স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত এলাকার লকডাউন শিথিল করা হয়েছে। গত ২৪ জুন থেকে আলমডাঙ্গা উপজেলার হাড়োকান্দি গ্রামে লকডাউন শুরু হয়। এর আগে গত ১৭ জুন দর্শনা পৌর এলাকার একটি ওয়ার্ডের কিছু অংশ রেড জোন হিসেবে ঘোষণা দিয়ে লকডাউন করা হয়। নির্ধারিত সময় পার হওয়ার কারণে এবং করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকায় লকডাউন শিথিল করা হয়। এছাড়াও ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড জীবননগর শাখাও লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছিলো। নির্ধারিত সময় পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় সেখানকার লকডাউনও তুলে নেয়া হয়। এদিকে, এলাকা ভিত্তিক লকডাউন শুরু করেছে প্রশাসন। গতকাল মঙ্গলবার জেলা শহরের পৃথক তিনটি মহল্লা লকডাউন ঘোষণা করা হয়।
আলমডাঙ্গা উপজেলার হাড়োকান্দি গ্রামে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ৯ জনই এখন সুস্থ। নতুন করে সেখানে আরও কেউ আক্রান্ত হননি। এমন পরিস্থিতিতে ওই গ্রামের লকডাউন প্রত্যাহার করেছে প্রশাসন। বিষয়টি নিশ্চিত করে স্থানীয় ইউপি সদস্য আজিজ আহমেদ সুজন মাথাভাঙ্গাকে জানান, গত ২৩ জুন হাড়োকান্দি গ্রামটি রেড জোন ঘোষণা করা হয়। পরদিন আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার লিটন আলী গ্রামে গিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে লকডাউন ঘোষণা করেন। গ্রামে বসানো হয় অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প। লকডাউন প্রত্যাহার হওয়ায় সোমবার পুলিশ সদস্যদের সেখান থেকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। বর্তমানে গ্রামে আর কেউ করোনা আ্ক্রান্ত নেই। তিনি সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহবান জানিয়েছেন। করোনাজয়ী স্বাস্থ্যকর্মী আব্দুস সামাদ মুঠোফোনে মাথাভাঙ্গাকে বলেন, এখন তিনি সুস্থ। বড় ধরনের তেমন কোন সমস্যা নেই। খুব শিগগির তিনি আবার মানুষের সেবায় নিয়োজিত হবেন বলে আশা প্রকাশ করেন। প্রায় দুই মাস আগে গ্রামের এক ব্যক্তি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর তাকে নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে রাখা হয়। কিছুদিন পর নতুন করে আরও দু’জন আক্রান্ত হন। সর্বশেষ গত ২৩ জুন একজন স্বাস্থ্যকর্মী, একজন ব্যাংকার, একজন শিক্ষক ও দুই শিশুসহ মোট ৬ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন।
দর্শনা অফিস জানিয়েছে, মহামারি করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলা প্রশাসন কর্তৃক ঘোষিত লকডাউন ঘোষণা করা হয় দর্শনার তিনটি ওয়ার্ডের কয়েকটি মহল্লা। গত ১৯ জুন রেডজোন চিহ্নিত করে লকডাউনের আওতায় আনা হয় দর্শনা পৌরসভার ৫ ও ৭ নং ওয়ার্ডের বেশ কয়েকটি মহল্লা। ২৪ জুন লকডাউন ঘোষনা করা হয় ২ নং ওয়ার্ডের বাসস্ট্যান্ডপাড়া। যথারিতী ১৪ দিন অতিবাহিত হওয়ায় দর্শনা পৌরসভার তিনটি ওয়ার্ডের লকডাউনের আওতায় থাকা প্রতিটি মহল্লাবাসী এখন মুক্ত। তাদেরকে লকডাউনের আওতায় থাকতে হচ্ছে না। কারণ হিসেবে জানা গেছে, করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দিনদিন কমছে। দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলী মুনছুর বাবু, দর্শনা পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান ও দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জ মাহাব্বুর রহমান কাজলের যৌথ ভূমিকায় অনেকটাই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে দর্শনা শহরকে। সরকারের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বাধ্য করা হচ্ছে দর্শনাবাসীকে। যে কারণে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা অনেকাংশেই কমেছে।
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ঝিনাইদহে এলাকা ভিত্তিক লকডাউন শুরু করেছে প্রশাসন। মঙ্গলবার বেলা ৩টা থেকে জেলা শহরের আদর্শপাড়ার পৃথক ৩টি মহল্লা লকডাউন করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেন ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ জানান, প্রাথমিকভাবে আগামী ৭ দিন এসব লকডাউন থাকবে। এসময় কেউ ঘর থেকে বের হতে কিংবা প্রবেশ করতে পারবেন না। তিনি আরও জানান, লকডাউন করা এলাকার রাস্তাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পৌরসভার স্বেচ্ছাসেবক দল সর্বক্ষণ কাজ করবে। সকল মহল্লাবাসির নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবেন পুলিশ। পর্যায়ক্রমে জেলা শহরের অন্যান্য এলাকা ও কালীগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি পাড়া ও মহল্লা লকডাউন করা হবে বলেও জানান তিনি। লকডাউন ঘোষণার সময় অন্যান্যর মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঝিনাইদহ সদর পৌর সভার মেয়র ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বদরুদ্দোজা শুভসহ স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাগণ।
এদিকে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার জেলায় নতুন করে আরও ৩৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্ত হলেন ৪৮৯ জন। করোনায় মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের। মারা যাওয়াদের মধ্যে ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় ৩, শৈলকুপায় ৩ এবং কালীগঞ্জ উপজেলায় ৪ জন রয়েছেন। এছাড়াও অন্তত ১৪ জন করোনা উপসর্গে মারা গেছেন। জেলায় আক্রান্তদের মধ্যে সদর উপজেলায় ১৮৭, শৈলকুপায় ৭০, হরিণাকুন্ডু ২১, কালীগঞ্জ ১৫৮, কোটচাদপুরে ২৮ এবং মহেশপুর উপজেলায় ২৫ জন রয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৫২ জন। প্রতিদিন আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ার কারণে এলাকাভিত্তিক লকডাউন শুরু করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসন।