চুয়াডাঙ্গায় বাড়ছে করোনা সংক্রমণ : একদিনেই ১৭ জন শনাক্ত মেহেরপুরে নমুনা পরীক্ষার নতুন ৩০টি ফলাফলের সবগুলোই নেগেটিভ
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় একদিনেই নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১৭ জন। আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছেন উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার, স্বাস্থ্যকর্মী, আনসার সদস্য, এনজিওকর্মী ও কেরুজ সদস্য। কিছুদিন ধরে পাওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী করোনা রোগীর সংখ্যা কিছুটা কমতে শুরু করেছিলো কিন্তু একদিনেই নতুন করে ১৭ জন আক্রান্ত হওয়ায় সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। নতুন নমুনা প্রেরণ করা হয়েছে ৮ জনের। চুয়াডাঙ্গার চারটি উপজেলায় এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়েছে ২৫৬ জন। নতুন সুস্থ হয়েছে ২ জন। রোববার রাতে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাব থেকে চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন অফিসে ৬৪টি রিপোর্ট আসে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে করোনা ঝুঁকি থেকে নিজে ও পরিবারের সদস্যদের রক্ষা করা সম্ভব হবে বলে বরাবরের মতোই জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। অপরদিকে, মেহেরপুরে গতকালও শনাক্তের সংখ্যা শুন্য। গতকাল রোববার মেহেরপুরের ৩০টি ফলাফলই নেগেটিভ পাওয়া গেছে।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, রোববার রাতে কুষ্টিয়া পিসিআর ল্যাব থেকে চুয়াডাঙ্গার ৬৪টি রিপোর্ট আসে। এর মধ্যে ১৭ জনের শরীরে করোনা পজিটিভ হয়। আক্রান্তদের মধ্যে সদর উপজেলায় ৪ জন, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৭ জন ও দামুড়হুদা উপজেলায় ৬ জন। চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের একজন আনসার সদস্য করোনা পজিটিভ হয়েছে। পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক ২ জুলাই করোনা পজিটিভ হয়। শনিবার পাসপোর্ট অফিসের ৬ জন সদস্য সদর হাসপাতালে নমুনা দেন। ৬ জনের মধ্যে ১ জনের শরীরে করোনা পজিটিভ হয়। সহকারী পরিচালক ও আনসার সদস্য বর্তমানে পাসপোর্ট অফিসে আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। কিন্তু পাসপোর্ট অফিসের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার এতিমখানাপাড়ায় আত্মবিশ্বাস নামের এনজিওর ২ জন সদস্যসহ ৩ জন নতুন করে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর আগে ১ জুলাই এনজিওর এক নারী সদস্য করোনা আক্রান্ত হন। শনিবার আত্মবিশ্বাস এনজিওর ৬ জন সদস্য নমুনা দেন করোনা পরীক্ষার জন্য। আক্রান্ত দুইজন বর্তমানে সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে। আক্রান্ত ৬০ বছর বয়সের এক নারী সদস্য সেখানে রান্নার কাজ করতেন। রোববার বিকেলে তিনি রান্না করেছেন এনজিও অফিসে থাকা আবাসিক সদস্যদের জন্য। নমুনা দেয়ার পরও নিয়মিত অফিসের কার্যক্রম চলেছে। করোনা পজিটিভ রিপোর্ট জানার এক ঘন্টা আগে দিনের কার্যক্রম শেষ করেন। রিপোর্ট আসতে দুই-একদিন দেরি হলেও অফিস চলতো নিয়মিত। সাধারণ মানুষের উপস্থিতি ছিলো অফিসে চোখে পড়ার মত। এনজিও অফিসে আসা গ্রাহকদের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে করোনা ভাইরাস। সাধারণ মানুষের মাঝে বিরাজ করছে আতঙ্ক। সাথে স্থানীয়রা রয়েছেন চরম আতঙ্কের মধ্যে। দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা এলাকার একজন ৩৬ বছর বয়সের স্বাস্থ্য সহকারী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি ওই এলাকায় টিকাদানের কাজ করতেন। দর্শনা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ৪৮ বছর বয়সের একজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি ওই অফিসে চুক্তিভিত্তিক চাকরি করেন। দর্শনা কেরু এ্যান্ড কোং লিমিটেডে কর্মরত একজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। তার সংস্পর্শে আসায় ৪৪ বছর বয়সের স্ত্রীও করোনা পজিটিভ হয়েছেন। বর্তমানে স্বামী ও স্ত্রী হোম আইসোলেশনে রয়েছেন। দর্শনা দক্ষিণ চাঁদপুর গ্রামে করোনা আক্রান্ত হয়ে কাওসার আলী মারা যান। তার সংস্পর্শে আসা ছোট ভাইয়ের ২১ বছর বয়সের ছেলে করোনা পজিটিভ হয়েছে। এছাড়া কাওসার আলীর প্রতিবেশী ২০ বছর বয়সের এক যুবক করোনা পজিটিভ হয়েছেন। আলমডাঙ্গা উপজেলার রাধিকাগঞ্জ গ্রামের স্বামী-স্ত্রী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের দুই জনের বয়স ৬০-৭০ বছর বয়সের মধ্যে। তারা নিজ বাড়িতে রয়েছেন। আলমডাঙ্গা এরশাদপুর গ্রামের স্বামী ও স্ত্রী করোনা পজিটিভ হয়েছে। পুরুষ সদস্যটি উপজেলার ডাউকি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন। স্বামী ও স্ত্রী দুইজন হোম আইসোলেশনে রয়েছেন। উদয়পুর গ্রামের ৬০ বছর বয়সের অবসরপ্রাপ্ত একজন স্কুলশিক্ষক করোনা পজিটিভ হয়েছেন। তিনি ৯ দিন আগে ঢাকায় ছেলের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তারপর বাড়ি ফিরে এসে বেশী অসুস্থ হলে করোনা পরীক্ষা করান। করোনা রিপোর্ট তার পজিটিভ আসে। তিনি নিজ বাড়িতে রয়েছেন। উপজেলার আসাননগর গ্রামের ২৩ বছর বয়সের এক যুবক করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। ওই যুবকের পিতা কয়েক দিন আগে করোনা পজিটিভ হয়েছিলেন। পিতার সংস্পর্শ থেকে তিনি করোনা আক্রান্ত হয়েছে। উপজেলার শেখপাড়ার ২৩ বছর বয়সের আর এক যুবকের শরীরে করোনা পজিটিভ হয়েছে।
নতুন করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে ২ জন সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে। বাকিরা হোম আইসোলেশনে রয়েছে। করোনা আক্রান্ত ১৪৭ জন রোগী সুস্থ হয়েছেন। রোববার নতুন ২ জন সুস্থ হয়েছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য বর্তমানে ২ জন ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৩ জন পুরুষ।
এদিকে, চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার এতিমখানা পাড়ায় আত্মবিশ্বাস নামের এনজিওর ২ জন সদস্য নমুনা দেয়ার পরও তারা এই ৩/৪ দিন রীতিমতো অফিস ও মানুষের সাথে উঠাবসা করেছেন বলে এলাকাবাসীরা জানিয়েছেন। একই এলাকার বাসিন্দা সাংবাদিক সমিতির চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক বিপুল আশরাফ বলেন, এই এলাকার মানুষের মধ্যে করোনা আতঙ্ক বিরাজ করছে। আত্মবিশ্বাসসহ আশেপাশে বেশ কয়েকটি এনজিও অফিস রয়েছে। সেগুলো দ্রুতই লকডাউনের আওতায় নিয়ে আসা উচিত। তা না হলে সংক্রমণ আরো ছড়িয়ে পড়তে পারে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শামীম কবির বলেন, আত্মবিশ্বাসের দুইজন সদস্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন রাতেই। পৌর এলাকায় নতুন করে করোনা রোগী বাড়ছে। বেশ কিছুদিন কম ছিলো। আক্রান্ত রোগীরা যাদের সাথে চলাফেরা করেছে তাদের শনাক্ত করে দ্রুত সময়ে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। তা না হলে করোনা রোধ করা কঠিন হয়ে পড়বে। প্রত্যেকের উচিত প্রয়োজনীয় কাজ সেরে বাড়িতে ফিরে যাওয়া। অযথা ভিড় না করা উচিত। আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিকুর রহমান বলেন, আত্মবিশ্বাস এনজিও পৌর এলাকার এতিমখানাপাড়া শাখায় নতুন করে ৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন। চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, পাসপোর্ট অফিসের বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে পরামর্শ করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রয়োজনে অনলাইনে কার্যক্রম চালানো যেতে পারে।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, মেহেরপুরে নতুন কোনো করোনা রোগী শনাক্ত হয়নি। গতকাল রোববার রাতে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে আরো ৩০টি রিপোর্ট এসেছে। এ রিপোর্টের সবগুলোই নেগেটিভ। রোববার রাতে মেহেরপুর সিভিল সার্জন অফিসে এ রিপোর্ট আসে। মেহেরপুর সিভিল সার্জন ডা. নাসির উদ্দিন জানান, করোনা ভাইরাস সন্দেহে সোয়াব পরীক্ষার জন্য যে নমুনা পাঠানো হয়েছিলো তার মধ্যে আরো ৩০ জনের রিপোর্ট এসেছে যার সবগুলো নেগেটিভ। এ সকল রিপোর্ট কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল দেয়া হয়। এ নিয়ে মেহেরপুর জেলায় ১ হাজার ৯শ ৪৮ জনের মধ্যে ৯২ টি পজেটিভ এবং ৩৪ জন সুস্থ হয়েছে। মৃত্যুবরণ করেছে ৫ জন।
পূর্ববর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ