চুয়াডাঙ্গায় ফুটপাতের মানহীন ও অস্বাস্থ্যকর খাবারের রকমারি বাহার
সরকারের বিভিন্ন সংস্থার দায়িত্ব থাকলেও মাঠপর্যায়ে তেমন তদারকি
শেখ রাকিব: চুয়াডাঙ্গার আশেপাশের বিভিন্ন সড়কের ফুটপাত ও বিভিন্ন স্কুল, কলেজের সামনে জমে উঠেছে মানহীন অস্বাস্থ্যকর খাদ্যের রকমারি বাহার। পথের ধারে খোলা অবস্থায় দাঁড়িয়ে বিক্রিত হচ্ছে ১-৩ দিন আগে তৈরীকৃত ফুসকা, ভাজা পুরি, চিকেন ফ্রাই, টিক্কা, কাবাব, বার্গার, স্যান্ডউইচ, সামুচা, সিংগারা, আলুর চপ, পুরি, পিয়াজু, নুডুলস, ঝালমুড়িসহ হরেক রকমের খাবার। যা তৈরি করা হচ্ছে ভেজাল তেল ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে। এসকল খাবারগুলোতে যেমন কোন মান নেই, তেমনি মানুষের খাবারের জন্য অনুপোযোগী। ফুটপাতের এই অস্বাস্থ্যকর খাদ্য সাধারন পথচারী থেকে শুরু করে স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীরা খাওয়ার ফলে দিন দিন নানান ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। প্রাথমিক অবস্থায় পেট ব্যাথা ও মাথা ব্যাথা দেখা দিলেও পরবর্তীতে ধাপে ধাপে তা ভয়ংকর অসুখের দিকে নিয়ে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটায়। শহরের পথে ঘাটে, স্কুল, কলেজ গুলোতে পথের সামনে দাঁড়িয়ে হকারদের বিক্রিত খাবার গুলো অস্বাস্থ্যকর, নোংরা পরিবেশ, মানহীন অবস্থায় রাখায় ব্যাক্টেরিয়া যুক্ত খাবারের সৃষ্টি হয়। দিনের পর দিন প্রকাশ্যে এমন অনিরাপদ খাবার বেচাকেনা হলেও সরকারের বিভিন্ন সংস্থার দায়িত্ব থাকলেও তাদের মাঠপর্যায়ে তেমন কোনো তদারকি কার্যক্রম নেই। কোনো কর্তৃপক্ষের কাছেই রাস্তার খাবার বিক্রেতাদের কোনো তালিকা নেই। খাবারের মান তদারকির দায়িত্বে থাকা নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কার্যক্রমও রাস্তার খাবারের ক্ষেত্রে একেবারেই সীমিত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফুটপাতের খাবার তৈরি ও বিক্রির জন্য কোনো নীতিমালা নেই। ফলে হকারেরা অবৈধভাবে ফুটপাতে বা বিভিন্ন পথে-ঘাটে মানহীন ও অস্বাস্থ্যকর খাবার বিক্রি করেই যাচ্ছে। যেখানে খাবারগুলো ঢেকে রাখার জন্যও কোন সচেতনতাবোধ হকারদের মধ্যে দেখা যায় না। বহুদিন যাবত এ ধরনের খাবারের ফলে শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে অপুষ্টি, পেট ব্যথা, মাথা ব্যথা, ডায়রিয়া, আমাশয়, বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ কৃমি হওয়া, যকৃতের সমস্যা, ক্ষুদামন্দা, জন্ডিস ও হেপাটাইটিস-এ রোগ দেখা দিতে পারে। বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, ফুটপাতের এসকল খাবারগুলোই যদি মানসম্পন্ন ও স্বাস্থ্যকরভাবে পরিবেশনে হকারেরা হাতে গ্লাস ও মাথায় মফ ক্যাপ ব্যবহার করে এবং খাবার তৈরি ও বিক্রিতে নির্ভেজাল প্রক্রিয়ায় পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অবলম্বন করে, এতে সাধারণ মানুষ অনেকটাই বিভিন্ন রোগ আক্রামন থেকে ঝুকিঁমুক্ত থাকবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের কলেজসহ বিদ্যালয়ের মূল ফটকের বাইরে রিকশা-ভ্যানে ভ্রাম্যমাণ অবস্থায় ফুচকা ও চটপটি বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।
এদিকে অভিভাবক মাসুদ রানা বলেন, আমার দুটো ছোট সন্তান রয়েছে। তারা পেটে ব্যথা ও গ্যাসের সমস্যা ও অসুস্থ হয়ে পড়ে। বেশিরভাগ সময় তাদেরকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া লাগে। ফাস্টফুড ও বেকারি খাবার, চানাচুর, নিমকি, ঝাল-মুড়ি ও ফুচকাসহ মুখরচক সুস্বাদু খাবার আচার চকলেট ইত্যাদি এ সকল খাবার খেয়ে বেশিরভাগ সময়েই শিশু অসুস্থ হয়ে পড়ে। প্রশাসন যদি একটু ঠিকমতো তদরকি করে তাহলে এর প্রতিকার পাওয়া যাবে।
শিশু বিশেজ্ঞ ডা. মাহবুবুর রহমান মিলন বলেন, আমার কাছে প্রায়ই এমন রোগী আসছে। ছোট ছোট শিশুরা তার অভিভাবকরা নিয়ে আসে। তাদের পেটে প্রচন্ড আকারে ব্যথা হয় ও গ্যাসের সম্ভাবনা বেশিই থাকে। শিশুরা বাইরের খাবারগুলো খায়। ফুটপাতের খোলা খাবার বিভিন্ন ধরনের ফাস্টফুড খেয়ে তারা অসুস্থ হয়ে পড়ে।
চুয়াডাঙ্গা ভিক্টোরিয়া জুবিলি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জেসমিন আরা খাতুন বলেন, আমরা চেষ্টা করছি স্কুলের সামনে থেকে যে সকল হকারী পণ্য বিক্রি করছে আমরা অনেক চেষ্টা করছি এদেরকে সরাতে। কিন্তু যথাযথভাবে তা সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে স্কুলের ছোট ছোট সোনামণিরা সেইগুলোই বেশি খাচ্ছে। এতে তারা ওইসব খাবার খেয়ে প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়ছে। প্রশাসনের ও খাদ্য অধিদপ্তরে যারা দায়িত্বে আছেন তারা একু সুদৃষ্টি দিয়ে যথাযথভাবে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। কেন না আমাদের শিশুরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ।
সিভিল সার্জন ডা. হাদী জিয়া উদ্দীন আহমেদ বলেন, ফুট সেফটি একটা গ্লোবাল ইস্যু সারা পৃথিবীতে প্রায় ৬০০ বিলিয়ন মানুষ ফুট ক্যান্টিনেশনে আক্রান্ত হয়। যার মধ্যে ৪২ লক্ষ মানুষ মারা যায়। আমাদের দেশে গতবছরের প্রায় ২.২ মিলিয়ন ফুট কন্ট্রি মিশনে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১ দশমিক ৯ মিলিয়ন শিশু শিশু খাদ্য এখন খুবই ফুট সেফটি হিসেবে দেখা হয়। আমাদের বাচ্চারা বিশেষ করে চিপস রঙিন তরল জাতীয় দ্রব্য বিক্রি হচ্ছে। বিএসটিএ অনুমোদন সেগুলোতে কি পরিমাণ ফুড কালার ব্যবহার হচ্ছে, সেগুলোর মানদ- আছে কিনা এগুলো বিবেচনার বিষয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এগুলো এক্সপায়ারি ডেট ও কিভাবে তৈরি হচ্ছে না হচ্ছে। আমরা দেখতে পারছি না। সুতরাং শিশুদের এ সকল খাবার থেকে দূরে রাখতে হবে। গতবছরের প্রায় ১৯ লাখ শিশু ফুড কনফারমিশনে আক্রান্ত হয়ে। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে এমনকি মৃত্যুবরণ করেছে। আমরা চাই এ ধরনের খাবার বাজারে বিক্রি হচ্ছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিয়মিত তদোরাকি ও মনিটরিং বিচার বিবেচনায় আনা। স্কুল-কলেজে বিশেষ করে প্রাইমারি স্কুলের সামনে টিচারদের মাধ্যমে অভিভাবদের মাঝে সচেতন বেড়ানো দরকার।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, বিশেষ করে বিভিন্ন স্কুলের সামনে যেসকল খাবারগুলো থাকে ভ্রাম্যমাণ রাস্তার পাশে ধুলাবালু পড়ে। অনেক সময় ঢাকা থাকে না, অবশ্যই স্বাস্থ্যর জন্য ক্ষতিকর। আমরা সবসময় জেলা শিক্ষা অফিসার ও প্রাথমিক অফিসার অফিসারকে বলে থাকি এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য। আমরা অভিভাবক বিভিন্ন সময় পরামর্শ দিয়ে থাকি। এ সকল খাবার যেন শিশুরা না খায়। এছাড়াও বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের আমরা বলে থাকি। স্কুলের ছাত্ররা যেন এ সকল খাবার না খায়। এগুলো খাদ্য বিষাক্ত। অসুস্থ পরিবেশে থাকে। আমরা পরামর্শ দিয়ে থাকি সবসময় বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। সকলকে সতর্ক করা হয় সব সময় বিভিন্ন দৃষ্টি নন্দন প্যাকেটে যে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর যে খাবারগুলো ভোক্ত অধিকার ও ভেজাল বিরোধী অভিযান বিভিন্ন জরিমানা করে থাকে ও নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তর এগুলো সবসময় তদরাকী করছে। এতে দিনে দিনে অনেকটাই কমে গিয়েছে। তিনি আরও জানান, হাটে বাজারে যে সকল দৃষ্টিনন্দী খাবার থাকে সেগুলো অভিভাবকরা কিনে নিয়ে যায় বাসার জন্য। সেসব খাবার খেয়ে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। আসলে এটা অভিভাবকদের দেখা উচিত। এ সকল খাবার খেলে আমাদের স্বাস্থ্য জনের ক্ষতি হবে কিনা এবং আমাদের শিশুদের জন্য ক্ষতি হবে কি-না।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.