এক টাকার চা আর এক টাকার পানে মেটাচ্ছে তৃপ্তি 

দামুড়হুদার বোয়ালমারি মহির উদ্দিনের চায়ের খ্যাতি ছড়িয়েছে এলাকাজুড়ে

জহির রায়হান সোহাগ: গ্রামীণ সড়কের এক পাশে ছোট দোকান। পাশেই জ্বলছে চা তৈরির চুলা। দোকানে সাঁজানো পানের ডালা ও কিছু শুকনো খাবার। সামনে রয়েছে কয়েকটি বাঁশের মাচা। সেখানে বসে চা পান করছেন বেশ কয়েকজন লোক। আর সেই চা ও পান বিক্রি হচ্ছে এক টাকায়। এক টাকায় চা ও এক টাকায় পান? হ্যাঁ, শুনতে অবাক লাগলেও দীর্ঘ ৩৩ বছর ধরে এক টাকায় চা ও এক টাকায় পান বিক্রি করে আসছেন চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার বোয়ালমারি গ্রামের দোকানি মহির উদ্দিন। বর্তমান বাজারে চা এখন পাঁচ টাকার কমে বিক্রি হয় না। পানের খিলির দামও অন্তত চার টাকা। কালক্রমে চা পাতা ও চিনির দাম বাড়লেও বাড়েনি তার চায়ের দাম। মূলত শখের বসেই মানুষকে এক টাকায় চা ও এক টাকায় পান খাওয়ান তিনি। এত কম দামে চা ও পান বিক্রির কারণে তার দোকানটিও নতুন পরিচিতি পেয়েছে ‘এক টাকার মোড়’ নামে। সেই ১৯৯০ সাল থেকে এক টাকায় চা ও এক টাকায় পান বিক্রি করে আসছেন মহির উদ্দিন। শুধু তার গ্রামের মানুষ নয়, সকাল-বিকেল কম দামে সুস্বাদু চা-পান খেতে দূর-দূরান্ত থেকে শত শত মানুষ ভীড় করছেন তার দোকানে। দাম কম হলেও তার দোকানের চা ও পান খুবই সুস্বাদু বলে জানান ক্রেতারা। আর তাতেই মেটাচ্ছে তৃপ্তি।

মহির উদ্দিনের দোকানে চা খেতে আসেন মেহেরপুরের জমির উদ্দিন। তিনি বলেন, আমি ফেসবুকে দেখে এখানে কয়েকজন বন্ধুকে সাথে নিয়ে চা-পান খেতে এসেছি। প্রথমে বিশ্বাস হয়নি। এসে দেখি সত্যি সত্যিই এক টাকায় চা আর এক টাকায় পান বিক্রি হচ্ছে। এখানে আমাদের মতো অনেকেই এসেছেন। হেমায়েতপুর গ্রাম থেকে বন্ধুদের নিয়ে চা খেতে আসা আনিসুর রহমান জানান, বর্তমান বাজারে চা পাতা ও চিনির যে দাম তাতে এক টাকায় চা বিক্রি করে লোকসান ছাড়া আর কিছুই হবে না। কিন্তু দীর্ঘ ৩৩ বছর ধরে মহির উদ্দিন যে কাজ করছেন তা অবাক করার মতো। তাই বিষয়টি যাচাই করতে ও চা-পান খেতে তার দোকানে এসেছি।

সারাজীবন একই দামেই চা-পান বিক্রি করবেন বলে জানান মহির উদ্দিন। তিনি বলেন, প্রতিদিন ফজরের নামাজ পড়ে দোকান খোলেন তিনি। সকাল ৮টা পর্যন্ত চলে বেচাবিক্রি। পরে নিজের কৃষিজমিতে কাজ করতে যান তিনি। বিকেল হলে আবারও শুরু হয় দোকানের কার্যক্রম। রাত ১০ টা পর্যন্ত চলে বেচাবিক্রি। প্রতিদিন চা-পান বিক্রি করে ৩০০ টাকার মতো আয় হয় তার। কিছু আয় হয় কৃষিজমি থেকেও। আর তাতেই চলে তার সংসার। দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। ছেলে মহাজনপুর কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। এখন স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়েই তার সংসার। তিনি আরও বলেন, ব্যবসায় মুনাফা করা তার উদ্দেশ্যে নয়। গ্রামের খেটে খাওয়া স্বল্প আয়ের মানুষ যেন সকাল-বিকেল একসাথে বসে চা-পান খেতে খেতে গল্পগুজব করতে পারেন সেই কারণেই এত কম দামে চা-পান বিক্রি করেন তিনি। এতে গ্রামের মানুষের মধ্যে যেমন বেড়েছে সম্প্রীতি, সফল হয়েছে তার উদ্দেশ্য। ইতোমধ্যে মহির উদ্দিনের দোকানের এক টাকার চা ও এক টাকার পানের খ্যাতি ছড়িয়েছে এলাকাজুড়ে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More