জীবননগরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার পর ওষুধের দোকান ছাড়া সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ

জীবননগর ব্যুরো: চুয়াডাঙ্গার সীমান্ত উপজেলা জীবননগররে দিন-দিন করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভারতে অবৈধ পথে গমণ করা বাংলাদেশিরা রাতের আঁধারে সীমান্ত অতিক্রম করে চলে আসছে। এদের অধিকাংশ সীমান্ত রক্ষীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে তাদের গন্তব্যে পৌঁছে যাচ্ছে। গত এক সপ্তাহে এ উপজেলায় ৮০ জন নতুন করে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছে ২ জন। এ পরিস্থিতিতে গতকাল বৃহস্পতিবার জীবননগর উপজেলা করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির জরুরিসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন নজরুল ইসলাম সরকার। সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় কেবলমাত্র ওষুধের দোকান ছাড়া সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে মসজিদে নামাজ আদায়সহ মাস্কের ব্যবহার নিশ্চিত করতে নিয়োমিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। এ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন।
সভায় প্রধান অতিথি চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার তার দেয়া বক্তব্যে বলেন, দুই দেশের মানুষের মধ্যে যাতায়াতের কারণে আমরা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছি। বর্তমানে সীমান্ত এলাকার ঘরে-ঘরে সর্দি-জ¦র বিরাজ করার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এ জন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষার সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। তিনি বলেন, ভাইরাস প্রতিরোধের একমাত্র ওষুধ লকডাউন। আরাম করে চায়ের দোকানে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে চা খাওয়া ও আড্ডা দেয়া বন্ধ করতে হবে। মানুষ যাতে কষ্ট না পায় এ জন্য সহজভাবে লকডাউন করতে হবে। যারা অবৈধ পথে সীমান্ত অতিক্রমকালে আটক হচ্ছে তাদেরকে ৩ দিন আইসেলোসনে রেখে এর পর চিকিৎসকের পরামর্শে কোর্টে সোপর্দ করতে হবে। করোনা ভাইরাসের বিস্তার প্রতিরোধে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করতে হবে। যেভাবেই হোক না কেন সংক্রমণের হার কমাতে হবে। এ ব্যাপারে মসজিদের ইমাম ও খতিবগণ তাদের দেয়া বয়ানের মাধ্যমে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারেন। মানুষকে সচেতন ও করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ করতে না পারলে আমাদেরকে ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে চলে যেতে হবে পারে। তিনি বলেন, রাত সাড়ে ৭টার পর কেবলমাত্র ওষুধের দোকান ছাড়া সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। আজ শুক্রবার সকাল হতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত না জানানো পর্যন্ত এ আদেশ বলবৎ থাকবে। গতকাল বিকেলে এ সংক্রান্ত বিষয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে গণবিজ্ঞিপ্তি জারি তা কার্যকর করা হবে।
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা শাসন করতে আসেনি। আমরা আপনাদের পাশে থাকতে এসেছি। আমরা আপানাদের মাধ্যমে আমাদের ম্যাসেজ উপজেলার প্রতিটি মানুষের নিকট পৌঁছাতে চাই। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে আমাদের দেয়া ম্যাসেজ আপানার পৌঁছে দিলে আমরা করোনার দ্বিতীয় ঢেউ থেকে রক্ষা পাবো।
ইউএনও এসএম মুনিম লিংকনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জরুরিসভায় উপজেলা চেয়ারম্যান হাজি হাফিজুর রহমান, পৌর মেয়র রফিকুল ইসলাম, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম ঈশা, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আয়েসা সুলতানা লাকি, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সেলিমা আক্তার বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন। এছাড়াও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মোর্তুজা, সাধারণ সম্পাদক উপাধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ অমল, হাসপাতালের আরএসও ডা. এহামুদ বিন হেদায়েত, মনোহরপুর ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন খান, উথলী ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, আন্দুলবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান শেখ শফিকুল ইসলাম মোক্তার, প্রেসক্লাব সভাপতি এম আর বাবু, সাংবাদিক সালাউদ্দীন কাজল, বিজিবির মাধবখালী কোম্পানী কমান্ডার সুবেদার কামরুল ইসলাম, বেনীপুর কোম্পানী কমান্ডার সুবেদার আমজাদ হোসেন ও জীবননগর বাজার দোকান মালিক সমিতির সভাপতি নাসিরউদ্দিন বক্তব্য রাখেন।
এদিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার স্বাক্ষরিত জারীকৃত গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে জীবননগর উপজেলায় করোনা ভাইরাসের প্রার্দুভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় করোনা ভাইরাসের আক্রমন ঝুঁকি ও বিস্তার প্রতিরোধের লক্ষ্যে আজ হতে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নি¤œবর্ণিত নির্দেশনাগুলো আবশ্যিকভাবে প্রতিপালন করতে হবে। নির্দেশনাবলীর মধ্যে রয়েছে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার মধ্যে ওষুধের দোকান ব্যাতীত অন্যান্য সকল দোকান, শপিং মল, চায়ের দোকান, খাবারের দোকান/হোটেল/রেস্তরা ইত্যাদি বন্ধ থাকবে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত খাবারের দোকান ও হোটেল-রেস্তরায় কেবলমাত্র খাবার বিক্রি ও সরবরাহ করা যাবে হোটেলে বসে খাবার খাওয়া যাবে না। সকল পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউিনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে। জনসমাবেশ হয় এ ধরণের সামাজিক অনুষ্ঠানের মধ্যে বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান (ওয়ালিমা), জন্মদিন, পিকনিক, পার্টি ইত্যাদি, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে। সব ধরণের গণপরিবহনে যথাযথ স্বাস্থ্য বিধি প্রতিপালন সাপেক্ষে ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে পারবে এবং মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্য বিধি প্রতিপালন করতে হবে। এ আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে গণবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More