আলমডাঙ্গা ব্যুরো: করোনাকালে গ্রামের সাধারণ রোগীদের চিকিৎসায় গ্রাম্য চিকিৎসকরা রেখে চলেছেন অনন্য ভূমিকা। সাধারণ জ্বর, সর্দি কিংবা পেট ব্যাথায় রোগীরা যখন শহরের প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসক কিংবা হাসপাতাল-ক্লিনিকে ধরণা দিয়েও কোনো ধরণের চিকিৎসাসেবা না পাওয়া রোগীদের একমাত্র ভরসাস্থল গ্রাম্যচিকিৎসকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, করোনাভাইরাস সংক্রমণে গত কয়েক মাসে রোগীদের সাধারণ চিকিৎসাসেবায় গ্রাম্য চিকিৎসকদের অনন্য অবদান রয়েছে। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে শুরু করে শহর অবধি নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের আশ্রয়স্থল এখন গ্রাম্যচিকিৎসকরা। আলমডাঙ্গার হারদী ইউনিয়নের যাদবপুর গ্রামের তরুণ গ্রাম্যচিকিৎসক হাসান মাহমুদ বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ডাক্তারদের ব্যক্তিগত চেম্বার লকডাউনের সময় কুয়াতলা, কুমারী ও দুর্গাপুর গ্রামের মানুষ সাধারণ চিকিৎসাসেবা না পেয়ে আমার কাছে এলে তাদের দিনরাত সেবাদান করেছি। এখনও করে যাচ্ছি। যাদবপুর গ্রামের তাবাসুম খাতুন, কুমারী গ্রামের অনাথ কুমার, কুয়াতলার হাসিনা খাতুন, দুর্গাপুরের চায়না খাতুন জ্বর, সর্দি ও কাশি, সাথে মাথা যন্ত্রনা নিয়ে আমার কাছে আসেন। তাদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে সুস্থতা প্রদানে সাহায্য করেছি।
আসমানখালীর প্রত্যন্ত গ্রাম বন্দরভিটার গ্রাম্যচিকিৎসক হাসিবুল হক বলেন, সালমা খাতুন নামের একজন রোগী গায়ে জ্বর নিয়ে সারাদিন চুয়াডাঙ্গা সদরে ঘুরাঘুরির পর আমার কাছে এলে করোনা ভয়কে উপেক্ষা করে তার চিকিৎসাসেবা প্রদান করি।
বেলগাছী গ্রামের তরূণ গ্রাম্যচিকিৎসক তিতাস আলী জানান, বেলগাছি গ্রামের ব্যাংকার মাহফুজ মোল্লা ঢাকায় চাকরি করেন। তিনি সর্দি-জ্বর ও কাশিতে আক্রান্ত হলে ঢাকার আইসিডিয়ারে করোনা পরীক্ষা করেন। পরীক্ষায় ফলাফল নেগেটিভ হলেও ঢাকায় কোথাও চিকিৎসাসেবা পাননি। পরে বাধ্য হয়ে তিনি নিজ গ্রামে ফেরেন। গ্রামে ফিরে আমার নিকট চিকিৎসাসেবা নিয়ে ভালো হয়েছেন।
কালিদাসপুরের পারকুলা গ্রামের গ্রাম্যচিকিৎসক লিয়াকত আলী জানান, করোনাকালীন গ্রামে চিকিৎসাসেবায় জীবনবাজি রেখে আমরা চিকিৎসাসেবা দিয়ে এলেও এই গ্রাম্যচিকিৎসকরা সবচে অবহেলিত। লকডাউনে তাদের চরম দুরাবস্থায়ও সরকারি প্রণোদনা নিয়ে কেউ পাশে দাঁড়ায়নি।
এরশাদপুর গ্রামের গ্রাম্যচিকিৎসক জহুরুল ইসলাম ওল্টু জানান, রাত-বিরাতে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের ডাকে আমরা ছুটে যায়। তাদের সাধ্যমতো চিকিৎসা দিয়ে থাকি। প্রয়োজনে জটিল রোগীদের বিভিন্ন নামিদামি চিকিৎসক কিংবা হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করিয়ে দিই। অথচ আমাদের দুর্দিনে কোনো সহযোগিতার হাত কেউ প্রসারিত করেনি।
মানিকনগর পাঁচলিয়া গ্রামের গ্রাম্যচিকিৎসক রফিকুল ইসলাম বলেন, আলমডাঙ্গা উপজেলায় প্রায় ১ হাজার গ্রাম্যচিকিৎসক রয়েছেন। এই করোনাভাইরাস সংক্রমণকালে গ্রাম্যচিকিৎসকরাই মূলত অধিকাংশ রোগীদের ভরসাস্থলে পরিণত হয়েছেন। আসাননগরের গ্রাম্যচিকিৎসক নজীর উদ্দীনসহ বেশ কয়েকজন গ্রাম্যচিকিৎসক ইতোমধ্যেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তারপরও সাধারণ রোগীদের চিকিৎসায় তারা কখনও পিছুপা হয়নি।
পূর্ববর্তী পোস্ট
পরবর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ