট হয়নি; দখলকারীদের পুকুরও ডুবে মাছ ভেসে গেছে। এছাড়া হাজার হাজার বিঘা জমির আমন ধান, পাঠ, কচুসহ উঠতি ফসল ডুবে গেছে। অনেক কৃষক ক্ষতি কমাতে পানির নিচে থেকে ধান কেটে নৌকায় করে ডাঙায় তুলছে। পাট গাছ মারা যাচ্ছে। কাঁচা ঝাল, করল্লা, শসা, ঝিঙে, পেচেঙ্গাসহ নানা ধরণের ফসল ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে। কচুর মতো শক্ত ফসলও পানির নীচে পঁচতে শুরু করেছে। কৃষকের এ ক্ষতি যেনো দেখার কেউ নেই। অতিসত্বর পানি নিষ্কাশনের সরকারি এ খালটি দখলমুক্ত ও পুনঃখনন করা না হলে এলাকার শ’ শ’ কৃষককে পথে বসতে হবে।

দারিয়াপুর ইউপি চেয়ারম্যান তৌফিকুল বারী বকুল বলেন, বর্তমানে ওই মাঠের হাজার একরেরও বেশি জমির উঠতি ফসল পানির নীচে। কৃষকের জমির জলবদ্ধতারোধে পানি নিষ্কাশনের জন্য খালটি পুনঃখনন জরুরি। তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যে মেহেরপুর-১ (সদর ও মুজিবনগর) আসনের সংসদ সদস্য জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের সাথে এ বিষয়ে আমি কথা বলেছি। তার নির্দেশে পানি উন্নয়ন বোর্ড চুয়াডাঙ্গা, এলজিইডি মেহেরপুর ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুজিবনগর মহোদয়ের সাথে কথা বলে তাদের সাথে এলাকা পরিদর্শন করেছি। অতি সত্ত্বর পানি নিষ্কাশনের জন্য খালটি পুনরুদ্ধার ও পুনঃখনন করা হবে। এছাড়া সুঁচোখোলার মাঠের সাথে ভৈরব নদের পানি আদান প্রদানের ক্ষেত্রে প্রয়োজনে ডাবল স্লুইজ গেট করা হবে।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More