করোনা নিভিয়ে দিলো চুয়াডাঙ্গার প্রতিভাবান এক কলম সৈনিকের প্রাণ প্রদীপ
সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম ডালিমের ইন্তেকাল : শোক
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার প্রতিভাবান সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম ডালিম ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহে…….রাজেউন)। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় নেয়ার পথে বেলা ৩টার দিকে সাভারের আমিন বাজার নামকস্থানে মারা যান তিনি। আরিফুল ইসলাম ডালিম ছিলেন চুয়াডাঙ্গার জোয়ার্দ্দারপাড়ার ইসলাম হোসেনের ছেলে। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৩৮ বছর। আরিফুল ইসলাম ডালিমের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপিসহ অনেকে। গতরাত ১২টায় চুয়াডাঙ্গা জান্নাতুল মওলা কবরস্থান জামে মসজিদে নামাজে জানাজা শেষে দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়।
যমুনা টেলিভিশন, দৈনিক দেশ রূপান্তর ও ইউএনবি’র চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন আরিফুল ইসলাম ডালিম। সম্প্রতি আকাশ খবর পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক পদে নিযুক্ত হন তিনি। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, ১৯ জুলাই তিনি করোনার টিকার প্রথম ডোজ গ্রহণ করেন। ২৩ জুলাই করোনা পরীক্ষা করা হলে তার কোভিড-১৯ পজিটিভ হয়। প্রথমে বিজি হাসপাতালে পরে ২৭ জুলাই তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের রেডজোনে রেখে চিকিৎসা দিলেও দিন দিন শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। কয়েকদিন আগে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণে নেয়া হয় তাকে। তাতেও শারীরিক অবস্থার তেমন উন্নতি না হলে পারিবারিকভাবে তাকে ঢাকায় নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। গত বুধবার রাতে নেয়ার কথা থাকলেও গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে নেয়া হয় ঢাকার উদ্দেশে। আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সযোগে তাকে ঢাকার পথে নেয়া হয়। বেলা ৩টার দিকে আরিফুল ইসলাম ডালিমের হৃদপি-ের স্পন্দন থেমে যায়। দ্রুত নেয়া হয় নিকটস্থ সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে তার মৃতদেহ চুয়াডাঙ্গার উদ্দেশে নেয়া হয়।
আরিফুল ইসলাম ডালিম ২০০২ সালের দিকে দৈনিক মাথাভাঙ্গার মাধ্যমে সাংবাদিকতা শুরু করেন। পরে তিনি গ্রামের কাগজ, আমার দেশ পত্রিকাসহ বিভিন্ন সংবাদপত্রে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্বপালন করেন। সর্বশেষ তিনি যমুনা টিভি, দৈনিক দেশ রূপান্তর, সংবাদ সংস্থা ইউএনবির চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। আরিফুল ইসলাম ডালিমের রয়েছে দুইপুত্র সন্তান। বড় ছেলে হাসান শাহরিয়ার অপূর্ব ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র, ছোট ছেলে হাসান সিফাত অর্ণ’র বয়স তিন বছর। আরিফুল ইসলাম ডালিম মৃত্যুকালে স্ত্রী নিগার সুলতানা, দুই সন্তান, পিতা-মাতাসহ বহু গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার মৃতদেহ গতরাত সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা থেকে পৌঁছুলে তার নিজবাড়িতে নেয়া হয়। পরে রাত ১২টায় নামাজে জানাজা শেষে দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়। নামাজে জানাজায় চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব সভাপতি দৈনিক মাথাভাঙ্গা সম্পাদক বাংলাভিশন প্রতিনিধি সরদার আল আমিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কলিমুল্লাহ, যমুনা টেলিভিশনের খুলনা ব্যুরো প্রধান কনক রহমান, সদর থানার ওসি আবু জিহাদ খান, জাসদ নেতা মোহাম্মদ তৌহিদ হোসেন, চুয়াডাঙ্গা পৌর কাউন্সিলর কামরুজ্জামান চাঁদ, মাফিজুর রহমান মাফিসহ অনেকেই শরিক হন।
আরিফুল ইসলাম ডালিমের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন, চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবেক পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন। তারা মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। দৈনিক মাথাভাঙ্গার সম্পাদক সরদার আল আমিন তাৎক্ষণিকভাবে শোক প্রকাশ করে বলেছেন, ‘আরিফুল ইসলাম ডালিম আমার খুবই স্নেহভাজন ছিলো। বিচক্ষণ প্রতিভাবান ডালিম খুব অল্প বয়সেই সাংবাদিকতা শুরু করে। ওর সাংবাদিকতার হাতে খড়ি দৈনিক মাথাভাঙ্গায়। চটপটে বাকপটু মেধাবী যুবক ডালিম যখন সাংবাদিকতা শুরু করে তখনই বুঝেছিলাম অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবে। সাংবাদিকতায় খুব দ্রুত অনেক দূর এগিয়েও ছিলো। কিন্তু করোনা তার কাল হলো। করোনা ভাইরাস নিয়ে বহু প্রতিবেদনও করেছে ডালিম। ডালিমের মৃত্যুতে চুয়াডাঙ্গার সাংবাদিকতার জগতে অপূরণীয় ক্ষতি হলো।’ দৈনিক মাথাভাঙ্গা পরিবার আরিফুল ইসলাম ডালিমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছে। একই সাথে তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনাও জানিয়েছেন দৈনিক মাথাভাঙ্গা সম্পাদক সরদার আল আমিন। ঢাকাস্থ চুয়াডাঙ্গা জেলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের দাতা সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মির্জা শাহারিয়ার কবির লন্টু শোক প্রকাশ করে মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ডালিম ছিলো আমার খুবই স্নেহভাজন। অন্যদিকে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব সভাপতি সরদার আল আমিন ও সাধারণ সম্পাদক রাজীব হাসান কচি যুক্ত স্বাক্ষরিত শোক বার্তায় মরহুমের আত্মার শান্তি কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা জেলা ইউনিটের সভাপতি আজাদ মালিতা ও সাধারণ সম্পাদক বিপুল আশরাফ। এছাড়া মাথাভাঙ্গা নদী বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক মুন্সী, চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদের সভাপতি কবি নজমুল হেলাল, সাধারণ সম্পাদক নজির আহমেদ, জেলা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ইয়াকুব হোসেন মালিক, জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি ডা. মার্টিন হিরক চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত কুমার সিংহ, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কমিটির সভাপতি গোবিন্দ বিশ্বাসসহ জীবননগর প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ, দর্শনা প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ, চুয়াডাঙ্গা অরিন্দম সাংস্কৃতিক সংগঠন, চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রদলসহ অনেকে।