স্টাফ রিপোর্টার: সরকারঘোষিত ১৪ দিনব্যাপী কঠোর বিধিনিষেধের গতকাল মঙ্গলবার ছিলো ৬ষ্ঠ দিন। তবে দিন যতোই গড়াচ্ছে, ততোই সড়কে বাড়ছে মানুষের ভিড়। বিধিনিষেধ অমান্য করে খুলছে জরুরি পরিষেবা ছাড়া অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও। তবে করোনার সংক্রমণ রোধকল্পে কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে মাঠে রয়েছেন পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনী ও বিজিবির সদস্যরা। বিধিনিষেধ কোথাও ঢিলেঢালা, কোথাও ছিলো কঠোর। ষষ্ঠ দিনে সড়কগুলোতে মানুষের উপস্থিতি কিছুটা বেড়েছে। গত পাঁচ দিনের তুলনায় গতকাল সড়কে কর্মজীবী মানুষের সংখ্যা বেশি দেখা গেছে। বিধিনিষেধকে তোয়াক্কা না করে অবাধে চলাফেরা করছে মানুষ। মানা হচ্ছে না কোনো স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি টের পেলে যে যার মতো সরে পড়ছেন। মাস্ক না পরে রিকশা, মোটরসাইকেল চালাতে দেখা গেছে অনেককে। নিম্ন আয়ের মানুষ ও ছোট ব্যবসায়ীরা বলছেন, টানা লকডাউনের মধ্যে আর্থিক সংকটে পড়ে তাদের এখন আর কোনো উপায় নেই। অনেকে জরুরি প্রয়োজন বের হলেও কেউ কেউ নানা অজুহাতে বের হচ্ছেন।
পুলিশের তরফে বলা হচ্ছে, যৌক্তিক কারণ ছাড়া বের হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। পুলিশ সকাল থেকেই দায়িত্ব পালন করছে। রাস্তায় চলাচল করা অধিকাংশ যানবাহন আটকে গাড়ির কাগজপত্র ও বের হওয়ার কারণ জানতে চাওয়া হচ্ছে। যারা অকারণে বের হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধেই মামলা দেয়া হচ্ছে। মানুষকে সচেতন করতে বিভিন্ন এলাকায় চলছে মাইকিং। এরপরও স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে জটলা হচ্ছে অলিগলি আর বাজারে। গত সোমবার দেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ও মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে। কিন্তু রাস্তায় বের হওয়া মানুষের মধ্যে সচেতনতা সেভাবে নেই।
চুয়াডাঙ্গায় বিধিনিষেধ মানতে সাধারণ মানুষের উদাসীনতা বাড়ছেই। যদিও গত কয়েকদিন থেকে করোনা সংক্রমনের হার বেশি এ জেলায়। গতকালও জেলার বিভিন্ন স্থানে নিয়ম ভঙ্গকারীদের জরিমানাসহ বিভিন্ন শাস্তি পেতে হয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালতে। লকডাউন কার্যকরে মাঠে রয়েছেন ১৩ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, র্যাব ও আনসার সদস্যরা। গতকালও জেলার বিভিন্ন স্থানে টহল দিতে দেখা গেছে তাদের। জেলার প্রবেশপথগুলোতে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালানো হয়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া অযৌক্তিক কারণে বের হলে গ্রেফতার ও জরিমানা করছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল সকাল থেকে রাত পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৫২ জনকে ৪৮ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়া ২জনকে ১ মাস করে বিনাশ্রম কারাদ-ও প্রদান করা হয়েছে। অপরদিকে, জরুরি পরিষেবায় নিয়োজিতরা পরিচয়পত্র দেখানো ও প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি তল্লাশির সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানালে তারা তাদের গন্তব্যে বা কর্মস্থলে যেতে পারছেন। চুয়াডাঙ্গা শহীদ হাসান চত্বরে গতকাল কঠোর অবস্থানে ছিলো প্রশাসন। সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসেন। দপুর থেকে রাত পর্যন্ত দামুড়হুদা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে অভিযান চালান উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুদীপ্ত কুমার সিংহ। অভিযানে চারুলিয়া গ্রামে বৃদ্ধ, মধ্য বয়সী, যুবকসহ ৩০জন মানুষ চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দেয়ায় ৭ জনকে আর্থিক জরিমানা করা হয়। ১টি মোটরসাইকেল ও একটি অটো জব্দ করে রাখা হয়েছে কার্পাসডাঙ্গা পুলিশ ফাঁড়িতে।
এদিকে, জয়রামপুর রেলওয়ে স্টেশনে মাদক সেবন করায় ২ জনকে একমাস করে কারাদ- দেয়া হয় এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকায় ৩ জনকে জরিমানা করা হয়। জুড়ানপুর ও কার্পাসডাঙ্গা বাজারে ২টি দোকানে ৬-৭ জন বসে আড্ডা দেয়ায় তাদের জরিমানা করা হয়। এছাড়া কোনো কাজ ছাড়া বের হওয়ায় ৭ জনকে জরিমানা করা হয়। সর্বমোট ২৭ জনকে ২৭ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে সহযোগিতা করেন সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা।
আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে, আলমডাঙ্গায় সরকারি বিধি নিষেধ অমান্য করে একজায়গায় সমাবেত হওয়ার অপরাধে ২ জনকে ১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। গতকাল আলমডাঙ্গা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হুমায়ন কবীর ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে এ জরিমানা করেন।
জানাগেছে, উপজেলার ভোলারদাড়ি গ্রামের মৃত হাসিবুল ইসলামের ছেলে মজিবুল হক (২৫) ও ভোলারদাইড় গ্রামে কাজ করতে আসা শ্রমিক চুয়াডাঙ্গা কোর্টপাড়ার হাসেম আলীর ছেলে বাবলুর রহমান (২০) সরকারি বিধি নিষেধ অমান্য করে একটি বাড়িতে সমবেত হয়। এসময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঘোলদাড়ি ক্যাম্প ইনচার্জ এসআই সিদ্ধার্থ মন্ডল সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে অভিযান চালিয়ে তাদের ২জনকে আটক করে। আটকের পর উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট হুমায়ন কবীরের নিকট সংবাদ প্রদান করেন। পরে জেলা সহকারী কমিশনার ভূমি এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট হুমায়ন কবীর ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ১৮৬০ সালের ১৮৮ ধারা মোতাবেক ২জনকে ৫শ টাকা করে ১ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
কার্পাসডাঙ্গা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। ভ্রাম্যমাণ আদালতের নেতৃত্বে ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুদীপ্ত কুমার সিংহ। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে ১৮৬০ এর ২৬৯ ধারায় এবং সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এর ৬৬ ধারায় ৭ মামলায় বিভিন্ন ব্যক্তিকে সর্বমোট ১৫ হাজার ১শত টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। ভ্রাম্যমাণ আদালতের সহযোগিতায় ছিলেন কার্পাসডাঙ্গা ফাঁড়ির আইসি এসআই আতিকুর রহমান জুয়েল, পুলিশ সদস্যরা ও বিজিবি সদস্যরা।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় দফায় উদ্বেগজনক হারে সংক্রমণ বৃদ্ধিতে মেহেরপুর জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রেখেছে। মাঠে নেমেছে র্যাব, সেনা বাহিনী ও বিজিবি সদস্যরা।
করোনা ভাইরাস সংক্রমন প্রতিরোধে সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউনের ৬ষ্ঠ দিনেও মেহেরপুরে অভিযান চালানো হয়েছে। এদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা মেহেরপুর শহরের বিভিন্ন এলাকায় সচেতনতামূলক অভিযান চালান। বাংলাদেশ সেনানিবাস যশোরের ২৭ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারির ক্যাপ্টেনন এম রওশনের নেতৃত্বে শহরের কোট এলাকা থেকে শুরু করে শহরের প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে ব্যাপক সচেতনতামূলক অভিযান চালানো হয়। এ সময় অযথা যারা বাইরে ঘোরাফেরা করছিলেন তাদেরকে সতর্ক করে দেয়া হয়। একই সাথে অযথা বাইরে না আসার জন্য সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সকলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
এদিন সকাল দিকে মেহেরপুর পুলিশের একটি দল শহরের হোটেল বাজার মোড় এবং পুরাতন বাস স্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন পয়েন্টে সচেতনতামূলক প্রচারণা ও মাস্ক বিতরণ করা হয়। এ সময় যে সব পথচারী মাস্ক পরেননি তাদেরকে মাস্ক পরতে ও সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখাসহ সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেন থানা পুলিশের প্রচারণা টিম। এ ছাড়াও মাস্কবিহীন পথচারীদেরকে পুলিশের পক্ষ থেকে মাস্ক পরিয়ে দেয়া হয়।
এদিকে সচেতনতামূলক প্রচারণাকালে মেহেরপুরে পুলিশ সদস্যরা বলেন, বর্তমান সময়ে হঠাৎ করোনার প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। করোনার সংক্রমণ রোধে আমাদের এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।