পাশের হার ও জিপিএ-৫ দুটোই বেড়েছে : পাশের হার ৮২.৮৭% : জিপিএ-৫ এক লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৮
স্টাফ রিপোর্টার: চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে গতকাল। কিন্তু ফল প্রকাশের পর ঢোল-বাদ্য বাজিয়ে আনন্দ নৃত্যের সেই চিরচেনা রূপ দেখা যায়নি এবার স্কুলে স্কুলে। স্কুল প্রাঙ্গণে ছিলো না কোনো কোলাহল, উচ্ছ্বাস-উল্লাস। সহপাঠী, বাবা-মা, ভাইবোন এমনকি শ্রদ্ধেয় শিক্ষককে জড়িয়ে ধরার কোনো দৃশ্যও ছিলো না। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে এবার শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেই ফল জেনে নিয়েছে। আর ভালো ফল পেয়ে ঘরে ঘরে আনন্দে ভেসেছে তারা। এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাশের গড় হার ৮২ দশমিক ৮৭ শতাংশ। আর গত বছর এই হার ছিলো ৮২ দশমিক ২০ শতাংশ। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৮ জন। গত বছর ছিলো ১ লাখ ৫ হাজার ৫৯৪ জন। ফলে এবার পাশের হার ও জিপিএ-৫ দুটোই বেড়েছে। রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফল প্রকাশের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। এ সময় শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেনসহ বোর্ড চেয়ারম্যানরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন। এরপর সকাল সাড়ে ১১টায় ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে সংবাদ সম্মেলনে ফলাফলের বিস্তারিত তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী। প্রসঙ্গত, এ বছরের এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয় ৩ ফেব্রুয়ারি, শেষ হয় ২৭ ফেব্রুয়ারি। ২৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ মার্চ ব্যবহারিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেয় ২০ লাখ ৪০ হাজার ২৮ জন শিক্ষার্থী। এরমধ্যে পাশ করেছে ১৬ লাখ ৯০ হাজার ৫২৩ জন শিক্ষার্থী। পাশের হার ৮২ দশমিক ৮৭ শতাংশ। শতভাগ পাশ করেছে ৩ হাজার ২৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। আর একজনও পাশ করতে পারেনি এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১০৪টি। ৯টি সাধারণ বোর্ডে পাশের হার ৮৩.৭৫ শতাংশ। মাদরাসা বোর্ডে পাশের হার ৮২.৫১ শতাংশ। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে পাশের হার ৭২.৭০ শতাংশ। তবে পাশের হারে সবচেয়ে এগিয়ে রাজশাহী বোর্ড আর সবচেয়ে পিছিয়ে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। রাজশাহীর পাশের হার ৯০.৩৭ শতাংশ। এছাড়া গত বছরের তুলনায় এবার চট্টগ্রাম ও সিলেট বোর্ড বেশ ভালো করেছে।
ঢাকা বোর্ডে পাশের হার ৮২.৩৪ শতাংশ ও জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৬ হাজার ৪৭ জন; রাজশাহী বোর্ডে পাশের হার ৯০.৩৭ শতাংশ ও জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৬ হাজার ১৬৭ জন; কুমিল্লা বোর্ডে পাশের হার ৮৫.২২ শতাংশ ও জিপিএ-৫ পেয়েছে ১০ হাজার ২৪৫ জন; যশোর বোর্ডে পাশের হার ৮৭.৩১ শতাংশ ও জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৩ হাজার ৭৬৪ জন; চট্টগ্রাম বোর্ডে পাশের হার ৮৪.৭৫ শতাংশ ও জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯ হাজার আট জন; বরিশাল বোর্ডে পাশের হার ৭৯.৭০ শতাংশ ও জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ হাজার ৪৮৩ জন; সিলেট বোর্ডে পাশের হার ৭৮.৭৯ শতাংশ ও জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ হাজার ২৬৩ জন; দিনাজপুর বোর্ডে পাশের হার ৮২.৭৩ শতাংশ ও জিপিএ-৫ পেয়েছে ১২ হাজার ৮৬ জন; ময়মনসিংহ বোর্ডে পাশের হার ৮০.১৩ শতাংশ ও জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭ হাজার ৪৩৪ জন, মাদরাসা বোর্ডে পাশের হার ৮২.৫১ শতাংশ ও জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭ হাজার ৫১৬ জন এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে পাশের হার ৭২.৭০ শতাংশ ও জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ হাজার ৮৮৫ জন।
এবার বিদেশের ৯টি কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ৩৩৬ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাশ করেছে ৩১৮ জন। পাশের হার ৯৪.৬৪ শতাংশ।
প্রতিবছর সকাল থেকেই শিক্ষার্থীরা স্কুল আঙিনায় জমায়েত হতো। মোবাইলে ফল জানলেও স্কুলে গিয়েই সবাই নিজের ফলটি জেনে আনন্দ পেতো। আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতেন বাবা-মা, সহপাঠী ও শিক্ষকদের সঙ্গে। ঢোলের তালে নেচে গেয়ে ওঠার সেই আনন্দ যেন আজ এক একটি ছবি। মিষ্টির দোকানগুলোতেও নেই ভিড়। প্রতিবছর রেওয়াজ অনুযায়ী শিক্ষামন্ত্রী বোর্ড চেয়ারম্যানদের সঙ্গে নিয়ে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ফলাফলের অনুলিপি হস্তান্তর করেন। তবে এবার ছিলো ব্যতিক্রম। মোবাইল ফোনই ছিলো ফল পাওয়ার একমাত্র মাধ্যম। করোনার কারণে এবার আগে থেকেই রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ ছিলো শিক্ষার্থীদের। এছাড়া যারা রেজিস্ট্রেশন করেনি তারাও মোবাইলে এসএমএস এবং সংশ্লিষ্ট বোর্ডের ওয়েবসাইটে গিয়ে ফল সংগ্রহ করতে পেরেছে।
শিক্ষামন্ত্রীও করোনাকালে ফল প্রকাশের চিরচেনা চরিত্র বদলের কথা তুলে ধরে বলেন, বিগত ১০ বছর পরীক্ষা শেষের ৬০ দিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু এবার বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯-এর কারণে ৬০ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশ সম্ভব হয়নি।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, করোনার কারণে কতদিন ক্লাস বন্ধ থাকবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে যখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে তখন ক্ষতি কীভাবে পোষানো যায় সে চেষ্টা আমাদের থাকবে।