আশ্রয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন সংক্রান্ত চুয়াডাঙ্গা জেলা টাক্সফোর্স কমিটির সভা
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলাকে ভূমিহীন ও আশ্রয়হীন ঘোষণা করার প্রস্তাবনা অনুমোদন করেছে জেলা কমিটি। গতকাল বুধবার সকাল ১১টায় চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জেলা কমিটি এ অনুমোদন দিয়ে প্রস্তাবনা প্রধানমন্ত্রীর দফতরে প্রেরণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত থেকে অভিমত ব্যক্ত করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সি আলমগীর হান্নান, জেলা গণস্বাস্থ্য অধিদফতরের চুয়াডাঙ্গা নির্বাহী প্রকৌশলী, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব সভাপতি সরদার আল আমিন, সাধারণ সম্পাদক রাজীব হাসান কচি, প্রেসক্লাব কার্যকরি সদস্য সাংবাদিক শাহ আলম সনি প্রমুখ। এ সময় জেলা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শারিমন আক্তার উপস্থাপিত সভায় জীবননগর উপজেলার আশ্রয়ন প্রকল্পসহ উপজেলার ভূমিহীন এবং আশ্রয়হীনদের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন, জীবননগর পৌরসভা ও উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদসমূহসহ তৃণমূল পর্যায় থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে যাদেরকে ভূমিহীন-আশ্রয়হীন হিসেবে শনাক্ত করা হয় তাদের প্রায় সকলকেই সরকার কর্তৃক নির্দেশিত মোতাবেক নির্ধারিত পরিমাণের জমি দেয়া হয়েছে। আশ্রয়নে বাড়িও দেয়া হয়েছে। আশ্রয়ন প্রকল্পে নিরাপদ পানীয় পানির ব্যবস্থাও করা হয়েছে। তালিকাভুক্ত ভূমিহীনদের মধ্যে কয়েকজন লিখিতভাবে জানিয়েছেন, তাদের নিজেদের জমি না থাকলেও আশ্রয় রয়েছে। উপার্জনেও সক্ষম। ফলে বর্তমানে জীবননগর উপজেলা ভূমিহীন, আশ্রহীনমুক্ত। তাছাড়া ভূমিহীন আশ্রয়হীন একটি চলমান প্রক্রিয়া। ফলে প্রাকৃতিক কারণে কিম্বা অন্য কোনোভাবে কেউ ভূমিহীন আশ্রয়হীন হলে তাকেও পরবর্তীতে পুনর্বাসনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন বলেছেন, চুয়াডাঙ্গার মাটি সুফলা। প্রাকৃতিক দুর্যোগেরও তেমন উদাহরণ নেই। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একের পর এক জনকল্যাণ মুক্তি পদক্ষেপ নিয়ে দারিদ্র্য বিমোচনে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ভূমিহীনদের ভূমি দেয়া, আশ্রয়হীনদের আশ্রয় করে দেয়ার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। জীবননগর উপজেলা ভূমিহীন ঘোষণা করার মতো বাস্তবমুখি পদক্ষেপ নিয়ে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ যে কর্তব্য পালন করেছে তা ধন্যবাদ পাওয়ার দাবি রাখে। এজন্য জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষে সকলকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ। শুধু জীবননগর নয়, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলাও ভূমিহীন আশ্রয়হীন উপজেলা হিসেবে ঘোষণা দেয়ার পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। কিছু মানুষ হতদরিদ্র সেজে ভিক্ষা করে, ওদের প্রায় সকলেই বহিরাগত। এরপরও তারা জমি কিনে বাড়ি করেছে। যারা ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে পথে ঘোরে। অন্যের কাছে হাত পাতে ওদের যতোটা না অভাব তার চেয়ে বেশি স্বভাবগত।
প্রসঙ্গত: জীবননগর উপজেলা কমিটির বৈঠকে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন দেশে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না। এ ঘোষণা বাস্তবায়নে জুন ২০২০ এ উপজেলার জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ৩৬৬ জন ভূমিহীন ও গৃহহীনের তালিকা প্রস্তুত করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়। এর মধ্যে ১ম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে সরকারিভাবে তালিকার মধ্যে ৬৮টি বাসগৃহ নির্মাণের পাশাপাশি চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগার টগরের ব্যক্তিগত অর্থায়নে ২টি, জেলা পরিষদের অর্থায়নে ২টি, উপজেলা পরির্ষদের অর্থায়নে ২টি মোট ৭৪টি ভূমিহীন পরিবারকে দেয়া হয়। তৃতীয় পর্যায়ে তথা চলতি অর্থ বছরে বরাদ্দকৃত ৮৫টির মধ্যে ৫৫টি ঘরের নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যেই সম্পন্ন করা হয়েছে। ৩০টি ঘরের নির্মাণ কাজ চলছে। তালিকাভুক্ত মোট ভূমিহীন অশ্রয়হীনদের মধ্যে বাকি ১৫৩ জনকে ২ শতাংশ জমিসহ ঘর প্রদান করা হয়েছে। কিছু আছে যারা নিজস্ব ব্যবস্থা থাকায় খাস জমিতে যেতে আগ্রহী নন। ফলে এ উপজেলাকে ভূমিহীন আশ্রয়হীন ঘোষণার প্রস্তাবনা দিয়েছে উপজেলা কমিটি। গতকাল এ বিষয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনা করে জেলা কমিটিও অনুমোদন দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে।