কালীগঞ্জের কোলা ইউপি ইকবালের বিরুদ্ধে সরকারি প্রকল্পের ১৮ লাখ টাকা লুটপাটের অভিযোগ

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার কোলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য আবু জাফর ইকবাল। বিতর্কিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী আনোয়ারুল আজীম আনারের পক্ষে কাজ করেছেন। ভারতের কলকাতায় হত্যাকা-ের শিকার তিনবারের সাবেক এই এমপি আনারের অনুসারী পরিচয় দিয়ে একযুগ ধরে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করেছেন। এলাকাবাসী বলছেন, কোলা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আইয়ুব হোসেন মোল্লার আত্মীয় পরিচয় দিয়ে সুবিধা নিতেন। এ কারণে স্থানীয়রা তাকে চিনতেন আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে। দুই দশক আগে বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন আবু জাফর। ক্ষমতার পালাদবলের সাথে একাধিকবার রাজনৈতিক দল পরিবর্তন করেছেন তিনি। বর্তমানে বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে দলটির নেতা পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কোলা ইউনিয়ন পরিষদে ত্রাসের রাজস্ব সৃষ্টি করেছেন। সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করেছেন নিজের ইচ্ছামতো। নিজ এলাকায় প্রকল্প নিয়ে ১৮ লাখ টাকা লুটপাটের আয়োজন করায় এই ইউপি সদস্যকে নিয়ে এলাকায় চলছে সমালোচনার ঝড়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বাসিন্দাদের অভিযোগ, সাম্প্রতিক সময়ে ইউপি সদস্য আবু জাফর ইকবাল কোলা ইউনিয়ন পরিষদে একক আধিপত্য বিস্তার করে জনস্বার্থ বিরোধী কাজ ও নানা অনিয়মে জড়িয়েছেন। স্মার্ট কার্ড বাদেই ইচ্ছামতো টিসিবি পণ্য বিতরণ করছেন তিনি। নিজের পছন্দের লোকজনের মধ্যে ভিজিএফ চাল বিতরণ করছেন এই ইউপি সদস্য। ইউনিয়নের মাতৃত্বকালীন ভাতাসহ সকল সরকারি সেবা নিজের ইচ্ছামত বণ্টন করেন। তার বিরুদ্ধে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের আদায় হওয়া ট্যক্সের টাকার কোন হিসাব ইউপি সদস্যদের দেননি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (টিআর) প্রকল্পের জন্য ৯ লাখ ৫১ হাজার ৪০ টাকা বরাদ্দ এসেছে কোলা ইউনিয়নে। একই অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা) প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ এসেছে ১০ লাখ ৯৩ হাজার ৯৩০ টাকা। আবু জাফর ইকবাল টিআর ও কাবিটার ছয়টি বড় প্রকল্প তার নিজ গ্রাম দামোদারপুরে বাস্তবায়ন করছেন। যার বরাদ্দ ১২ লাখ ৩১ হাজার টাকা। পাশ্ববর্তী গ্রামে ৬ লাখ ৫ হাজার টাকার আরও তিনটি প্রকল্প গ্রহণ করেছেন তিনি। নিজের নিয়ন্ত্রণে ১৮ লাখ ৩৬ হাজার টাকার প্রকল্প গ্রহণ করেছেন। এসব প্রকল্প গ্রহণে অন্য ইউপি সদস্যদের সাথে বৈঠক না করে নিজের ইচ্ছামত প্রকল্প গ্রহণ ও বড় প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি তিনি নিজে হয়েছেন। কোলা ইউনিয়নে মোট ২২টি গ্রাম থাকলেও মাত্র একটি প্রকল্প খালকুলা গ্রামে দেয়া হয়েছে। সংরক্ষিত মহিলা সদস্য রোকেয়া বেগম বলেন, ১১টি প্রকল্পের মধ্যে ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডে কোনো প্রকল্প গ্রহণ করা হয়নি। ভিজিএফের ১৫শ’ ২০টি কার্ডের মধ্যে অল্পকিছু কার্ড দেয়া হয়েছে তিন ওয়ার্ডে। বাকি কার্ডগুলো জাফর মেম্বার ইচ্ছামত বণ্টন করছে। ইউনিয়ন পরিষদে আমাদের কোনো কথা শোনা হয় না। জাফর মেম্বারের ইচ্ছায় শেষ কথা পরিষদে। ইউপি সদস্য আতর আলী শেখ বলেন, সকল প্রকল্প জাফর তার ইচ্ছামত নিয়েছে। প্রকল্প গ্রহণের ব্যপারে কোন সভা হয়নি। প্রশাসনিক কর্মকর্তা থাকলেও পরিষদটি এখন জাফর মেম্বার জিম্মি করে রেখেছে। সংরক্ষিত মহিলা সদস্য হাজেরা বলেন, গত জুনের পর আমরা পরিষদ থেকে কোন ভাতা পায়নি। ট্যাক্সের টাকা তোলা হয়েছে যার কোন হিসাব পায়নি। সদ্য বিদায়ী সচিব হাফিজুর রহমানের নিকট একাধিকবার গিয়েছি। সে বলে আমি জাফর মেম্বারের কাছে ট্যাক্সের হিসাব দিয়ে আসছি। এভাবে আমরা আমাদের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।
ইউপি মেম্বার দিলীপ বিশ্বাস বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে জাফর মেম্বার পরিষদে রামরাজত্ব করছে। আনুমানিক সাত-আট লাখ টাকার ট্যাক্স আদায় করা হয়েছে। তবে মেম্বার হিসেবে আমরা কিছুই জানিনা। শুধু স্বাক্ষর নেওয়া ছাড়া আমাদের কোন কাজে খোঁজা হয় না। ইউপি সদস্য আমিরুল ইসলাম বলেন, যে সকল গ্রাহকের টিসিবি স্মার্ট কার্ড তৈরি হয়েছে সেগুলো দেয়ার জন্য প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে অনুরোধ করছি কিন্তু প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও প্রশাসক দুজই জাফরের কথা ছাড়া কাজ করে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক এক ইউপি সদস্য জানান, ২০ লাখের বেশি টাকা প্রকল্প বরাদ্দ হলেও ইটের কোন কাজ প্রকল্পে আনা হয়নি। আমাদের ওয়ার্ডে কোন বরাদ্দ হয়নি। একজন মেম্বর হয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তৎকালীন চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আইয়ুব হোসেন মোল্যা দুলাভাই পরিচয় দিয়ে সকল সুবিধা ভোগ করে। সরকার পতনের পর নতুন রুপে স্থানীয় কিছু আওয়ামী দোসর সাথে নিয়ে দল ভারি করে ইউনিয়ন পরিষদ দখল করেছে। এসবের প্রতিকার হওয়া উচিত। দামদারপুর গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে হাফেজ নজরুল ইসলাম জানান, ৫ আগস্টের পর জাফর মেম্বারের নেতৃত্বে ওই গ্রামের মতিন ডাক্তার ও জয়নালকে আভিযোগকারী বানিয়ে আমার ভাগনি বিবাহকে কেন্দ্র করে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। জানতে চাইল ইউপি সদস্য আবু জাফর ইকবাল বলেন, টিআর ও কাবিটার প্রকল্প আমার গ্রামে প্রয়োজন এজন্য বরাদ্দ হয়েছে। মিটিং ছাড়াই প্রকল্প বরাদ্দ পাশ হলো কিভাবে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান এবং সব কিছু ভালোই চলছে বলে জানান তিনি। ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শুকুর আলী বলেন, দলের নাম ভাঙিয়ে যদি কেউ প্রভাব বিস্তার করে সেটি ভুল। তবে ইউনিয়ন পরিষদে দলীয় কোন সিদ্ধান্ত নেই। কোলা ইউপি সচিব সোহাগ আলী বলেন, ট্যাক্সের টাকা আনুমানিক এক লাখ টাকার মত পরিষদের একাউন্টে আছে। তবে ইউপি মেম্বাররা কিছুই জানেন না জানতে চাইলে তিনি নতুন যোগদান করেছেন বলে জানান। কোলা ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক খায়রুল হক বলেন, ট্যাক্সের টাকা কত জমা আছে তা সঠিকভাবে বলতে পারবো না। প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির মাধ্যমে দীর্ঘ ১৫ বছর অবহেলিত ওয়ার্ডে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সকল ওয়ার্ডে বরাদ্দ যাবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More