দর্শনা/দামুড়হুদা অফিস: দর্শনার লোকনাথপুরে ট্রাক-করিমন সংঘর্ষে বাবা-ছেলের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন ট্রাকচালকসহ তিনজন। সিমেন্টবোছাই করিমনের সাথে ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে করিমনচালক ও তার ছেলের মৃত্যু হয়। এসময় সড়কের পাশে পুলিশ বক্স গুড়িয়ে নিয়ন্ত্রণহীন ট্রাক নেমে যায় খাদে। ট্রাকের গ্লাস ভেঙে উদ্ধার করা হয় আহত চালক ও সহযোগিকে। তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে দামুড়হুদা-দর্শনা সড়কের লোকনাথপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের অদূরে তালতলা নামক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় নিহত বাবা-ছেলে হলেন দামুড়হুদার হাউলি ইউনিয়নের ডুগডুগি গ্রামের মৃত আমির হোসেনের ছেলে আসানুর রহমান ও আসানুরের শিশুপুত্র আজম আলী। এদিকে, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন দামুড়হুদা উপজেলা চেয়ারম্যান আলী মুনছুর বাবু, উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিলারা রহমান ও দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আ. খালেক। গতকাল সন্ধ্যার পর জানাজা শেষে নিহত বাবা-ছেলের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। দু’পক্ষের মধ্যে আপস-মিমাংসা হওয়ায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই তাদের মরদেহ দাফন সম্পন্ন করা হয়।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দামুড়হুদা উপজেলার হাউলী ইউনিয়নের ডুগডুগি গ্রামের মৃত আমির হোসেনের ছেলে আসানুর রহমান হাউলী ইউনিয়ন পরিষদের গোডাউন থেকে করিমনে ২০ বস্তা সিমেন্ট ভর্তি করে নিয়ে দর্শনা রেলগেটস্থ সরকারি গৃহায়ণ প্রকল্প স্থলে যাচ্ছিলেন। যাওয়ার পথে একমাত্র ছেলে আজম খান (১১) ও তার সহপাঠী প্রতিবেশী জামাত আলীর ছেলে জীবন রহমান (১১) ওই করিমনে চড়ে বসে। সিমেন্টভর্তি করিমনটি দামুড়হুদা-দর্শনা মহাসড়কের লোকনাথপুর ফায়ার সার্ভিস অফিসের অদূরে তালতলা নামক স্থানে পৌঁছুলে বিপরীত দিক থেকে বেপরোয়া গতিতে ছুটে আসা ট্রাকের (ঝিনাইদহ-ট-১১-১৮৭৬) সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। ইট আনতে কুষ্টিয়ার উদ্দেশে যাওয়া ট্রাকের ধাক্কায় করিমন চালক আসানুরের দু’পা এবং ছেলে আজমের বাম পা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মারা যায় শিশু শিক্ষার্থী আজম খান। এছাড়া করিমনে থাকা আজমের সহপাঠী জীবন রহমান করিমন থেকে ছিটকে পড়ে আহত হয়। খবর পেয়ে দামুড়হুদা ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে করিমন চালক আসানুরকে রক্তাক্ত জখম অবস্থায় উদ্ধার করে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. তানভীর মোহাম্মদ আসিফ মোসতুবা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে করিমনে ধাক্কা দেয়ার পর ট্রাকটি সড়কের পাশে পুলিশ ছাউনী ভেঙে গুড়িয়ে দেয়। নিয়ন্ত্রণ না থাকায় ট্রাকটি খাদে পড়ে যায়। ট্রাক চালক ইয়াছিন আলী ও হেলপার সাইফুল ট্রাকের ভেতরে আটকে যান। গুরুতর আহত অবস্থায় ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার মাইলবাড়ি গ্রামের ইয়াছিন ও একই এলাকার ঝিষ্টিপোতা গ্রামের সাইফুলকে পুলিশ ট্রাকের সামনের গ্লাস ভেঙে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়। হেলপার সাইফুল প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
দামুড়হুদা ফায়ার সার্ভিস অফিসের স্টেশন অফিসার জাফর শেখ জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করি। ঘটনাস্থলেই মারা যায় শিশু আজম। আহত করিমনচালক আসানুরকে যখন গাড়িতে তোলা হয় তখনও তিনি জীবিত ছিলেন। হাসপাতালে নেয়ার সময় হয়তো পথিমধ্যে মারা যান করিমনচালক আসানুর। তার শরীর থেকে দুই পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ঘটনার পর দর্শনা-চুয়াডাঙ্গা সড়ক অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেছে।
দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি আব্দুল খালেক জানান, সিমেন্টভর্তি ভ্যানটি বামসাইড দিয়ে যাচ্ছিলো। হঠাৎ করেই ট্রাকটি ওই ভ্যানে সজোরে ধাক্কা মারে। এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করতে রাজি না হওয়ায় বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ নিহতের পরিবারের লোকজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। খবর পেয়ে সকাল ১০টার দিকে নিহতের বাড়িতে ছুটে যান দামুড়হুদা উপজেলা চেয়ারম্যান আলী মুনছুর বাবু ও দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিলারা রহমান। শোকাহত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন।
দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিলারা রহমান বলেন, সংবাদ পেয়ে দুর্ঘটনাস্থল, হাসপাতাল ও নিহতদের বাড়ি গিয়ে স্বজনদের সান্ত¦না দিয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানানো হয়েছে। এসময় দামুড়হুদা উপজেলা চেয়ারম্যান আলি মুনছুর বাবু নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। তার উপস্থিতিতে জেলা প্রশাসক স্যারের নির্দেশনায় নিহতের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। তিনি আরো বলেন, নিহতের পরিবার অত্যান্ত অসহায় তারা যদি ঘর নিতে ইচ্ছা প্রকাশ করে তবে তাদের সরকারিভাবে ঘরের ব্যবস্থা করে দেয়া হবে।
এদিকে পিতা-পুত্র সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার খবর গ্রামে পৌঁছুলে গোটা এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে বাতাস। মাগরিব বাদ স্থানীয় গোরস্থানে শোকাবহ পরিবেশে পিতাপুত্রের দাফন সম্পন্ন হয়। এ ঘটনায় ট্রাক মালিকের সাথে দেড় লাখ টাকায় আপস হওয়ায় কোনোপ্রকার আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি বলে জানা গেছে।