চুয়াডাঙ্গায় জমে উঠেছে ঈদের বেচাকেনা : বিপনী বিতানগুলোই বাহারি পোশাকে পসরা
ঈদ বাজারে ভারত আউট : দেশি ও পাকিস্তানি পণ্যের দাপট
শেখ রাকিব/আনোয়ার হোসেন: দেশে ৫০ সহস্রাধিক ফ্যাশন হাউজ গড়ে উঠেছে। তারা নতুন নতুন ডিজাইনের বাহারি পোশাক বাজারে এনেছে। দেশি পোশাকের পাশাপাশি পাকিস্তানি বোরকা, থ্রিপিস, পাঞ্জাবির কদর বেড়েছে, চলছে না ভারতীয় পোষাক। একসময় ঈদ মানেই ছিলো ভারতীয় পোশাকের রমরমা ব্যবসা। রমজান মাসের শুরুতেই মার্কেটগুলোতে ভারত থেকে আসা নানান বাহারি পোশাক বেচাকেনা হতো। ভারতের বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচারিত সিরিয়াল-নাটকের নামে তৈরি পোশাক কেনার জন্য ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়তেন। কিন্তু এবার ঈদের চিত্র আকেবারে ভিন্ন। ঈদে ভারতের পোশাক কিনে না দেয়ায় আত্মহত্যা এমনকি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ছাড়াছাড়ির ঘটনা পর্যন্ত ঘটেছে। এখন আর সেই পরিস্থিতি নেই। গত কয়েক দশকে বাংলাদেশে গড়ে উঠেছে অনেক ফ্যাশন হাউজ। দেশের ফ্যাশন হাউজের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। এবার ফ্যাশন হাউজগুলো ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নতুন নতুন পোশাক বাজারে নিয়ে এসেছে। ক্রেতাদের মধ্যে সে সব কাপড়ের চাহিদা ব্যাপক।
চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন মার্কেটের বিক্রেতারা বলছেন, কয়েক বছর আগেও ঈদের বাজারে ভারতীয় পোশাকের আধিপত্য ছিলো। এখন দেশি ফ্যাশন হাউজগুলোর তৈরি বাহারি পোশাক বেশি বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন, এবারের ঈদে পাকিস্তানি জামা, বোরকা, থ্রিপিস, পাঞ্জাবি বিক্রি হলেও ভারতীয় কাপড়ের বিক্রি অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে। ক্রেতাদের মধ্যে ‘ভারতীয় পণ্য বর্জন’ আন্দোলন হয়তো প্রভাব ফেলেছে। ফ্যাশন উদ্যোক্তারা বলছেন, মানুষ এখন দেশীয় ফ্যাশন হাউজগুলোতে তৈরি বিভিন্ন ডিজাইনের পণ্য বেশি কিনছেন। চুয়াডাঙ্গার মার্কেটগুলো ঘুরে দেখা গেছে, দোকান-শোরুমে ভারতীয় কাপড় খুবই কম। বিক্রেতা জানান, এবার শোরুমে ভারতীয় কাপড়ের সংখ্যা খুবই কম; দেশীয় কাপড় বেশি। পাশাপাশি এসেছে পাকিস্তানী পণ্য। ভারতীয় কাপড় বিক্রি কমে যাওয়ায় ভারতীয় পণ্য তোলা হচ্ছে কম। এবার নতুন নতুন ডিজাইন ও বাহারি দেশীয় কাপড়ের পাশাপাশি ভারতীয় ও পাকিস্তানি থ্রি-পিস এনেছেন তারা। ভারতীয় ও পাকিস্তানি থ্রি-পিসের মধ্যে হিরামন ডি, আলিয়াকার্ট, বিন হামিন, তাওয়াক্কাল, নোরা, ইন্দু ওয়ের্স্টান, নায়রা, গারারা ও সারারা অন্যতম। নতুন কাপড়ে ঈদ উৎযাপন মুসলমানদের রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। ছোট বাচ্চা, তরুণ, যুবক-যুবতী এবং নারীদের জন্য রমজানের মাঝামাঝি থেকেই শুরু হয় ঈদের পোশাক কেনাকাটা। কেউ কেউ মার্কেটে এসে নতুন কালেশন দেখে দেখে বাজেটের হিসাব-নিকাশ করেন। ব্যস্ততা আর ভিড়ে জমজমাট হতে থাকে মার্কেটগুলো। তবে এবার তুলনামূলক কমেছে বিদেশি ব্রান্ডের পোশাকের আমদানি, ক্রেতাদের চাহিদার তালিকায় নেই ভারতীয় ব্রান্ডের ও ডিজাইনের জামা, থ্রিপিস, পাঞ্জাবি ও পোশাকে। কাঞ্চিপুরম সিল্ক শাড়ি ভারতের তামিলনাড়ুর কাঞ্চিপুরম অঞ্চলে তৈরি এক ধরনের রেশম শাড়ি। একরঙা কিংবা চওড়া কনট্রাস্ট পার দেয়া এই শাড়ি মহিলাদের পছন্দের শীর্ষের তালিকায় ছিলো। এবার বিক্রিই হচ্ছে না বলে জানান বিক্রেতারা।
তবে এবার পণ্যের দামে হতাশ ক্রেতারা। তারা বলছেন, যেই জামা গত বছর দেড় হাজার টাকা ছিলো- এবার তা বিক্রি হচ্ছে দ্বিগুণ দামে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান কাপড়ের দোকানেও চালানো দরকার। না হয়, ঊর্ধ্বমুখীর এই নাভিশ্বাসের বাজারে অতিরিক্ত মূল্যের কারণে নষ্ট হয়ে যাবে সাধারণ মানুষের ঈদ আয়োজন। পাশাপাশি বর্তমানে যেই হারে চুরি-ছিনতাই বেড়েছে, ঈদ বাজারকে হয়ত টার্গেটে রেখেছে তারা। তাই মার্কেটগুলোর পাশাপাশি এর আশপাশের অন্ধকার সড়কেও নিরাপত্তা জোরদার করা দরকার।
আর মাত্র ক’দিন পরই পবিত্র ঈদুল ফিতর। এরই মধ্যে জমে উঠেছে চুয়াডাঙ্গার বিপনী বিতানগুলো। পছন্দের পোশাকটি বেছে নিতে ব্যস্ত সময় পার করছে ছেলে মেয়ে বুড়োসহ সবাই। তারা দোকান থেকে দোকানে পছন্দের পোষাক কেনাকাটা করতে ঘুরছেন। দাম দরে মিললে নিজের জন্য কিংবা প্রিয়জনের জন্য পছন্দের পোষাকটি কিনছেন। মুসলমান ধর্মের সব থেকে বড় উৎসব ঈদুল ফিতর, আর এই উৎসবে নিত্য নতুন বাহারি রকমের জামা কাপড় কিন্তু এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন সকল পেশার মানুষ। চুয়াডাঙ্গার রাস্তাগুলোতে মানুষের যানজটই মনে করিয়ে দিচ্ছে ঈদের কথা। ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে, সবাই এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কেনাকাটার মাধ্যমে। বিভিন্ন লাইটের মাধ্যমে মার্কেটগুলো কেউ দেয়া হয়েছিলো নতুন রূপ। বরাবরের মত এবারও গলি মার্কেটে ক্রেতাদের ভিড় চোখে পড়ে। ভিড়ের কারণ জানতে চাইলে ক্রেতা সুফিয়া খাতুন বলেন, অন্যান্য মার্কেট থেকে গলি মার্কেটে সব জিনিসেরই দাম তুলনামূলক কম, যার কারণে এই মার্কেটে আসা। ক্রেতা তানিয়া আক্তার বলেন, নিউমার্কেটের সব জিনিসেরই কোয়ালিটি ভালো যার কারণে দামটাও অনেক বেশি, আমার বাজেট কম তাই এই মার্কেটে এসেছি ছেলে মেয়ের কেনাকাটা করবো। এছাড়াও স্যান্ডেল ও জুতার দোকানগুলোতে নতুন নতুন বাহারি কালেকশনের জুতা ও স্যান্ডেল রয়েছে বলে জানান দোকান মালিকরা। বস্ত্র বিতান গার্মেন্টস দোকানের পাশাপাশি কসমেটিক দোকানগুলোতেও পড়েছে কেনাকাটার ভিড়। চুয়াডাঙ্গার নিউমার্কেট, আব্দুল্লাহ সিটি, প্রিন্স প্লাজা, ও গলি মার্কেট ঘুরে দেখাগেছে, মার্কেটগুলোতে বিক্রয় হচ্ছে পাঞ্জাবি, ফতুয়া, থ্রি পিস, গাউন, সালোয়ার কামিজ, শাড়ী, লুঙ্গি, শার্ট, টি-শার্ট, জিন্স প্যান্ট, গেবাডিং প্যান্ট ও বাচ্চাদের বিভিন্ন ধরনের পোশাক। এ বছরের নতুন আকর্ষণীয় ড্রেস পাকিস্তানি গাউন, যা বিক্রি হচ্ছে দেড় হাজার টাকা থেকে ৮ হাজার টাকা, থ্রি পিস ৮শ টাকা থেকে ৬ হাজার টাকা, জামদানি শাড়ি ৮শ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা, সিলকি শাড়ি ৭শ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা, পাঞ্জাবি ৫শ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি মো. খালেদুর রহমান বলেন, সাধারণ মানুষ যাতে স্বাচ্ছন্দে কেনাকাটা করে বাড়ি ফিরতে পারেন সে জন্য দু সপ্তাহ আগে থেকেই মার্কেটগুলোতে পুলিশের পক্ষ থেকে কার্যকারী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ট্রাফিক পুলিশ রাস্তার যানজট সরাতে কাজ করছেন।
এদিকে কিছু হতদরিদ্র মানুষ, চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন প্রভাবশালীর বাড়ির আঙ্গিনায় বসে করুন দৃষ্টিতে প্রহর গুনছেন, যাকাত, ফিতরা, ও সাহায্য পাওয়ার আশায়।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.