স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল আযহা উপলক্ষে বরাদ্দকৃত ভিজিএফের চাল বিতরণকাজে অনিয়মের অভিযোগ এবং এমপির বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে সংবাদ সম্মেলনের প্রতিবাদ বিবৃতি দিয়েছে পৌর আওয়ামী লীগ। গতকাল মঙ্গলবার রাতে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি জহুরুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার ও সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন হেলা স্বাক্ষরিত প্রতিবাদ বিবৃতি মাথাভাঙ্গা দফতরে পাঠানো হয়। চুয়াডাঙ্গা পৌরসভায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত দাবি করে বিবৃতিতে ওই সংবাদ সম্মেলনের প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানিয়েছে পৌর আওয়ামী লীগ।
কম্পিউটার টাইপকৃত প্রতিবাদ বিবৃতিতে চুয়াডাঙ্গা পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি জহুরুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন হেলা যৌথভাবে বলেছেন, আসন্ন ঈদুল আযহা উপলক্ষে সরকারের বরাদ্দকৃত ভিজিএফের চাল বিতরণে সহযোগিতার জন্য গত ২২ জুলাই চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্যের প্রতিনিধি হিসেবে এবিএম জহুরুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার ও আলাউদ্দিন হেলার নাম জেলা প্রশাসক বরাবর প্রেরণ করা হয়। পরদিন ২৩ জুলাই এমপির প্রতিনিধি হিসেবে ওই দুইজনের নাম চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র বরাবর প্রেরণ করেন জেলা প্রশাসক। দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধিরা পৌর মেয়র ও সচিবের সাথে ভিজিএফের চাল বন্টনের বিষয়ে আলোচনা করেন। তাদেরকে এ বিষয়ে পরবর্তীতে জানানোর কথা বলেন মেয়র ও সচিব। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২৭ জুলাই মেয়র স্বাক্ষরিত ভিজিএফের চাল বন্টননামা চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্যর প্রতিনিধির কাছে পাঠানো হয়। তবে ওই পত্রে চাল বিতরণের সময় উল্লেখ করা ছিলো না।
প্রতিবাদ বিবৃতিতে তারা আরও জানিয়েছেন, বিধি মোতাবেক ভিজিএফের চাল বিতরণ কমিটির সকল সদস্যর সাথে আলোচনার মাধ্যমে বিতরণের নির্দেশ থাকলেও তা মানা হয়নি। বিতরণ সংক্রান্ত কোনো মিটিং ছাড়াই একক সিদ্ধান্তে ভিজিএফের চাল বিতরণের কাজ শুরু করেন পৌর মেয়র ও সচিব। গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্যের প্রতিনিধি আলাউদ্দিন হেলা পৌরসভায় যান। সেখানে সামাজিক দূরুত্ব বজায় রেখে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চাল বিতরণের কথা থাকলেও মানা হয়নি কিছুই। বিতরণ কমিটির মিটিং ছাড়াই চাল বিতরণ এবং ওজনে কম দেয়ার কারণে তাৎক্ষণিকভাবে বিতরণ কাজ বন্ধ করতে বলেন তিনি। ওইসময় উপস্থিত ছিলেন পৌরসভার ১, ৪ ও ৯ নং ওয়ার্ডের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকবৃন্দ।
চুয়াডাঙ্গা পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন হেলা বলেছেন, এরই একপর্যায়ে মেয়রের ভাড়াটিয়া মাস্তানরা ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাসুদ হোসেন জোয়ার্দ্দার অলককে গালিগালাজ ও দুর্ব্যবহার এবং ১নং ওয়ার্ড সভাপতি আব্দুল মতিনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। তার মুখ থেকে মাস্ক টেনে ছিড়ে নেই এবং ধাক্কা দিয়ে গাড়ির গ্যারেজের মধ্যে আটকে রাখে। এসময় পৌরসভার ২য় তলায় থাকাকালীন আমাকেও (আলাউদ্দিন হেলা) অকথ্য ভাষায় গালাগালিজ এবং প্রাণনাশের হুমকি দেয় তারা। এদিকে, চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য পাঁচমাইল এলাকায় মিটিং শেষে ফেরার পর বিষয়টি জানতে পেরে দ্রুত পৌরসভায় যান তিনি। এসময় ভাড়াটিয়া মাস্তান কর্তৃক আটকে রাখা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে উদ্ধার করেন তিনি।
বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, দুই বছর পূর্বে ঈদুল আযহার ৪দিন আগে রাতের আধারে পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপু ত্রাণের চাল পাচারের সময় স্থানীয় জনগণ ট্রাকভর্তি চাল আটক করে। ওই ট্রাকভর্তি চাল তিনদিন চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় আটকও থাকে। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে ক্ষমা চেয়ে চাল চুরির অপরাধ থেকে রক্ষা পান মেয়র।
বর্তমানে করোনা মহামারী সময়ে সরকার হাজার হাজার কেজি ত্রাণের চাল বরাদ্দ দেয়। ওই বরাদ্দপ্রাপ্ত চালের মধ্য থেকে এক কেজি চালও দিনের আলোয় বিতরণ করা হয়নি। সামান্য কিছু চাল রাতের আধারে বিতরণ করা হলেও বেশিরভাগই আত্মসাৎ করা হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় এবারের বরাদ্দপ্রাপ্ত ভিজিএফের চাল আত্মসাতের খেলায় মত্ত হয়েছে। পৌরবাসীসহ পৌর আওয়ামী লীগ মনে করেন এই অদক্ষ্য, অযোগ্য, চাল চোর ও দুর্নীতিবাজ মেয়রের হাত থেকে পৌরবাসীসহ পৌরসভাকে রক্ষা করা প্রয়োজন। এছাড়া, চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে সাংবাদিক সম্মেলনে পৌর মেয়র যে অভিযোগ করেছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। চুয়াডাঙ্গা পৌরবাসীর পক্ষে এর প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানিয়েছে পৌর আওয়ামী লীগ।