চুয়াডাঙ্গার কোটালী গ্রামের কৃষকেরা নাবা ক্রপ কেয়ার কোম্পানির ভুট্টাবীজ কিনে চরম প্রতারণার শিকার
ফলনে ধস : খবর দিলেও চাষিদের সাথে দেখা করছে না কোম্পানির প্রতিনিধিরা
বেগমপুর প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গার কোটালী গ্রামের প্রায় দুই শতাধিক কৃষক নাবা ক্রপ কেয়ার লি: কোম্পানির নাবা ৫৫ জাতের ভুট্টা বীজ কিনে চরমভাবে প্রতারিত হয়েছেন। বীজ বিক্রয়ের সময় কোম্পানির প্রতিনিধিরা ৩৫ থেকে ৪০ মন ফলন হবার কাথা বলে বীজ বিক্র করে। এখন ভুট্টা কাটতে গিয়ে চাষিরা দেখছেন বিঘাপ্রতি ৮ থেকে ১০ মন করে ফলন হচ্ছে। এতে চাষিরা আর্থিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্তর সম্মুখীন হয়েছে। বীজ কিনে প্রতারিত হওয়া চাষিরা কোম্পানির প্রতিনিধিদের খবর দিলেও তারা চাষিদের সাথে কোনো প্রকার যোগাযোগ করছে না বলে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা জানিয়েছেন। তাই বাধ্য হয়ে নাবা কোম্পানির ডিলার সেলিম উদ্দিন ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নেহালপুর ইউনিয়নের কোটালী গ্রামের প্রায় ২ শতাধিক চাষি চলতি মরসুমে নাবা ক্রপ কেয়ার কোম্পানির নাবা ৫৫ জাতের ভুট্টার বীজ বপন করেন। কোটালী গ্রামের চাষি জামাল হোসেন, মোহাম্মদ আলী, আরশাদ আলী, রসুল করিম, মিন্টু মিয়া, ওবাইদুর, খাইরুল ইসলাম, ওমিদুল ও রবি মাস্টারসহ অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, এ ভুট্টার বীজ ক্রয়ের সময় কোম্পানির লোকজন আমাদেরকে জানিয়েছেন বিঘাপ্রতি ফলন হবে ৪০ থেকে ৪৫ মন। অধিক ফলন হবে এ প্রত্যাশায় নাবা ৫৫ জাতের ভুট্টারবীজ রোপণ করি। এখন ভুট্রা কাটতে গিয়ে দেখি মোচা হয়েছে ২ থেকে ৩ ইঞ্চ করে। এক বিঘা জমির ভুট্রা কেটে ঝেড়ে হচ্ছে ৮ থেকে ১০ মন করে। ভুট্টাচাষ করে আমরা শেষ। কারণ ধার কর্যকরে ভুট্টার চাষ করেছি। পাওনাদারদের পাওনা শোধ করবো কি দিয়ে। এ ব্যাপারে কোটালী বাজারের মেসার্স আল আমিন ট্রেডার্সের মালিক ও নাবা কোম্পানির ডিলার সেলিম উদ্দিন বলেন, আমি সাড়ে ৯ টন নাবা ৫৫ জাতের ভুট্টার বীজ আমদানি করে চাষিদের কাছে বিক্রি করেছি। কোম্পানির লোক ফলনের ব্যাপারে যেভাবে আমাকে বলেছে আমি চাষিদের সে ভাবে বলেছি। এখন তো দেখছি চাষিরা চমরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমি কোম্পানির লোকজনকে খবরের পর খবর দিচ্ছি তারা কোনোভাবেই আমার সাথে কিংবা চাষিদের সাথে দেখা পর্যন্ত করছে না। আমি এবং চাষিসহ আমাদের ১৬ কোটি টাকার মত ক্ষতি হয়েছে। বীজ আমদানির সময় কোম্পানিকে নগদ ২০ লাখ টাকা দিয়েছি। যার রশিদ সংগ্রহে আছে। তাই আমি বাধ্য হয়ে চাষিদের ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকসহ কৃষি বিভাগের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। প্রয়োজনে আদালতের আশ্রয় নিব। কারণ ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা আমার ছাড়ছে না। চুয়াডাঙ্গা কুশাডাঙ্গার ডিলার জুয়েল রানা বলেন, আমি ৭ লাখ টাকা পরিষোধ করে ৩ টন বীজ কিনে চাষিদের কাছে বিক্রি করেছি। কোটালী গ্রামের চাষিদের মতো আমার এখানেও চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমি কোম্পানির লোকজনকে খুঁজে পাচ্ছি না। নাবা কোম্পানির মাঠ কর্মী রবিন বলেন, আমি এখন বিপদে। কারণ চাষিদেরকে এ বীজ লাগানোর জন্য বলে ছিলাম। চাষিদের ক্ষতিগ্রস্তর বিষয়টি আমি আমার কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। তারা কেউ মাঠ পর্যায়ে আসছে না। এ ব্যাপারে কোম্পানির চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মেহেরপুর জেলার এরিয়া ম্যানেজার ফিরোজ আহম্মেদ বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। এ বীজ অনেক জয়গায় চাষ হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফাঙাস ডিজিজ হওয়ার কারণে। ডিলারদের মাধ্যমে আমরা চাষিদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি। তবে কোটালী গ্রামে আমার যাওয়া হয়নি। ডিলারের সাথে যোগাযোগ রাখছি। এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার বলেন, আমি উপজেলা কৃষি অফিসারকে নির্দেশ দিয়েছি। চাষিদের বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা যেন গ্রহণ করা হয়। জেলার অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত বীজ প্রত্যয়ন অফিসার ড. সুশান্ত কুমার তরফদারের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখে কোম্পানির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানিয়েছে ভুক্তভোগী চাষিরা।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.