এবার ঈদে বাঁধভাঙ্গা উল্লাস আলমডাঙ্গা পৌর কর্মচারী পরিবারে

বকেয়া বেতনসহ এক মাসের অগ্রিম বেতন ও চিত্তবিনোদন ভাতা পেয়ে

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গা পৌরসভার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাঝে এবার ঈদে আনন্দের বাঁধভাঙ্গা জোয়ার। তাদের পারিবারিক ভুবনে “আজি কী আনন্দ আকাশে বাতাসে!” পৌরসভার যে কর্মকর্তা কর্মচারীরা মাসের পর মাস, বছরের পর বছর বেতন পাননি: শূন্যহাতে ঈদ যাপন করতে হয়েছে বছরের পর বছর, বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেও যে সমস্যার সমাধান মেলেনি, সহ্য করতে হয়েছে নানা গঞ্জনা ও অপমান, ঘরে পরের ঊন্নাষিক আচরণ: প্রিয় সন্তানদের যারপনাই নিরানন্দ মুখ দর্শন ছিল নিত্য বছরের অভ্যাস। তারা এখন বকেয়া সব বেতন, উৎসব ভাতা পকেটস্থ করেই পরিবারে ফিরেছেন। শুধু কী তাই? মোটেও না, ঈদ উপলক্ষে অগ্রিম এক মাসের বেতন ও চিত্তবিনোদন ভাতাও দেয়া হয়েছে আলমডাঙ্গা পৌরসভার কর্মকর্তা কর্মচারীদের। দেশে এমন ঘটনা শুধুমাত্র আলমডাঙ্গা পৌরসভায় ঘটেছে। পূর্বাপর এমন উদাহরণ দেশে আর একটিও নেই। এই অঘটনঘটন পটিয়সী নায়ক হলেন আলমডাঙ্গা পৌর প্রশাসক ও আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মেহেদী ইসলাম। গত ২০ মার্চ সমূদয় বকেয়া বেতনসহ উৎসব ভাতা ও অগ্রিম আরও এক মাসের বেতন দিয়েছেন পৌর প্রশাসক শেখ মেহেদী ইসলাম। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে। অনেকে পৌর প্রশাসক শেখ মেহেদী ইসলামকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন। কেউ কেউ জানাচ্ছেন ধন্যবাদ। বাংলাদেশ পৌরসভা কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে আলমডাঙ্গা পৌর প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মেহেদী ইসলামকে ধন্যবাদসহ প্রশংসা করে ফেসবুকে স্টাটাস দিয়েছে। অনুরূপে, চাঁদপুরসহ দেশের বেশ কিছু পৌরসভার কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে শেখ মেহেদী ইসলামকে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে। আলমডাঙ্গা পৌরসভার কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নাসিম উদ্দীন বলেন, “একদিকে যেমন তিনি (শেখ মেহেদী ইসলাম) কাজ কর্মের গতি ফিরিয়ে এনেছেন, তেমন আমাদের প্রতি সর্বাধিক দরদ দেখিয়েছেন। আমাদের বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধ করেছেন। এমনকি অগ্রিম বেতন দিয়ে সারা দেশে উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন।” সংগঠনটির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল জব্বার লিপু বলেন, “চাকরি জীবনে এই প্রথম ঈদের প্রকৃত আনন্দ খুঁজে পেয়েছি আমরা। আমাদের অকল্পনীয় কাজ করে দিয়েছেন পৌর প্রশাসক। অসংখ্য ধন্যবাদ স্যারকে। দেশের অন্যান্য পৌর কর্মচারীও যদি এমন সুবিধা পেতো! তাহলে সারা দেশে খুশির সংবাদ ছড়িয়ে যেতো। শুধু আলমডাঙ্গা পৌরসভার কর্মচারীরা না, সারা দেশের পৌর কর্মচারীরা স্যারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন। স্যার সারা দেশে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছেন।” ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর শেখ আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। একই সাথে তিনি আলমডাঙ্গা ১ম শ্রেণির পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। যোগদান করার পর থেকেই দাপ্তরিক কাজের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের জনকল্যাণমুখী কার্যক্রম বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি। লালসা ও সমস্ত ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে তিনি এতদাঞ্চলের সবচে বৃহতম পশুহাট ওপেন নিলাম প্রক্রিয়া দৃঢ়ভাবে শুরু করেছিলেন। এ বিষয়টি পৌরবাসীর মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। তাছাড়া, শেখ মেহেদী ইসলাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে যোগদানের পর তিনি এলাকার উন্নয়নে অনেক প্রশংসনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। দীর্ঘ দিনের সংস্কার বঞ্চিত সড়কগুলি তিনি দ্রুত টেন্ডারের ব্যবস্থা করেন। উপজেলা পরিষদ চত্বরের ভেতরের চলাচলের অনুপযোগী দীর্ঘদিনের অবহেলিত সড়ক পূণর্নিমাণ করেন। নির্ধারিত সরকারি দায়িত্বের পাশাপাশি তিনি অনেক ক্ষেত্রে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। তার আন্তরিক প্রচেষ্টায় তিন দিনের মফস্বলের বই মেলা, নাগরিক উন্নয়ন কমিটির সহযোগিতায় চার দিনের বইমেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসব হয়ে উঠেছিল মিলমেলা। স্থানীয় লেখক সাহিত্যিকদের স্বর্গীয় উদ্যান। বিস্তৃত পরিসরে পিঠামেলা ছিল তার ঐতিহ্যপ্রিয়তার স্বারক। ইতিহাস ঐতিহ্যের প্রতি প্রবল অনুরাগের পরিচায়ক। তার কাছে আসা সেবা প্রার্থীদের তিনি সময় দেওয়ার পাশাপাশি নিজ দপ্তরকে দালালমুক্ত করতে উদ্যোগ নিয়েছেন। ফলে উপজেলা চত্বরে দালালদের দৃশ্যমান দৌরাত্ম কমেছে। অতি সম্প্রতি তিনি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ শিক্ষক কর্মচারীদের প্রতিষ্ঠান থেকে ২৫ ভাগ উৎসব ভাতা দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। ঈদ দ্দুয়ারে কড়া নাড়ছে। অথচ শিক্ষকদের তিন মাসের বেতন ও উৎসবভাতা এখনও দেওয়া হয়নি। হয়তো শূন্যহাতেই লাখ লাখ শিক্ষক পরিবার শূন্যহাতে ঈদ করবে। হায়রে মানুষ গড়ার কারিগর! এমন পরিস্থিতিতে, ২৫ ভাগ উৎসব ভাতার নির্দেশনা পেয়ে আলমডাঙ্গার শিক্ষকসমাজ যারপরনাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মেহেদী ইসলামের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন। সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের আকাঙ্খার সাথে সঙ্গতি বিধান করে তিনি এ নানা উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে চলেছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মেহেদী ইসলাম বলেন, “সময়ের সাথে সাথে পৌরসভার সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফলে পৌরসভার সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বকেয়া পৌরকর, ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন ও হাট বাজার ইজারলব্ধ আয় যথাযথভাবে ব্যবহার করে কর্মচারীদের পুরোনো বকেয়া পরিশোধ করা সম্ভব হয়েছে। এভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারলে আলমডাঙ্গা পৌরসভার কর্মচারীদের সকল বকেয়া পরিশোধ করে কাজের উদ্দীপনা আরো বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।” তিনি আরও বলেন,”সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন কর্মচারি হিসেবে আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব আমি সর্বদা নিয়ম মেনে পালন করে যাচ্ছি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্দেশ ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আর্দশকে বুকে ধারণ করে কাজ করছি। অন্যায়কে প্রশ্রয় দিয়ে কোন কাজ করবো না। আমাদের কাজে যাতে গণ আকাঙ্খা প্রতিফলিত হয়, সে চেষ্টা অব্যাহত রাখবো।”

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More