চুয়াডাঙ্গা-কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে আলমডাঙ্গায় যৌথসভা অনুষ্ঠিত
আলমডাঙ্গা ব্যুরো: চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলার কর্মকর্তাদের যৌথসভায় কুমার নদ থেকে অবৈধ বাঁধ অপসারণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে রাহুমুক্ত হতে চলেছে কুমার নদ। স্বস্তি ফিরেছে কুমার নদের উভয়পাড়ের হাজার হাজার মানুষের মনে। চুয়াডাঙ্গা জেলার প্রশাসনের উদ্যোগে গতকাল রোববার দুপুরে ওসমানপুর গ্রামে নদীরপাড়ে চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলার গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের এ যৌথসভার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে কুমার নদ পরবর্তীতে ইজহারা না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার ভেতর দিয়ে বহমান কুমার নদ। এ কুমার নদের একটা অংশ চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলা ও কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার সীমান্ত দিয়ে প্রবাহিত। এ স্থানে নদের এক পাড়ে মিরপুর উপজেলার শুকচা বাজিতপুর ও পাগলা গ্রাম। অন্যপাড়ে আলমডাঙ্গা উপজেলার ওসমানপুর গ্রাম। দু’পাড়ের গ্রামবাসীর জন্য আবহমান ধরে উন্মুক্ত ছিলো। এখানে উভয় গ্রামবাসী বোরো ধানের চারা দেন, পাট জাগ দেন, মাছ ধরেন স্বাধীনভাবে। এ নদ গতিশীল করতে গত ফেব্রুয়ারি মাসে এ কুমার নদের খনন কাজ শুরু হয়। ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে আলমডাঙ্গা উপজেলার হাটবোয়ালিয়া থেকে ১২ কিলোমিটার খনন কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এমতাবস্থায়, সরকারি অর্থে পুনর্খননকৃত কুমার নদের ওপর নজর পড়ে মিরপুর উপজেলার মালিহাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পাগলা গ্রামের হামিদুল ইসলামের নেতৃত্বে কিছু ব্যক্তির। বুনারঘাট থেকে পাগলা গ্রামের হাটের নিচ পর্যন্ত মোট ৫টি স্থানে বাঁশের বেড়া দিয়ে বাঁধ দিয়েছেন মাছ চাষের উদ্দেশে। এ অবৈধ বাঁধের বিরোধিতা করতে গেলে একাধিকবার হামিদুল ও তার লোকজন ওসমানপুর গ্রামবাসীর ওপর হামলা করেন।
অবৈধ বাঁধের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী ওসমানপুর গ্রামের সাইফুল ইসলাম জানান, হামিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কর্মকা-ের নানা অভিযোগ রয়েছে। মিরপুর উপজেলার একেবারে সীমান্তবর্তী এলাকায় তার রাজত্ব। সে কারণে প্রশাসনের দৃষ্টির আড়ালে থেকে যায় তার অধিকাংশ অপরাধ। তিনি জানান, বাঁধের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় গত ২ মার্চ ওসমানপুর গ্রামের শিপন নামের এক যুবকের ওপর গুলি বর্ষণ করা হয়। গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় বেঁচে যান শিপন। এ ঘটনার কিছুদিন পর ওসমানপুর গ্রামের আফজালুর রশিদকে বেদম পিটিয়েছে হামিদ গং।
এদিকে, নদে অবৈধভাবে বাঁধ দেয়া ও ওসমানপুর গ্রামবাসীর ওপর বার বার হামলার ঘটনায় বিবাদমান ২ গ্রামে আরও উত্তেজনা ছড়ায়। ২০০২ সালে পাগলার আবুসউদ্দিনসহ ৩ ডাকাতকে ওসমানপুর গ্রামবাসী পিটিয়ে মেরেছিলো। প্রশাসনের অবহেলায় পরিস্থিতি আবারও সে দিকেই ধাবিত হতে থাকে। এমন পরিস্থিতি যাতে না হয় সে জন্য ওসমানপুর গ্রামবাসী জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও থানা অফিসার ইনচার্জের নিকট এ সমস্যা নিরসনের জন্য স্মারকলিপি প্রদান করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার দ্রুত এ সমাধান করতে প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি কুষ্টিয়া জেলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে যৌথসভার জন্য চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। প্রতিশ্রুতি মোতাবেক গতকাল রোববার দুপুরে ওসমানপুর গ্রামে নদীর পাড়ে চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলার গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়।
অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ ইয়াহ ইয়া খান, কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মুহাম্মদ ওবায়দুর রহমান, আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার লিটন আলী, কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার লিঙ্কন বিশ্বাস, আলমডাঙ্গার সহকারী কমিশনার (ভূমি) হুমায়ুন কবীর, মিরপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) রকিবুল হাসান, চুয়াডাঙ্গার বিডব্লিউ ডিবির এক্স————————-ইএন জাহেদুল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গা পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসডিই সুবীর কুমার ভট্টাচায্য, আলমডাঙ্গা থানা অফিসার ইনচার্জ আলমগীর কবীর, হারদী ইউপি চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব আলী মাস্টার, ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব ও ক্রীড়া সংগঠক মিজানুর রহমান মধু ও উভয়পক্ষের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।
সভায় গৃহীন সিদ্ধান্ত মোতাবেক কুমার নদে অবৈধভাবে বাঁধ দ্রুত অপসারণ করে নিতে মিরপুর উপজেলার মালিহাদ গ্রামের আব্দুল হামিদকে নির্দেশ দেয়া হয়। তিনি ৩-৪ দিনের ভেতর কুমার নদের বাঁধগুলো অপসারণ করে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। একই সাথে দুই জেলার প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঐক্যমত্যে পৌঁছেন যে, ভবিষ্যতে তারা আর ওই নদ কাউকেই ইজারা প্রদান করবেন না। এবং কুমার নদ ইজারা সংক্রান্ত নির্দেশাবলি বিলুপ্তির জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অবগত করবেন।
এদিকে, দুই জেলার কর্মকর্তাদের যৌথসভায় কুমার নদের অবৈধ বাঁধ অপসারণ ও ভবিষ্যতে আর লীজ প্রদান না দেয়ার সিদ্ধান্তে স্বস্তি ফিরেছে কুমার নদের বিবাদমান দু’পাড়ের জনপদে।
ছবি: কুমার নদ।
পূর্ববর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ
1 টি মন্তব্য
উত্তর দিন
উত্তর বাতিল করুনYou must be logged in to post a comment.
এভাবে যদি আলমডাঙ্গার বন্ডবিল,নওদাদূর্গাপুর,চকবন্ডবিল,শ্যামপুর,পারদূর্গাপুর,দীঘলডাঙ্গা,আনন্দবাস হয়ে নতিডাঙ্গায় গিয়ে মাথাভাঙ্গা পর্যন্ত প্রবাহিত মরাগাঙ/মরানদীটি সকলের জন্য অবমুক্ত করা হতো তাহলে এলাকার অনেক গরীব পরিবার যারা মৎস আহোরণ করে তাদের এবং এলাকার সর্বসাধারণের জন্য উপকার হতো।এছাড়া নদীটির নাব্যতা ফিরে পেতো।যা এলাকার কিছু ক্ষমতাধর মানুষের বিভিন্ন স্থানে বাঁধ দেওয়ার কারণে হারিয়েছে।আলমডাঙ্গা উপজেলা প্রশাসন তথা চুয়াডাঙ্গা জেলাপ্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।