চুয়াডাঙ্গায় গাছিদের খেজুর রস আহরণ শুরু
ক’দিন পরেই জমে উঠবে সরোজগঞ্জ-জয়রামপুর গুড়ের হাট
মিরাজুল ইসলাম মিরাজ: চুয়াডাঙ্গায় খেজুর গাছ ঝোড়া ও চোছা ছোলার পর শুরু হয়েছে রস সংগ্রহ। দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গাছিদের দেখা যাচ্ছে গাছ থকে রস আহরণ, মাঠে মাঠে গাছ চোছা ছোলা করে ভাড় (মাটির কলশী) টানাতে এবং ভোর রাতে গাছ থেকে সেসব ভাড় নামিয়ে রস সংগ্রহ করতে। গত বছরের তুলনায় চলতি বছর জেলার ৪ উপজেলায় ১৬ হাজার নতুন খেজুর গাছ থেকে চাষিরা রস সংগ্রহ করছে বলে জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানাগছে। তবে রস সংগ্রহ শুরু হলেও এখনো গাছ পুরোপুরি তৈরী না হওয়ায় চাহিদা মতো রস পাচ্ছে না চাষিরা। গত মরসুমে চুয়াডাঙ্গা জেলায় আড়াই লাখ খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেছিলো চাষিরা। চলতি মরসুমে জেলার চার উপজেলায় মোট ২ লাখ ৬৬ হাজার খেজুর গাছ থেকে চাষিরা রস সংগ্রহ শুরু করেছে। চুয়াডাঙ্গা জেলার খেজুর গাছ চাষিরা জানান, আর ১০দিন পর থেকে চাহিদা মতো রস পাবেন তারা। গাছগুলো চাহিদা মতো রস দেয়া শুরু করলেই জমে ওঠবে দেশের সর্ববৃহত চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জর ও ঐতিহ্যবাহী জয়রামপুর খেজুর গুড়ের হাট। বিগত বছরের মতো দেখা মিলবে বিভিন্ন জেলার গুড়ের ব্যাপারিদের। শত শত বছরের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে জেলার এই হাট দুটি। জেলার সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের সরোজগঞ্জ চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে সরোজগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ও দামুড়হুদা উপজেলার জয়রামপুর স্টেশন সংলগ্ন বসে গুড়ের হাট। প্রতি সপ্তাহে দুই দিন হাট দুটি বসে থাকে। গত মরসুমে এ হাট দুটিতে সপ্তাহে ৩ কোটি টাকার গুড়-পাটালি বেচা-কেনা হয়ে হয়েছিলো। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের ধারণা এবার গুড় পাটালির দাম বেশি হবে সে তুলনায় আরও বেশি টাকার বেচা-কেনা হবে গুড়-পাটালি। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেলগাছি গ্রামের মোতালেব বিশ্বাসের ছেলে আলাউদ্দীন বিশ্বাস জানান, এবার তিনি ২০০ গাছ কেটেছেন। এসব গাছ থেকে রস সংগ্রহের জন্য মাসিক ২০ হাজার টাকা বেতন দিয়ে একই গ্রামের বাচ্চু মন্ডলের ছেলে সাইফুল গাছিকে কাজে রেখেছেন। চলতি মরসুমে তিনি চার লাখ টাকার গুড়-পাটালি বিক্রি করবেন বলে জানিয়েছেন। সমস্ত খরচ বাদ দিয়ে সে প্রায় ২লাখ টাকা আয় করবেন বলে আশা করছেন। দামুড়হুদা উপজেলার দেউলী গ্রামের গাছি আব্দুর রশিদ মোল্লা জানান, তিনি এবার ১৫০টি গাছ কেটেছেন। এবার বাজারে সব কিছুর দাম বেশি হওয়ায় গুড়ের দামটাও বিগত বছরগুলোর তুলনায় অনেকটা বেশি হওয়ায় চলতি মরসুমে একটু বেশি লাভবান হবার আশা করছেন। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সরোজগঞ্জ বাজার কমিটির সভাপতি আব্দুল্লা শেখ জানান, এ হাট থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয় গুড়। গত মরসুমে বছরে প্রতি হাটের দিন গড় ২৫০ টন খেজুরগুড় বিক্রি হয়েছে। তিনি দাবি করেন, সরোজগঞ্জ হাট বিক্রি হওয়া বেশির ভাগ গুড়ই এলাকার কৃষকরা বাড়িতে যত্ন সহকারে তৈরি করা হয়। এতে চিনি বা কোনো রাসায়নিক কিছু নেই। এসব গুড় পুরোটাই খাঁটি। দামুড়হুদার জয়রামপুর খেজুর গুড়ের হাটের ইজারাদার যুবলীগ নেতা আয়ুব আলী স্বপন বলেন, জয়রামপুর গুড়ের হাট চুয়াডাঙ্গা জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী গুড়ের হাট। সপ্তাহে দুই দিন এই হাটটি শনি-মঙ্গলবারে বসে। দেশের বিভিন্ন জেলার গুড়ের ফড়ে-ব্যাপারীরা এসে খাঁটি খেজুরের গুড় কিনে নিয়ে যায়। চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, চলতি মরসুমে জেলায় ২ লাখ ৬৬ হাজার খেজুরগাছ থেকে কৃষকরা রস আহরণ শুরু করেছে। যার প্রায় অর্ধেকই সদর উপজেলায়। চলতি বছরের নভেম্বর মাস থেকে আগামী বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত থাকবে গুড়র মরসুম। এই মরসুমে গড় আড়াই হাজার মেট্রিক টন গুড় উৎপাদিত হবে। চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা জানান, মরসুমে প্রতিটি খেজুর গাছ থেকে ১০কেজি গুড় পাওয়া যায়। সে হিসেবে চলতি মরসুমে ২ হাজার ৫শ’ মেট্রিক টন গুড় উৎপাদিত হবে। এ জেলার খেজুর গুড়ের রয়েছে দেশাব্যাপী সুনাম।