ওষুধের দোকান ছাড়া সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে
স্টাফ রিপোর্টার: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এবার চুয়াডাঙ্গার সদর পৌরসভা ও পার্শ্ববর্তী আলুকদিয়া ইউনিয়ন এলাকায় লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে প্রশাসন। গতকাল শনিবার বিকেলে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি সভায় জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার এ ঘোষণা দেন। আজ রোববার সকাল ৬টা থেকে এ লকডাউন কার্যকর করা হবে। পরবর্তী ৭ দিন পর্যন্ত এ লকডাউন বলবৎ থাকবে। পরে রাতে জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার স্বাক্ষরিত একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেন। জরুরি সভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মনিরা পারভীন, সিভিল সার্জন ডা.এএসএম মারুফ হাসান, ৬-বিজিবি’র পরিচালক মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. আবু তারেক, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) সাজিয়া আফরীন, পৌর মেয়র জাহাঙ্গীর আলম মালিক, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আসাদুল হক বিশ্বাস, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ সাদিকুর রহমান, দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিলারা রহমান ও জীবননগর উপজেলা নির্বাহী এসএম মুনিম লিংকন, এনএসআই উপপরিচালক জামিল সিদ্দিক, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক এবিএম রবিউল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি সরদার আল আমিন, সাংবাদিক অ্যাড. রফিকুল ইসলাম, শাহ আলম সনি, ফাইজার চৌধুরীসহ করোনা কমিটির সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, জরুরি সেবা ওষুধের দোকান ছাড়া সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। কাঁচাবাজার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর দোকানপাট সকাল ৬টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত চালু থাকবে। জেলার সকল পশুহাট এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ থাকবে দুরপাল্লার গাড়ি চলবে। কোন কোচিং সেন্টার চলবে না। শপিংমল বন্ধ থাকবে। রিকশা-ভ্যান, মোটরসাইকেল, ইজিবাইক, সিএনজি, আলমসাধু, করিমন, পাখিভ্যান ও আন্তঃজেলা বাস-ট্রাক সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। লোকাল বাস শহরে চলবে না। দূরপাল্লার পরিবহনগুলো চললেও তা শহরের মধ্যে থেমে যাত্রী ওঠানো নামানো করবে না। শুধুুু পৌর বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার বাস ছাড়বে। ওখান থেকেই যাত্রী ওঠানামা করবে। তবে জরুরি পরিষেবার আওতাধীন পরিবহন এ নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে। খাবারের দোকান ও হোটেল রেস্তোরাঁয় কেবল খাদ্য বিক্রি/সরবরাহ (ঞধশবধিু ড়হষরহব) করা যাবে। কোনো অবস্থাতেই হোটেল রেস্তোরাঁয় বসে খাবার গ্রহণ করা যাবে না। কাঁচাবাজার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর দোকান সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। কাঁচাবাজারের কথা বলে কেউ ব্যাগ ছাড়া ঘুরলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সংবাদকর্মীরা মোটরসাইকেলে একজনের বেশি চলাচল করা যাবে না। পরিচয়পত্র নিশ্চিত করতে হবে। চা-দোকানিদের প্রয়োজনে নির্ধারিত পরিমাণের চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করা হবে। তবে জরুরি পরিষেবা, ওষুধ ও চিকিৎসাসেবা, কৃষিপণ্য, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য সরঞ্জাম সংগ্রহ ও পরিবহন এবং সীমিত পরিসরে ব্যাংকিং সেবার আওতাবহির্ভূত থাকবে। শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। মাস্ক ছাড়া কোনো ব্যক্তিকে বাড়ির বাইরে পাওয়া গেলে তাকে উপযুক্ত শাস্তি দেয়া হবে। লকডাউন মানাতে এলাকাগুলো তদারক করবে জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় লকডাউনের প্রভাবে কর্মহীনদের মধ্যে সরকারিভাবে খাদ্য সহায়তা দেয়া হবে বলেও জানান জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার।
সিভিল সার্জন ডা. এএসএম মারুফ হাসান বলেন, বিগত ১ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে করোনার উর্ধ্বমুখী চাপ দেখছি। সবচেয়ে বেশি ছিলো দামুড়হুদা উপজেলায়। গ্রাম পর্যায়ে সংক্রমণের হার বেশি ছিলো। ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে ২ হাজার ৫২৩ জন করোনা শনাক্ত রোগী পাওয়া গেছে। এরমধ্যে ১ হাজার ৯৩৮ জন সুস্থ হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ৭৭ জন। রেডজোনে ভর্তি আছে ৪৮ জন। ইয়েলো জোনে ভর্তি আছে ৫০/৫১ জন। সদর হাসপাতালে ১০০ রোগী ভর্তি আছে। এভাবে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে থাকলে জায়গা দিতে পারবো না। ডেল্টা ভেরিয়েন্ট সম্পর্কে আইসিডিআর থেকে জানানো হয়নি। তবে, ধারণা করছি ডেল্টা ভেরিয়েন্টের কারণে এমনটি ঘটছে। লকডাউন করতে হলে শতভাগ লকডাউন করতে হবে। কিন্তু এলাকা ভিত্তিক লকডাউন করলে কাজ হবে না। চায়না সিনোফার্মার ৪ হাজার ৮০০ ডোজ টিকা পেয়েছি। ২ হাজার ৪০০ জনকে টিকা দিতে পারবো। এদের ২য় ডোজ দেয়া হবে। চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি সরদার আল আমিন বলেন, লকডাউন পুরোপুরি প্রত্যাশা করছি। আমাদের কোনো স্বজন যেন আর মারা না যান।
পূর্ববর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ