স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের পাঁচটি প্রবেশমুখের একটি সড়কপথ দীর্ঘদিন ধরে বাসস্ট্যান্ড করে পরিবহন ব্যবসা করায় সড়কে তীব্র যানজট তৈরী করেছে। যে কারণে দুর্ভোগে পড়ছে সড়ক ব্যবহারকারী জনগণ। আবার নতুন মাথাভাঙ্গা ব্রিজ নির্মাণে দীর্ঘসূত্রতা এবং বৃষ্টির কারণে বালি ও মাটি রাস্তায় চলে আসায় সড়কে চলাচলে দারুণ ভোগান্তিতে নতুনমাত্রা যোগ করেছে। পথচারীদের এ দুর্ভোগ কমাতে প্রশাসনসহ কোনো পক্ষই এগিয়ে না আসায় চরম অসন্তোষ তৈরী হয়েছে পথচারীদের মধ্যে। ভুক্তভোগীদের দাবি অবিলম্বে বড়বাজার মাথাভাঙ্গা নদীর ওপর মাথাভাঙ্গা ব্রিজের চুয়াডাঙ্গার হাসান চত্বরের অংশ থেকে বাস চলাচল বন্ধের দাবি করেছে ভুক্তভোগী ও বিশিষ্টজনেরা।
চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের প্রধান প্রবেশমুখগুলো হলো, মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা, গাংনী-চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া-চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা এবং কালিগঞ্জ-চুয়াডাঙ্গা সড়ক। এর মধ্যে মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গার প্রবেশমুখ মাথাভাঙ্গা ব্রিজের মুখে অবৈধ বাসস্ট্যান্ড করে বাস চলাচল করায় জনগণের দুর্ভোগের শেষ নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার বড়বাজার শহীদ হাসান চত্বরের বিপরীতে মাথাভাঙ্গা নদীর ব্রিজ দিয়ে মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ চট্রগ্রাম এবং দূরপাল্লার কয়েকশত বাস-ট্রাক ও অন্যান্য পরিবহন চলাচল করে থাকে। পাকিস্তান আমলে ও স্বাধীন বাংলাদেশের পর থেকে শহরতলীর দৌলতদিয়াড় হতে বাস মেহেরপুর জেলা ও কুষ্টিয়া জেলায় চলাচল করে থাকে। পরবর্তীতে আলমডাঙ্গার হাটবোয়ালিয়া হয়ে গাংনী উপজেলায় চলাচল করে থাকে। দৌলতদিয়াড় বাসস্ট্যান্ড থেকে এসব বাস চলাচল করে থাকলেও কয়েকবছর যাবত মাথাভাঙ্গা ব্রিজ পার হয়ে চুয়াডাঙ্গার শহীদ হাসান চত্বরের সামনে থেকে বাসগুলো চলাচলের কারণে শহরের প্রবেশমুখে সবসময়ই যানজটের সৃষ্টি হয়। দীর্ঘদিন ধরে পুরাতন মাথাভাঙ্গা ব্রিজ সংস্কার করে যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং নতুন ব্রিজ তৈরীর কাজ চলছে। দীর্ঘদিন ধরে ব্রিজ নির্মাণ করায় সড়কে পথচারীদের চলাচলে বাঁধার সম্মুখিন হতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গার সিনিয়র আইনজীবী এসএম সাইদুজ্জামান গণি টোটন বলেন, শহীদ হাসান চত্বর মানুষের প্রাণকেন্দ্র। বাসস্ট্যান্ড এখানে কোনোদিনই ছিলো না। দৌলদিয়াড়ে ছিলো। অবৈধ বাসস্ট্যান্ড চলে গেলে মানুষের চলাচল স্বাভাবিক হবে এবং ভোগান্তি দূর হবে। বাসস্ট্যান্ড অগ্রহণযোগ্য। এর ফলে যানজটমুক্ত হবে। বিশিষ্ট ব্যবসায়ী গোলাম আজম বলেন, মাথাভাঙ্গা ব্রিজের শহরমুখ থেকে বাসস্ট্যান্ডটি অবিলম্বে সরিয়ে নেয়া প্রয়োজন। তা না হলে যে কোনো সময় বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এজন্য জেলা ও পুলিশ প্রশাসন এবং পৌর মেয়রের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গা জেলা বাস-মিনিবাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল কালাম জানান, চুয়াডাঙ্গা বাস মালিক সমিতির ৬০টি বাস প্রতিদিন ৪ বার করে চলাচল করে এবং মেহেরপুর বাস মালিক সমিতির ১০টি বাস প্রতিদিন ৪ বার করে চলাচল করে ওই রুটে। এছাড়া, চুয়াডাঙ্গা বাস মালিক সমিতির আরো ৬০টি বাস রাজধানী ঢাকা, চট্রগ্রাম ও বরিশালসহ দূরপাল্লায় চলাচল করে থাকে। মাথাভাঙ্গা ব্রিজের চুয়াডাঙ্গা অংশে চলাচলের বিষয়ে তিনি বলেন, ইজিবাইকের অত্যাচারের কারণে এভাবে বাস চলাচল করতে হচ্ছে। প্রতিমাসে একবার করে প্রশাসনকে জানিয়েও কোনো ফল পাওয়া যায়নি। ব্যবসায়ীক স্বার্থে এমনটি ঘটছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গা সদর ট্রাফিক পুলিশ অফিসের ট্রাফিক পরিদর্শক (প্রশাসন) মো. ফকরুল আলম বলেন, বাস স্টপেজ চুয়াডাঙ্গার শহীদ হাসান চত্বর থেকে দৌলতদিয়াড়ে যাক এটি আমরাও চাই। কিন্তু বাস মালিক সমিতি সড়ক পরিবহন কমিটির (আরটিসি) সভার সিদ্ধান্ত আছে বলে দাবি করেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গা বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক মো. আতিয়ার রহমান বলেন, বাস মালিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা শহীদ হাসান চত্বর থেকে দৌলতদিয়াড়ে বাসস্ট্যান্ড হতে যাতে বাস ছাড়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হবে।
পৌর মেয়র জাহাঙ্গীর আলম মালিক খোকন নিজেও স্বীকার করেন যে, ব্রিজের মুখে বাসস্ট্যান্ড হওয়ায় জনদুর্ভোগ হচ্ছে। তিনি বলেন,‘ আমি নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। কিভাবে এখানে বাসস্ট্যা- পরিচালিত হচ্ছে, তা জেনে সরিয়ে নিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’