গাংনীর শিল্পপতি তাজুর দুর্নীতি এবং গোপন কমিটির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড়

দীর্ঘ ১২ বছর সভাপতি ছিলেন স্বামী : এবার স্ত্রী

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার মানিকদিয়া এগারপাড়া আলিম মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি একরামুল হক তাজুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছে স্থানীয়রা। দুর্নীতি চালু রাখতে গোপনে তার স্ত্রীকে এবার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি করা হয়েছে। অবৈধ পন্থায় গঠন করা ম্যানেজিং কমিটি বাতিল এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এমন দাবি জানিয়েছেন এলাকার বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে মাদরাসা প্রাঙ্গণেই এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে স্থানীয়রা।

প্রকৌশলী ইকরামুল হক তাজু লাভোলো আইসক্রিম কোম্পানির মালিক এবং এলাকায় বিভিন্ন দান-খয়রাত করে পরিচিতি পেয়েছিলেন। এলাকার মানুষের কাছে পজিটিভ প্রচারের আড়ালে তিনি দুর্নীতির মাধ্যমে প্রচুর অর্থ কামায় করেছেন। তার মতো একজন ব্যক্তির কাছ থেকে যা ছিল অপ্রতাশিত এবং এলাকার মানুষের সাথে যা বিশ্বাস ঘাতকতার শামিল বলে অভিযোগ করেছেন তার গ্রামের লোকজন।

সংবাদ সম্মেলনে গ্রামের কৃতিসন্তান এবং কলেজ শিক্ষক কামরুজামান বলেন, ১২ বছর তিনি (ইকরামুল হক তাজু) কিভাবে সভাপতি হয়েছেন তা আমরা কেউ টের পেতাম না। আওয়ামী লীগের সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে গোপনে অবৈধ পন্থায় সভাপতি হয়েছেন। আয়া, নৈশপ্রহরী, কম্পিউটর অপারেটর ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগ দিয়ে তিনি বিপুল অংকের টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন বলে এলাকায় বহুল প্রচলিত এবং তার দুর্নীতির বিষয়টি এলাকার সবাই জানে। এসব অভিযোগ ঢাকার জন্য এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে তিনি যে ১২ বছর সভাপতি পদে ছিলেন তা আড়াল করতে এখনও অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। মাদরাসার সুপার ও ইউএনও এর সহায়তায় গোপনে তিনি আবারও ম্যানেজিং কমিটি গঠন করেছেন। সেখানে তার স্ত্রীকে সভাপতি করা হয়েছে। তার স্ত্রী কানাডা থাকেন। কানাডা প্রবাসী স্ত্রীকে সভাপতি করার উদ্দেশ্য হচ্ছে তার দুর্নীতি এবং আওয়ামী লীগের ক্ষমতার ব্যবহারের বিষয়টি আড়াল করা। তাজু সাহেবের ১২ বছর সভাপতির দায়িত্ব পালনকালে একবারও মাদরাসায় আসেননি। সুপার একাই সভাপতি ও সুপারের ভূমিকায় একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার করে দুর্নীতি আর লুটপাট করেছেন। তাজু সাহেবের দুর্নীতি আর লুটপাটের হাতিয়ার ছিলেন সুপার সাহেব। আগের যে আওয়ামী লীগের দোসররা ছিল তাদেরকেই সাথে নিয়ে গোপনে এ কমিটি করেছেন একরামুল হক তাজু। সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয়দের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পেশ করেন সোহেল রানা। বক্তব্য রাখেন শিক্ষক কামরুজ্জামান, ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আলিহিম, বীর মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার হোসেন, ষোলটাকা ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি সাপ্পের আলী। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে স্থানীয়দের পক্ষে সোহেল রানা জানান, একরামুল হকের পিতা মরহুম মোজাম্মেল হকসহ এলাকার আরও অনেকে প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য। মাদরাসাটির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এলাকার অনেক মানুষ জমি ও অর্থ দান করে আসছেন। তাদের মধ্যে প্রয়াত শওকত আলী মুন্সি, খোদাবক্স মিয়া, মোজাম্মেল হক, মোবারক হোসেন ও মাও. আবু বক্কর উল্লেখযোগ্য। মানিকদিয়া গ্রামের প্রয়াত মোজাম্মেল হকের ছেলে একরামুল হক তাজু বিগত সরকারের আমলে অবৈধ ক্ষমতা প্রয়োগ করে একটানা ১২ বছর যাবৎ সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। এ সময় তিনি মাদরাসাটিকে পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন। গ্রামের অনেক মানুষের দান-অনুদানে মাদরাসাটি তৈরি হয়। কিন্তু ২০০৯ সালে সে নিজ ক্ষমতাবলে তার পিতা মরহুম মোজাম্মেল হককে একক প্রতিষ্ঠাতা দেখিয়ে রেজুলেশনভুক্ত করেন এবং ম্যানেজিং কমিটিতে আজীবন একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এই আজীবন সদস্যের ছেলে হিসেবে ইকরামুল হক তাজু মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির একজন সদস্য হতে পারছেন। কমিটিতে ১২ বছর ধরে তার আপন ভাই জাহিদুল হক সাজুকে দাতা সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। কমিটিতে সভাপতি, প্রতিষ্ঠাত সদস্য ও দাতা সদস্য ছিল একই পরিবার থেকে।

পারিবারিক এই কমিটিতে সর্বশেষ তাজুর স্ত্রী নারগিস আরা যুক্ত হয় এমন অভিযোগ করে লিখিত বক্তব্যে সোহেল আরও বলেন, মাদরাসা উন্নয়নের নামে মাদরাসার জমি দখল করে পিতার নামে আলহাজ মোজাম্মেল হক ফাউন্ডেশন নামীয় সংগঠনের কার্যালয় নির্মাণ করে কার্যক্রম শুরু করেন। যা ক্ষমতার চরম অপব্যবহার হিসেবে এলাকার মানুষের কাছে চিহ্নিত।

নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে সোহেল বলেন, সভাপতি হিসেবে ইকরামুল হক তাজু কয়েকটি নিয়োগ দেন। এর মধ্যে নৈশপ্রহরী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন আশরাফুল ইসলামকে। মোটা অংকের ঘুষের মাধ্যমে অবৈধভাবে আশরাফুলের বয়স কমিয়ে এ নিয়োগ দেয়া হয়। বয়স কমানোর ফলে বর্তমানে আশরাফুলের বয়স ৪০ বছর। অথচ তার আপন ছোট ভাইয়ের বয়স ৫০ বছর। তাদের জন্ম নিবন্ধন ও এনআইডি এবং বয়স কমানোর সব ডকুমেন্টস সংগ্রহ করেছেন এলাকার মানুষ। যা দ্রুততম সময়ের মধ্যে তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। এছাড়াও নৈশপ্রহরী, আয়া ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিয়ে ষাট লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে এলাকার মানুষের দাবি। নৈশ প্রহরী আশরাফুল ইসলামকে অবৈধভাবে কয়েক দফা বয়স কমিয়ে সুবিধা নিয়ে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

৫ আগস্টের পর কিছুদিন আত্মগোপনে ছিলেন ইকরামুল হক তাজু। তবে মাদরাসার কর্তৃত্ব ছাড়েননি। এলাকার মানুষের তীব্র প্রতিবাদের মুখেও তিনি গোপনে তার স্ত্রী নার্গিসকে সভাপতি মনোনীত করে বোর্ড থেকে অনুমোদন করিয়েছেন। কমিটি গঠনে সকল নিয়ম নীতি ভেঙে তিনি এ কাজটি করে এলাকার মানুষের মনে আরও ক্ষোভ বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাই একরামুল হক তাজুর সকল দুর্নীতির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা এবং অনতিবিলম্বে ম্যানেজিং কমিটি বাতিল করে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন সংবাদ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরা।

তবে অভিযুক্ত ইকরামুল ইসলাম তাজু দেশের বাইরে থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রীতম সাহা জানিয়েছেন, দুর্নীতি ও কমিটি গঠনের বিষয়টি খতিয়ে দেখে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More