চুয়াডাঙ্গার দুটি বিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়ার প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণকালে জেলা প্রশাসক

অভিভাবকরা অনেক আশা-ভরসা নিয়ে শিক্ষকদের কাছে সন্তানদের পাঠায়

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার ভিক্টোরিয়া জুবিলি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও ঝিনুক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বুধবার পৃথক সময়ে বিদ্যালয় দুটির প্রাঙ্গণে এ আয়োজন করা হয়। আয়োজিত দুটি অনুষ্ঠানেই প্রধান অতিথি ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম। ভিক্টোরিয়া জুবিলি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘এই প্রতিষ্ঠানের আলাদা একটা সুনাম রয়েছে। আমি ইতোমধ্যে সেটা উপলব্ধি করেছি।’ জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ‘ক্লাসে শিক্ষর্থীদের উপস্থিতি কম থাকে। অনেক সময় কোচিংমুখি হয়ে শিক্ষকদের কাছে অবরুদ্ধ এ ধরনের নানা কথা কানে আসে। অভিভাবকরা অনেক আশা-ভরসা নিয়ে আপনাদের কাছে তাদের সন্তানদের পাঠায়। আমার বিশ্বাস, আপনারা যতœবান হলে ভবিষ্যতে অনেকগুণ ফেরত পাবেন। ছাত্রদের প্রতি এমন হবেন, যেন তার চোখের সামনে সারা জীবন ভাসবেন। আইডল হয়ে থাকবেন। দেখবেন সকল কর্ম ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে।’
অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ করে জেলা প্রশাসক বলেন, সন্তানদের খেয়াল রাখবেন। তারা কি করে সেটা আপনাদের জানতে হবে। কোচিং বাণিজ্য, শিক্ষকরা পড়ায় না, শিক্ষকদের মধ্যে পার্শিয়ালিটি, এমন অভিযোগ ছিলো, থাকবে। দোষারোপ করে জীবন শেষ করা যাবে না। কাজে আসবে না। জীবনকে অনেকভাবে কাটিয়ে দেয়া যায়। ভালো হতে হবে, ভালো কাজ করতে হবে। ভালা বাচ্চাদের শেখাতে হবে।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পুলিশ সুপার গোলাম মওলা বিপিএম সেবা বলেন, ‘তোমাদের বয়সটাই কৌতুহল থাকবে, অজানাকে জানার আগ্রহ থাকবে। তবে মনে রাখবা জানার আগ্রহটা যেন কাজে লাগে। এমন কোনো কাজ করবে না, যেটা তোমার পরিবার, শিক্ষক বারণ করবে। তাদের উপদেশ মেনে চলবা, চর্চা করবে, হৃদয়ে ধারণ করবে। অবসর সময় যেন সুষ্ঠু বিনোদনের মধ্যে কাটে। কৌতুহল যেন মাদকের দিকে না যায়। মাদক কিশোরগ্যাং তোমাদের জীবনকে ধ্বংস করে দেবে। শিক্ষকের কথা শুনবে, মান্য করবে। আবেগ যেন যুক্তি দিয়ে হয়। চাওয়া যেন বাবা-মায়ের অর্থনৈতিক সঙ্গতির সাথে সামঞ্জ্যপূর্ণ হয়। বাবা-মায়ের কাজে সহযোগিতা করবে। অন্তত গাছ-গাছালির সাথে কিছুটা সময় কাটাবে। দেখবে জিবনে সফলতা আসবে।’
অনুষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চুয়াডাঙ্গা জেলা কমিটির সদস্য সচিব সাফফাতুল ইসলাম তার এক প্রাক্তন শিক্ষকের হাতে লাঠির আঘাতে পুনরায় স্কুল জীবনের স্মৃতি রোমান্থন করেন। তিনি বলেন, ‘স্কুলে পড়ার সময় এভাবেই স্যার প্রতিদিন শাসন করতেন। স্যারের হাতের মারও আজকে প্রচুর মিস করি।’ দৃশ্যটি উপস্থিত সকলের হৃদয় কাড়ে। তবে ভিক্টোরিয়া জুবিলি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে নানা অসঙ্গতি গণমাধ্যমকর্মীদের বিব্রত করে বলে জানা গেছে।
চুয়াডাঙ্গা ভিক্টোরিয়া জুবিলি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রধান শিক্ষক জেসমিন আরা খাতুন। প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা বিপিএম সেবা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নয়ন কুমার রাজবংশী, ভারপ্রাপ্ত জেলা শিক্ষা অফিসার দিল আরা চৌধুরী, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বিপুল আশরাফ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চুয়াডাঙ্গা জেলা কমিটির আহ্বায়ক আসলাম অর্ক, সদস্য সচিব সাফফাতুল ইসলাম প্রমুখ।
অপরদিকে, চুয়াডাঙ্গা ঝিনুক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে সকাল থেকেই এ উপলক্ষে করা হয় নানা আয়োজন। বিদ্যালয় প্রাঙ্গণকেও সাজানো হয় দৃষ্টিনন্দনভাবে। সকাল সাড়ে ১০টায় বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শ্বেতকপোত উড়িয়ে বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম খান ও পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা বিপিএম সেবা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতীয় সঙ্গীতের সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, ছাত্রীদের দারুণ সালামী ও শ্বেতকপোত অবমুক্ত করার দৃশ্য নজর কাড়ে সকলের। এরপর দিনব্যাপী শুরু হয় নানা প্রতিযোগিতা। চুয়াডাঙ্গা ঝিনুক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক শামসুন্নাহার শীলা খানের পরিচালনায় মজার মজার বিভিন্ন খেলা চলে দিনব্যাপী। বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং অতিথিদের খেলাও ছিলো চমৎকার। খেলা শেষে বেলা ৩টায় পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়। পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রেবেকা সুলতানার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিজানুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নয়ন কুমার রাজবংশী, ভারপ্রাপ্ত জেলা শিক্ষা অফিসার দিল আরা চৌধুরী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চুয়াডাঙ্গা জেলা কমিটির আহ্বায়ক আসলাম অর্ক, সদস্য সচিব সাফফাতুল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর সিদ্দিকুর রহমান, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. কামরুজ্জামান প্রমুখ। এ সময় চুয়াডাঙ্গা কালেক্টরেটের কর্মকর্তা, উপজেলা ও জেলা শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তা, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান, চুয়াডাঙ্গা ঝিনুক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক-শিক্ষিকাসহ অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম খান বলেন, বিদ্যালয়টি আমার সবথেকে নিকটবর্তী প্রতিবেশী। আমি আমার বাসভবন থেকেই শুনছিলাম এই বিদ্যালয়ের তোড়জোড়। সারাদিন নানা আয়োজনে অসংখ্য খেলায় আনন্দে মেতেছিলো ছাত্রীরা। এখানে এসে আমি নিজেও অনেক আনন্দ পেয়েছি। প্রতিষ্ঠানটি রুচিশীল দারুণ এবং মজার মজার আয়োজন করেছে। আমি এই প্রতিষ্ঠানের সফলতা কামনা করি।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More