চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে অনেকটায় ঢিলেঢালাভাবে চলছে কঠোর লকডাউন : রাস্তায় বেড়েছে মানুষের চলাচল
স্টাফ রিপোর্টার: করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে দেশব্যাপী চলছে কঠোর লকডাউন। তবে চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে গতকাল অষ্টম দিনে দেখা গেছে ঢিলেঢালাভাব, যদিও সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে তৎপর ছিলো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। করোনা সংক্রমণ বাড়লেও বিধিনিষেধ মানার ব্যাপারে এখনও উদাসীন মানুষ। কঠোর লকডাউনের মধ্যেও রাস্তাঘাট ও বাজারগুলোতে আগের মতোই দেখা গেছে মানুষের ভিড়। নানা অজুহাত দেখিয়ে ঘরের বাইরে আসছে মানুষ। কোথাও কোথাও সড়কের চিত্র দেখে বোঝার উপায় নেই যে, দেশে চলছে সর্বাত্মক লকডাউন। লকডাউনের দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষজনের ঘরের বাইরে বের হওয়ার প্রবণতা বেড়েই চলেছে। প্রয়োজন না থাকলেও কেউ কেউ নানা অজুহাত নিয়ে ঘর থেকে বের হয়েছেন। অন্য সব দিনের চেয়ে চুয়াডাঙ্গার সড়কে গাড়ির সংখ্যা তুলনামূলক বেশি লক্ষ্য করা গেছে। শহরের শহীদ হাসান চত্বরে ব্যক্তিগত গাড়ি, ইজিবাইক, ভ্যান ও রিকশার উপস্থিতি চোখে পড়েছে। গণপরিবহন না থাকায় অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে রিকশা কিংবা ভ্যানে গাদাগাদি করে যেতে দেখা গেছে অনেককে। সড়কে যেমন লোকজনের আনাগোনা দেখা গেছে তেমনি বাজারেও। তবে অনেকের মুখেই মাস্ক ছিলো না। যেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি টের পেলে মুখে মাস্ক পরছেন সবাই। গতকালও জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। লকডাউন কার্যকরে মাঠে রয়েছেন ১৩জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, র্যাব ও আনসার সদস্যরা।
আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে, আলমডাঙ্গায় সরকারি বিধি নিষেধ অমান্য করে রাস্তায় বের হওয়ার অপরাধে ৬ জনকে জরিমানা করেছে। গতাকল বৃহস্পতিবার আলমডাঙ্গা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হুমায়ূন কবীর আলমডাঙ্গা থানার পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত এমএম সেলিম ও সেনাবাহিনীর একটি টিম সঙ্গে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানা করেন।
জানা গেছে, আলমডাঙ্গা শহরের স্বাধীনতা স্তম্ভ মোড়, নতুন বাসস্ট্যান্ড, রেল স্টেশন, লালব্রিজ, শাদাব্রিজ, কালিদাসপুর, আনন্দধাম ব্রিজসহ শহরের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করেন। সরকারি বিধি নিষেধ অমান্য করে মোটরসাইকেল নিয়ে বাইরে আসার কারণে উপজেলার মুন্সিগঞ্জের আবু ইসরাইলের ছেলে আব্দুস সাত্তারকে ৩শ টাকা, কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার হালসা গ্রামের মৃত মকবুল হোসেনের ছেলে সিরাজুল ইসলামকে ৫শ টাকা, আব্দুস সাত্তারের ছেলে হেলাল উদ্দিনকে ৫শ টাকা গোবিন্দপুর গ্রামের সারজেত আলীর ছেলে সাবদার আলীকে ৩শ টাকা, সিরাজুল ইসলামের ছেলে জিসানকে ৬শ টাকা, মাদরাসাপাড়ার আব্দুল ওয়াহেদের ছেলে পারভেজকে ৬শ টাকা, জরিমানা করেন।
দর্শনা অফিস জানিয়েছে, করোভাইরাস প্রতিরোধে দর্শনায় পৃথক পৃথকভাবে অভিযান চালিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে ভ্রাম্যমাণ আাদালতের বিচারক দামুড়হুদা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুদীপ্ত সিংহ অভিযান দর্শনা পুরাতন বাজারহ এলাকায়। এ সময় বালি বোঝায় ২ ট্রাক্টর মালিককে ৫ হাজার করে ১০ হাজার এবং অহেতুক বাজারে ঘোরাঘুরি করার কারণে ৫ পথচারীকে ১৭শ টাকা জরিমানা করেন। একইদিনে সন্ধ্যায় দর্শনা রেল বাজার এলাকায় অভিযান চালান ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক চুয়াডাঙ্গা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বিএম তারিকুজ্জামান। এ সময় তিনি স্বাস্থ্যবিধি লংঘনের অপরাধে আকন্দবাড়িয়ার জামিল আক্তার, ঈশ্বরচন্দ্রপুরের ফজলে রাব্বিকে ৫ দিনের কারাদ- দিয়েছেন।
দামুড়হুদা অফিস জানিয়েছে, কঠোর লকডাউনের ৮ম দিনেও তৎপর ছিলো দামুড়হুদা উপজেলা প্রশাসন। আর এদিনে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন দামুড়হুদা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুদীপ্ত কুমার সিংহ।
ভ্রাম্যমাণ আদালতসূত্রে জানা যায়, দামুড়হুদায় লকডাউনের বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে দামুড়হুদা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুদীপ্ত কুমার সিংহ মোবাইলকোর্ট পরিচালনা করে ৪টি মামলায় দ-িত ৬ জন ব্যক্তিকে ১১ হাজার ৪শ টাকা অর্থদ- করেন। আদালতে সহায়তা করেন বিজিবি ও পুলিশ সদস্যরা।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, চলমান কঠোর লকডাউনের দ্বিতীয় পর্যায়ে সরকারি বিধি নিষেধ অমান্য করে মাস্কবিহীন ঘরের বাইরে বের হওয়ায় মেহেরপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পৃথক পৃথক স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মেহেরপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত বসানো হয়। সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইয়ানুর রহমান, কাজী মোহাম্মদ অনিক ইসলাম, নাজমুল আলম, নিরুপমা রায়, মিথিলা দাস, আসাদুজ্জামান নূর ও গোলাম রব্বানী সোহেলের নেতৃত্বে পৃথক পৃথক স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসানো হয়। এ সময় ৬টি অভিযানে সরকারি বিধি নিষেধ অমান্য করে মাস্কবিহীন ঘরের বাইরে বের হওয়ার কারণে মোট ১৪টি মামলায় ১৪ জনের নিকট থেকে ১১ হাজার ৪শ’ টাকা অর্থদ- প্রদান করা হয়েছে।
হরিণাকু-ু প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঝিনাইদহের হরিণাকু-ুতে করোনা ভাইরাস থেকে আত্মরক্ষার্থে জনসচেতনা সৃষ্টির লক্ষ্যে কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে উপজেলা প্রশাসন। ভ্রাম্যমাণ আদালত বৃহস্পতিবার এক ব্যবসায়ীকে ৩ দিনের বিনাশ্রম কারাদ-, ১২টি মামলা দায়েরসহ নগদ ১১ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দা নাফিস সুলতানার নেতৃত্বে সকালে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় উপজেলা মোড়ে একাধিকবার সতর্ক করার পরও আইন অমান্য করে দোকান খোলা রাখায় মহত আলীর ছেলে জামাল উদ্দীনকে ৩ দিনের বিনাশ্রম কারাদ- প্রদান করেন। এছাড়াও হরিণাকু-ু বাজার, ভবানীপুর পানহাট, কুলবাড়িয়া বাজার, শ্রীপুর, ধুলিয়া, নারায়নকান্দী বাজার, গোপিনাথপুর, খলিশাকু-ু, চটকাবাড়িয়া, সাতব্রিজ বাজারে করোনাকালীন চলমান লকডাউনে সরকারি বিধিনিষেধ অমান্য করে মাস্ক পরিধান না করাসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার দায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে এ সকল জরিমানা আদায় করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা নাফিস সুলতানার সাথে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর টিমসহ উপজেলা নির্বাহী অফিসের অফিস সহকারী আসাদুল ইসলাম, প্রোসেস সার্ভার মঞ্জু মিয়া উপস্থিত ছিলেন।
পূর্ববর্তী পোস্ট
পরবর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ