চুরির অপরাধে আলমডাঙ্গার আশান উদ্দিনকে পিটিয়ে হত্যা
হরিণাকুণ্ডু থেকে আলমসাধু চুরি করে পালানোর সময় পাকড়াও, গণপিটুনী
হরিণাকুণ্ডু প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুতে আশান উদ্দিন (৪৫) নামে এক ব্যক্তিকে চুরির অপরাধে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল মঙ্গলবার ভোরে তাকে হত্যা করে কে বা কারা তার লাশ হাসপাতালে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে হাসপাতাল থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার চিৎলা হুদাপাড়ায় আফতাব উদ্দিনের ছেলে। ময়না তদন্ত শেষে গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে গ্রামের কবরস্থানে আশানের লাশ দাফন করা হয়।
এলাকাবাসী জানায়, সোমবার রাতে উপজেলার কাপাশাটিয়া গ্রামের লিটন মোল্লার বাড়ি থেকে একটি আলমসাধু (শ্যালোইঞ্জিন চালিত যান) চুরি হয়ে যায়। ঘটনা টের পেয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে ধাওয়া করেন লিটন ও তার সঙ্গীরা। একপর্যায়ে পার্শ্ববর্তী চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার রামদিয়া এলাকা থেকে আলমসাধুসহ আশানকে আটক করা হয়। এ সময় স্থানীয় হাজি আরশেদ আলী কলেজ মাঠে আশানকে পিটিয়ে হত্যা করে এলাকার লোকজন। মঙ্গলবার সকালে ওই ব্যক্তির মরদেহ হরিণাকুণ্ডু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রেখে দেয়া হয়। খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন নিহতের স্ত্রী তাসলিমা খাতুন। স্ত্রী তাসলিমা জানান, ঢাকার নবীনগর এলাকায় তার স্বামীর পান বিড়ির দোকান রয়েছে। কয়েকদিন আগে সে বাড়িতে আসে। গত রোববার আশান উদ্দীন বাড়ি থেকে বের হয়। গত সোমবার রাতে বাড়িতে ফেরার পর কিছু লোক তাকে ডেকে নিয়ে যায়।
হরিণাকুণ্ডু হাসপাতালের আরএমও আশরাফুল ইসলাম জানান, ভোরে একটি বাচ্চা ইজিবাইকে করে হাসপাতাল চত্বরে ওই ব্যক্তির লাশ ফেলে রখে চলে যায়। তার মাথা, মুখ, পিঠ, হাতসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
হরিণাকুন্ডু থানার ওসি সাইফুল ইসলাম জানান, সোমবার উপজেলার শিতলী গ্রাম থেকে একটি আলমসাধু চুরি হয়। গ্রামবাসী নিহতের নিজ গ্রাম থেকে আশান উদ্দীনকে ধরে এনে হরিণাকুন্ডুর কাঁপাশহাটিয়া গ্রামে হাজি আরশাদ আলী কলেজ এলাকায় নিয়ে আসে। সেখানে তারা তাকে মারধর করে। মারধরের ফলে তার মৃত্যু হলে লাশ মঙ্গলবার ভোরে হরিণাকুণ্ডু উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ফেলে রেখে যায়।
ওসি আরও জানান, সোমবার রাতে উপজেলার শিতলী গ্রাম থেকে একটি আলমসাধু চুরির অপরাধে ওই ব্যক্তিকে ধরে আনা হয় বলে জানা গেছে। রাতে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। নিহতের নামে আলমডাঙ্গা থানায় একটি চুরির মামলা আছে।
এদিকে আমাদের ভালাইপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, আলমডাঙ্গার চিৎলা ইউনিয়নে চিৎলা হুদাপাড়ার মৃত আবতাব উদ্দিনের ছেলে আশান আলী গত ১০ বছর ধরে ছোট স্ত্রীকে নিয়ে মেহেরপুর বাড়াদী এলাকায় থাকতেন। মাঝে মাঝে গ্রামে এলেও লোকচক্ষুর আড়াতে থাকতে পছন্দ করতেন। গ্রামবাসী অভিযোগ করে বলেন, ঝিনাইদহে চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত আশান আলী এলাকার অনেকের নছিমন, করিমন, আলমসাধু, ইজিবাইকসহ ছাগল, গরু চুরি করেছেন। আসান আলীর কাজই ছিলো এলাকার নছিমন, করিমন, আলমসাধু, ইজিবাই চুরি করে অন্য এলাকায় বিক্রি করা। আবার অন্য এলাকায় চুরি করে এই এলাকায় বিক্রি করা।
গ্রামবাসী আরো অভিযোগ করে বলেন, গত ১০ বছর আগে ২ মেয়ে এক ছেলেসহ বড় স্ত্রীকে তালাক দিয়ে আশান আলী দ্বিতীয় বিয়ে করে মেহেরপুর বাড়াদী এলাকায় ছোট স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন। মাঝে মাঝে ভাইদের বাড়ীতে ছেলে মেয়েদের খোঁজখবর নিতে এসে চুরি করে পালিয়ে যেতো বলে অভিযোগ অনেকের।