চুয়াডাঙ্গায় খেজুর গাছ চাছাছোলায় ব্যস্ত সময় পার করছে গাছি: চলতি মরসুমে আড়াই হাজার মেট্রিকটন গুড় উৎপাদনের আশা

মিরাজুল ইসলাম মিরাজ: দরজায় কড়া নাড়ছে শীত। দিনে গরম সন্ধ্যা হলেই শীতের আগমনী বার্তা কুয়াশার সাথে শীত অনুভূত হচ্ছে। সকালের শিশির ভেজা ঘাস জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। অনেকেই রাতে ফ্যানের হাওয়া (বাতাস) খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। আর যারা ফ্যানের হাওয়া খাচ্ছে তারা কাথা বা পাতলা কম্বল ব্যবহার করছে। আর এ সবই জানান দিচ্ছে শীত আগমনের বার্তা। এরই মধ্যে চুয়াডাঙ্গা জেলার গাছিরা আগাম খেজুর গাছ তুলতে শুরু করেছে। শীত আসতে না আসতে চুয়াডাঙ্গা জেলার গাছিরা আগাম খেজুর গাছ পরিচর্চায় ব্যস্ত সময় পার করছে। কে কতো আগে খেজুর রস সংগ্রহ করতে পারে, সেই প্রতিযোগিতায় চলছে চুয়াডাঙ্গার গাছিদের মাঝে। খেজুর গাছ থেকে বিশেষভাবে রস সংগ্রহ করতে পারদর্শিদেরকে স্থানীয়ভাবে গাছি বলা হয়ে থাকে। শীতের মরসুম শুরু হতে না হতেই আগাম রস পাবার আশায় অধিকাংশ এলাকার গাছিরা গাছের পরিচর্যা ও গাছ প্রস্তুত করতে শুরু করেছে। গাছিরা হাতে দা নিয়ে ও কোমরে ডোঙ্গা বেঁধে নিপুন হাতে গাছ চাছাছোলা করছে। শীতের মরসুম মানেই খেজুর গুড়ের মৌ মৌ গন্ধে ভরে ওঠে পুরো পাড়া মহল্লা। আর শীতের সকালে ঠান্ডা খেজুর রসের তৃপ্তি-ই আলাদা। এছাড়া খেজুর রসের ক্ষির পায়েসের মজার কথা না-ই বা বলা হলো। শীত মরসুমে প্রতিদিন গ্রামের কোনো না কোনো বাড়িতে খেজুর রস, গুড়ের খবারের আয়োজন চলে। খেজুরের শুধু রসই নয়, পাটালি, নলেন গুড় ছাড়া জমেই ওঠেনা। ধারালো দা দিয়ে খেজুর গাছের সোনালী অংশ বের করা হয়, যাকে বলে চাঁচ দেয়া, তার সপ্তাহ খানেক পর বাঁশের তৈরি নোলন স্থাপনের মাধ্যমে শুরু হবে সুস্বাদু খেজুর রস আহরণের কাজ। চুয়াডাঙ্গা জেলার প্রতিটি মাঠের ক্ষেতের আইলে, রাস্তার পাশে, পুকুর পাড়ে-অযন্ত্রে-অবহেলায় বেড়ে ওঠা খেজুরের গাছ জেলার অর্থনীতিতে আশীর্বাদস্বরুপ। শীত মরসুমে রস-গুড় উৎপাদন করে প্রায় ৫ থেকে ৬ মাস স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে জেলার কয়েক হাজার পরিবার। খেজুরের রস, গুড় ও পাটালি উৎপাদনে প্রসিদ্ধ জেলা চুয়াডাঙ্গা। এ জেলায় যে রস, গুড় ও পাটালি তৈরি হয়, তা নিয়ে শীত মরসুমে রীতিমত কাড়াকাড়ি শুরু হয়। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি হয় এ জেলার গুড়-পাটালি। দেশের বাইরেও এর বেশ কদর রয়েছে। শীত মরসুমে খেজুরের রস দিয়ে গ্রামীণ জনপদে শুরু হয় শীতের আমেজ। শীত যতো বাড়বে খেজুরের রসের স্বাদ ততো বাড়বে। সুস্বাদু পিঠা ও পায়েস তৈরিতে আবহমান কাল থেকে গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে খেজুরের গুড় ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এখানকার কারিগরদের দানা গুড়, পাটালি গুড় তৈরিতে ব্যাপক সুনাম থাকায় খেজুরের গুড় পাটালির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে দেশ সহ বিশ্বজুড়ে। দামুড়হুদা উপজেলার বাঘাডাঙ্গা গ্রামের (গাছি) শাহাদত হোসেন জানান, চলতি মরসুমে দুইশটি গাছ থেকে খেজুরের রস আহরণ করবেন। খেজুর গাছের রস, গুড়-পাটালি বিক্রয় করে খরচ বাদে প্রায় দেড় ১লাখ টাকা লাভের আশা করছি। দামুড়হুদার লোকনাথপুর গ্রামের (গাছি) তারিকুল ইসলাম বলেন, চলতি মরসুমে প্রায় দেড়শটি গাছ প্রস্তুত করেছি। বাজার মূল্য ভালো হলে খরচাবাদে লাখ টাকার গুড় বিক্রি করার আশা করছি। সে আরও বলেন, এবার এলাকায় ঢাকার ব্যাপারী এসেছে, তারা চুয়াডাঙ্গা সহ আশেপাশের জেলায় চুক্তিমূল্যে খেজুর গাছ ক্রয় করেছে। তারা এসব গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি করবে। আর সে সব গুড় নাকি বিদেশে রপ্তানি করবে। চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, চলিত মরসুমে জেলার ৪টি উপজেলায় ২ লাখ ৬৬ হাজারের মতো খেজুরগাছ থেকে কৃষকরা রস আহরণ (সংগ্রহ) করছে। যার প্রায় অর্ধেকই সদর উপজেলায়। নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত চলে গুড়ের মরসুম। এই মরসুমে গড়ে আড়াই হাজার মেট্রিক টন গুড় উৎপাদিত হবে। চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, জেলা জুড়ে খেজুরের রস আহরণের জন্য গাছিরা আগাম খেজুর গাছ গুলো প্রস্তুত করছে। সঠিক পদ্ধতিতে, স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে যেন রস-গুড় উৎপাদন করে গাছিরা-এ জন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সবধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তিনি আরু জানান, ভোক্তারা যাতে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে প্রস্তুতকৃত খেজুরের রস-গুড় পেতে পারে এজন্য কাজ করে করে থাকে চুয়াডাঙ্গা কৃষি বিভাগ। মরসুমে প্রতিটি গাছ থেকে গড়ে ১০ কেজি গুড় পাওয়া যায়। সে হিসাবে চলতি মরসুমে ২ লাখ ৬৬ হাজারের মতো খেজুরগাছ থেকে গড়ে আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার মেট্রিক টন গুড় উৎপাদিত হবে। এছাড়া গাছিরা খেজুর রস-গুড়ের বিভিন্ন ধরনের পিঠা ও মিষ্টান্ন তৈরি করে নিকটস্থ’ বাজারে বিক্রয় করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে থাকে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More