ছেলে হারানো রোজিনার চোখে জল : কণ্ঠে প্রতিবাদ
আবিরকে অপহরণ ও হত্যার প্রতিবাদে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন
স্টাফ রিপোর্টার: ১১ বছর বয়সী একমাত্র সন্তান আবির হোসেনকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা রোজিনা খাতুন। আবিরকে অপহরণ ও হত্যার প্রতিবাদে গতকাল বুধবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন রোজিনা। এ সময় তিনি সজল চোখে আবির হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ষোলটাকা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য মো. নূহু নবীসহ জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানান। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার মো. আসাদুল হকের স্ত্রী রোজিনা খাতুন সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এ সময় তার সঙ্গে মামা সাব্বির হাসান এবং দুই চাচা উজ্জ্বল হোসেন ও রাজীব হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
রোজিনা বলেন, আবিরের বাবা আসাদুল হক কর্মসূত্রে প্রবাসে থাকেন। স্বামী প্রবাসে চলের যাওয়ার পর চার বছরের ছেলেকে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে যান তিনি। মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ষোলটাকা ইউনিয়নের মিনাপাড়া গ্রামে তার বাবার বাড়ি। তখন থেকে সেখানেই থাকতেন তারা। আবির মিনাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণিতে পড়তো।
রোজিনার ভাষ্য অনুযায়ী, সম্প্রতি তিনি বাড়িতে একটি গরু বিক্রি করেন। এরপর থেকেই ষোলটাকা ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. নূহু নবী তার কাছে চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। কিন্তু তিনি চাঁদার টাকা দিতে অপারগতা জানান। এরপর গত ২৬ জুন বিকেলে বাড়ির পাশের মাঠে খেলার সময় দুই কিশোর আবিরকে অপহরণ করে একটি মোটরসাইকেলে ওঠায়। ওইদিন সন্ধ্যায় দুই কিশোর আবিরের বাবার কাছে মুঠোফোনে মুক্তিপণ হিসেবে এক লাখ টাকা দাবি করে।
রোজিনা অভিযোগ করেন, অপহরণের ঘটনার পরপরই আবিরের চাচা ও মামারা নূহু নবীর বাড়িতে গেলে নূহুনবীর লোকজন তাদের মারধর করেন। এরপর বিষয়টি গাংনী থানা পুলিশকে জানালে অভিযুক্ত দুই কিশোরকে আটক করে। আটকের পর আবিরকে শ্বাসরোধ করে হত্যার কথা স্বীকার করে তারা। এরপর তাদের সঙ্গে নিয়ে পুলিশ মিনাপাড়া ও মানিকদীঘি গ্রামের মধ্যবর্তী এক মাঠ থেকে আবিরের লাশ উদ্ধার করে। ওই রাতেই তিনি দুই কিশোরকে আসামি করে মামলা করেন।
মামলা করার পর থেকেই নূহু নবী ও তার অনুসারী মিরাজ বিভিন্নভাবে আবিরের পরিবারকে হুমকি প্রদর্শন করতে থাকে বলে অভিযোগ করেন রোজিনা। কান্নাজড়িত কণ্ঠে রোজিনা বলেন, ‘খুন ও বোমা মেরে বাড়ি উড়িয়ে দেয়ার হুমকিও দেয়া হচ্ছে। আমার ছেলে আবিরের হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী নূহু নবী ও তার সহযোগী মিরাজকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে পুলিশের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি এবং তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।’
ইউপি সদস্য নূহু নবী তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘যতদূর জেনেছি অনলাইন গেমের পাসওয়ার্ড নিয়ে আবিরের সঙ্গে ওই দুই কিশোরের বিরোধ ছিলো। এ কারণে খুনের ঘটনা ঘটতে পারে। বিষয়টি আমি জানার পরে নিজেই পুলিশ ডেকে দুজনকে হস্তান্তর করেছি।’
গাংনী থানার পরিদর্শক (অপরেশন) সাজেদুল ইসলাম বলেন, মামলার দুই কিশোর আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। আদালতে তারা আবিরকে হত্যা ও আবিরের বাবার কাছে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবির কথা স্বীকার করেছে। ফ্রি ফায়ার গেম খেলা নিয়ে বিরোধ থেকে তারা আবিরকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে বলে স্বীকার করেছে। তারা এখন যশোরের কিশোর সংশোধনাগার কেন্দ্রে আছে। তিনি আরও জানান, মামলার তদন্ত চলমান। তবে এখন পর্যন্ত এই হত্যাকা-ে ইউপি সদস্য নূহু নবীর কোনো সম্পৃক্ততা খুঁজে পায়নি পুলিশ।