চুয়াডাঙ্গায় নার্সিং ইনস্টিটিউটের চার ছাত্র ৯ ঘণ্টা তালাবদ্ধ
তদন্ত কমিটি গঠন করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নেয়া হবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা নার্সিং ইনস্টিটিউটের চার ছাত্রকে একটি ভবনে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। বুধবার এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে দীর্ঘ ৯ ঘণ্টা পর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম ভূঁইয়া তাদের উদ্ধার করেন। ওই চার ছাত্র হলেন প্রথম বর্ষের আজিজুর রহমান ও শওকত হোসেন এবং দ্বিতীয় বর্ষের তৌফিকুল ইসলাম ও সাকিব হাসান। তাদের অভিযোগ, ইনস্টিটিউটের প্রধান সহকারী রফিকুল ইসলামের নির্দেশে দপ্তরি আনসার আলী ও প্রহরী মোহাম্মদ রফিক ভবনটিতে তালা ঝুলিয়ে দেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল চত্বরে অবস্থিত নার্সিং ইনস্টিটিউটে প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে শুধু ছাত্রীদের ভর্তির সুযোগ ছিলো। দুই বছর ধরে সেখানে ছাত্রদের নার্স হিসেবে ভর্তি হওয়ার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। সেখানে ছাত্রীদের জন্য আবাসন সুবিধা থাকলেও ছাত্রদের সে সুবিধা নেই। ছাত্ররা ভাড়া বাসায় থেকে পড়াশোনা করতেন। কিন্তু করোনাকালে বাসামালিকেরা করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে পড়ার ভয়ে তাদের বাসা ছেড়ে দিতে বলেন। এর পর থেকে সদর হাসপাতালের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ও সিভিল সার্জনের মৌখিক নির্দেশে ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তাদের অব্যবহৃত চারতলা ভবনের একটি কক্ষে তাদের থাকার অনুমতি দেয়া হয়। সেই থেকে সাত ছাত্র ভবনটিতে থাকেন।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, নার্সিং ইনস্টিটিউটের প্রধান সহকারী রফিকুল ইসলাম বেশ কিছুদিন ধরে ছাত্রদের ভবন ছাড়ার জন্য চাপ দিয়ে আসছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল বুধবার সকাল ১০টায় দপ্তরি আনসার আলী ও প্রহরী মোহাম্মদ রফিককে তিনি ভবনের প্রধান ফটকের কলাপসিবল গেটে তালা ঝুলিয়ে দিতে বলেন। এতে ওই চার ছাত্র ভবনে আটকা পড়েন।
খবর পেয়ে সদর উপজেলার ইউএনও ও পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম ভূঁইয়া, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাজহারুল ইসলাম ও চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কামরুজ্জামান চাঁদ ঘটনাস্থলে আসেন। এ সময় কামরুজ্জামান চাঁদ ওই ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয়ার বিষয়ে মোবাইলে রফিকুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নার্সিং ইনস্টিটিউটের ইনচার্জ আলোমতি বেগমের নির্দেশে তালা ঝোলানো হয়েছে। পরে ইউএনও আলোমতি বেগমের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তালা দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন।
এ সময় আলোমতি মোবাইলফোনে ইউএনওকে বলেন, ‘আমি আজ (বুধবার) ছুটিতে আছি। আমার অনুপস্থিতির সুযোগে রফিকুল তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। তালার চাবি প্রহরী মোহাম্মদ রফিকের কাছে আছে।’
এরপর ইউএনওর নির্দেশে সন্ধ্যা ৭টার দিকে প্রহরী মোহাম্মদ রফিক ভবনের তালা খুলে দেন। এরপর ওই চার ছাত্র ভবন থেকে বের হয়ে আসেন।
ইউএনও বলেন, ‘যে বা যার নির্দেশে ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে, আর যারা জড়িত তাদের কেউই কাজটি ভালো করেননি। যেহেতু ভবনটিতে কেউ থাকেন না, বিকল্প আবাসনের ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত ওই ছাত্রদের সেখানে থাকার সুযোগ রাখা প্রয়োজন।’ তিনি আরও বলেন, তিনি ঘটনায় জড়িত রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সদর হাসপাতালের ব্যবস্থাপককে বলবেন।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আতাউর রহমান বলেন, ঘটনা তদন্তে (আজ) বৃহস্পতিবার আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ফাতেহ আকরামকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হবে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।