উত্তাল বঙ্গোপসাগর : ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা : সাগরে সর্তকতা সংকেত
স্টাফ রিপোর্টার: উত্তাল হয়ে উঠেছে বঙ্গোপসাগর। সাগরের দক্ষিণ-পূর্ব অংশ ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ আন্দামান সাগর এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে নিম্নচাপ। এর আগে এটি সুস্পষ্ট লঘুচাপ আকারে ছিলো। পর্যায়ক্রমে এটি ঘনীভূত হয়ে ওই এলাকায় গভীর নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। শেষ পর্যন্ত এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আবহাওয়া ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা। এদিকে গত বৃহস্পতিবার রাতে চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন স্থানে কালবৈশাখী ঝড়ে বয়ে গেছে। ঝড়ে পাকা আধাপাকা ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে। উপড়ে পড়েছে শতশত গাছপালা। রাতে ৩০ মিনিট স্থায়ী কালবৈশাখী ঝড়ের তা-বে পুরো জেলা ল-ভ- হয়ে পড়ে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সৃষ্টি নিম্নচাপটি শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে যে কোনো সময়ে এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে এটি ভারতের উড়িষ্যা থেকে শুরু করে পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন অংশের যে কোনো স্থানে ২০ বা ২১ মে উপকূল অতিক্রম করতে পারে। আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম জানান, এ কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে শুক্রবার আবহাওয়া বিভাগ (বিএমডি) একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। এতে বলা হয়, নিম্নচাপটি শুক্রবার দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৩৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১২৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৩৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ২৯০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিলো। এতে আরও বলা হয়, নিম্নচাপটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। নিম্নচাপের কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের কাছে সাগর উত্তাল রয়েছে।
এদিকে, চুয়াডাঙ্গায় বৃহস্পতিবার রাতে ৩০ মিনিট স্থায়ী কালবৈশাখী ঝড়ের তা-বে পুরো জেলা ল-ভ- হয়ে গেছে। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২৫ জন। জেলার বিভিন্ন স্থানে শতশত গাছ পালা ভেঙে গেছে। বাড়ি ঘর ভেঙে গৃহহীন হয়ে পড়েছেন শতশত মানুষ। অনেকে মাথা গোঁজার শেষ সম্বলটুকুও হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান নিয়েছেন। চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার রাত ১১টা ২৫ মিনিটে চুয়াডাঙ্গায় আঘাত হানে এ ঝড়। প্রথমে ভারি বৃষ্টি ও পরে প্রচ- বেগে ঝড়টি আঘাত হানে। এতে জেলা সদরসহ দামুড়হুদা, জীবননগর ও আলমডাঙ্গা উপজেলার বিস্তীর্ণ গ্রাম ক্ষতিগ্রস্থ হয়। চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক সামাদুল হক জানান, বাতাসের গতিবেগ ছিলো ঘণ্টায় ৫৫ কিলোমিটার। বৃষ্টি হয়েছে ৩১ মিলি মিটার। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে জেলার বিভিন্ন সড়কের পাশে শত বছরের অসংখ্যা গাছসহ শতশত গাছাপালা উপড়ে পড়েছে। ভেঙে পড়েছে কয়েকশ কাঁচা ও আধা পাকা বাড়ি ঘর ও টিনের ছাউনি। জেলার অনেক স্থানে বড় বড় গাছ ভেঙে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এছাড়া জেলার ৪ উপজেলাতে বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। একই সাথে চারটি উপজেলার বিস্তীর্ণ জমির ফসলেরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
আলমডাঙ্গা ব্যু বৃহস্পতিবার রাতের আকস্মিক কালবোশেখীর ছোবলে ল-ভ- হয়ে গেছে আলমডাঙ্গার শ্রীরামপুর ও ডম্বলপুর গ্রামের একাংশ। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, শ্রীরামপুর গ্রামের হাসমত আলী, ইন্নাত আলী, ফরজন আলী, চায়না খাতুন, আব্দুল হাকিম, খোকন আলীর বাড়িঘর ভেঙে ল-ভ- হয়ে গেছে। ঘরের চাল উড়ে গাছের মাথায়। গাছ ভেঙে পড়েছে। টিন উড়ে গেছে। ডম্বলপুর গ্রামের এক পাড়ায় কালবোশেখী ছোবল হেনেছে। প্রায় ২০/২৫ পরিবারের বসতঘর, রান্নাঘর ও গোয়ালঘরের টিন উড়ে গেছে। ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে অনেকের বসতঘর। ঘুমন্ত অবস্থায় ঘর উড়ে যাওয়ার সময় হাসমত আলীর মাথায়,হাসমত আলীর স্ত্রীর ও মেয়ের গায়ে ইট পড়ে আহত হয়।
মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন,চুয়াডাঙ্গার মোমিনপুর ও নাগদহে কাল বৈশাখীর ঝড়ের তা-বে কাঁচা-আধাপাকা ঘর ও ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার দিনগত রাত সাড়ে ১১ টার দিকে এ কালবৈশাখী ঝড় তান্ডব চালিয়েছে। ঝড়ে মোমিনপুর ইউনিয়ন চাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুটি গাছ ভেঙে পড়েছে। চাঁদপুর গ্রামের রশিদুল, মিলন, পান বরজ,শৈলগাড়ি গ্রামের ঈমান,আমিরুল সহ কয়েকটি বাড়ির টিনের চাল উড়ে গেছে। এছাড়া আমিরপুর,খেজুরতলা,কাথুলী,কবিখালী,নাগদহ,পাইকপাড়া,জাহাপুরসহ আশপাশের গ্রামের কালবৈশাখী ঝড়ে কৃষকের ধান,পাট,ভূট্টা,কলা বাগান,পান বরজ, আম বাগান,লিচু বাগান বাগানসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।