চিত্রানদীর উজান পানিতে ৮টি গ্রামের মাঠের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি
বেগমপুর প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গা তিতুদহের বোয়ালিয়া খাল ব্রিজটি তিতুদহ ও গড়াইটুপি ইউনিয়নের আটটি গ্রামের মানুষের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্রিজের নিচে সুøইচ গেট না থাকায় চিত্রানীদর উজান পানিতে ওইসব গ্রামের প্রায় ৭ হাজার একর জমির ধান, সবজিসহ অন্যন্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। ভুক্তভোগী কৃষকদের দাবি, চুয়াডাঙ্গা পানি উন্নয়ন বোর্ড হয় ব্রিজটির মুখ বন্ধ করে দিক। না হয় ব্রিজে একটি সুøইচ গেটের ব্যবস্থা করে দিক। চাষকাজে পানির প্রয়োজনীতা অপরিহার্য। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রত্যাশিত পানি সর্বক্ষেত্রেই ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ফলে বর্ষা মরসুমে প্রয়োজনের তুলনায় চিত্রানদীর উজান পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের কপালে চিন্তার ভাজ পড়েছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ ও গড়াইটুপি ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে অবস্থিত হিজলগাড়ী-সরজগঞ্জ সড়ক। এ সড়কের গোলাপনগর গ্রামের শেষপ্রান্ত এবং গড়াইটুপি ইউনিয়ন শুরুর মুখে রয়েছে চিত্রা নদীর পার্শ্ব বোয়ালখালি খাল। খালের উৎসমুখে রয়েছে ছোট একটি ব্রিজ। চিত্রা নদীর উৎস এবং প্রতিমুখ খনন না থাকায় চিত্রা নদীর পানি ওই ব্রিজের নিচ দিয়ে উজানে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে ইউনিয়ন দুটির গোলপনগর, গোষ্টবিহার, গড়াইটুপি, বিত্তেদাড়ি, তিতুদহ, গহেরপুর, বাটিকাডাঙ্গা, গবরগাড়া, ছিলন্দিপাড়া গ্রাম মাঠের জমিতে পানি উঠে গেছে। এতে করে এসব মাঠের প্রায় ৭ হাজার একর জমির ধান, সবজিসহ অন্যন্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক সোবারেক, মান্না, জলিরল, দুখি, কদর, ঝন্টুসহ অনেকেই জানালেন, মাঠে তারা ধান চাষ করেছিলো। ঘরে ওঠার আগেই সে ধান পানির নিচে ডুবেগেছে। শুধু কি ধান বিভিন্ন প্রকার সবজির চাষ ছিলো তাও নষ্ট হয়ে গেছে। চিত্রার উজান পানি বোয়ালিয়া খাল ব্রিজের নিচ দিয়ে এসে মাঠকে মাঠ তলিয়ে গেছে। বর্ষা মরসুমে ফসলের জন্য বৃষ্টির পানিই যথেষ্ট ছিলো। চিত্রানদীর অপ্রত্যাশিত উজান ¯্রােতের পানিতে ফসলের এ ক্ষতি হয়েছে। কর্তৃপক্ষ হয় ব্রিজটি বন্ধ করে দিক, না হয় ব্রিজের নিচে একটি সøুইচ গেট করে দিক। যখন পানির প্রয়োজন তখন নদীতে পানি থাকে না। আর যখন উপরের বৃষ্টি হয় তখন চিত্রা নদীর অতিরিক্ত পানি উজানে ঢুকে ফসলের ক্ষতি করে। চুয়াডাঙ্গা পানি উন্নয় বোর্ড সূত্রে জানাগেছে, জেলাতে দর্শনা মাথাভাঙ্গা নদীর গোপালখালী ব্রিজের উৎসমুখ থেকে গড়াইটুপি ইউনিয়নের শেষ সীমানা পর্যন্ত ৩৩ কিলোমিটার চিত্রানদী অবস্থিত। এরই মধ্যে চুয়াডাঙ্গা পানি উন্নয়ন বোর্ড অপরিকল্পিতভাবে ২৩ কি.মি. খনন করেছে। আর উৎসমুখের কিছু পরে ৩ কি.মি. এবং শেষের ৭ কি. মি. এখনও খনন করতে পারেনি। ফলে চিত্রা খননে কৃষি জমি নষ্ট হওয়া ছাড়া কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বিশেষ করে গড়াইটুপি ইউনিয়নের কালুপোল, খাড়াগোদা এলাকায় চিত্রা খনন না করায় বর্ষার পানি বের হতে পারছে না। জমে থাকা পানি ফুলে ফেপে বোয়ালিয়া ব্রিজের নিচ দিয়ে উজানে প্রবাহিত হয়ে ওইসব ফসলের মাঠ প্লাবিত হয়ে গেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ রয়েছে, চুয়াডাঙ্গা পানি উন্নয় বোর্ড কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবে আজ অবদি ব্রিজটির নিচে একটি সøুইচ গেট করার উদ্যোগ নেয়নি। চলতি মরসুমে কৃষকের ধান ও সবজি চাষের জন্য পানির প্রয়োজন না হওয়া সত্বেও এই ব্রিজের নিচ দিয়ে চিত্রার উজান পানি ঢুকে ফসলি জমি ডুবিয়ে দিয়েছে। ফলে কেড়ে নিচ্ছে কৃষকের মুখের হাসি। জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য নির্মিত ব্রিজটি এখন এলাকাবাসীর গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে। এদিকে চিত্রানদীসহ এই খালে বছরের অধিকাংশ সময় পনি থাকে না। অথচ বর্ষা মরসুমে মাঠ-ঘাট থেকে বেয়ে আসা পানিতে চিত্রানদী ভরে যায়। আর সেই পানি উজানে প্রবাহিত হয়। তিতুদহ ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি শুকুর আলী মিয়া বলেন, অবশ্যই ব্রিজের নিচে একটি সøুইচ গেট প্রয়োজন। চিত্রানদীর পানি তার নিজেস্ব পথে বের হতে না। ফলে বর্ষা মরসুমে পানি উজানে চাপসৃষ্টি করে। যে পানি ওই ব্রিজের নিচ দিয়ে প্রবেশ করে ফসের মাঠ তলিয়ে দেয়।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ সাদিকুর রহমান বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি। আমাদের আওতায় যদি কিছু করার থাকে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। গড়াইটুপি ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান রাজু বলেন, আমার ইউনিয়নের মধ্যে ৭ কি. মি. চিত্রানদী খনন এখনও বাকি আছে। যার কারণে নদীর পানি স্বাভাবিক গতিতে প্রবাহিত হতে পারছে না। ফলে বর্ষা মরসুমে নদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সেই পানি উজানে চাপ সৃষ্টি করছে। আমি চেয়ারম্যান হবার আগে বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন ফোরামে অনেকবার তুলে ধরেছি। আশানুরূপ ফলাফল পায়নি। আমি চাই পানি উন্নয়ন বোর্ড চিত্রানদী খনন করে এর বৈচিত্রতা ফিরিয়ে আনুক। তাহলে নদী যেমন ফিরে পাবে তার স্বাভাবিকতা সেই সাথে দেশীয় মাছের ঘাটতি পুরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে চিত্রানদী। চুয়াডাঙ্গা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ আহমেদ বলেন, নদী খনন করতে গেলে অনেক প্রতিবন্ধীকতার সম্মুখীন হতে হয়। যার কারণে উৎমুখ এবং পতিমুুখ খনন করা সম্ভব হয়নি। চিত্রানদী পুনঃখননসহ এর সাথে শাখা খালগুলো খনন করার জন্য প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এসব প্রকল্পে কালভাট ব্রিজের ডিজাইন দেয়া আছে। নদী এবং খাল খননের পাশাপাশি পনি প্রবাহে যাতে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হয়। বিষয়টি আমারর জানা ছিলো না, খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় কি দেখা হবে। একটি সূত্র জানিয়েছে ২০০০ সালের বন্যায় যখন চারিদিক প্লাবিত হতে থাকে তখন এলাকাবাসী ব্রিজটি বন্ধ করে দেয়। যাদের মাছ ধরার নেশা আছে তারা আবার ব্রিজের মুখ আস্তে আস্তে খুলে দেয়। ২০১৫ সালে ব্রিজের নিচে সুøইচ গেট করার জন্য চুয়াডাঙ্গা এলজিইডিতে আবেদন করা থাকলেও তা আর আলোর মুখ দেখেনি।