আলমডাঙ্গায় ভিজিডির কার্ডের হিস্যা চাওয়ায় মহিলা সদস্যকে মারলেন ইউপি সদস্য শিপন

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গার কালিদাসপুর ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা সদস্যকে মারধর করা হয়েছে। সাধারণ ওয়ার্ড সদস্য মাসুদ রানা শিপন চেয়ার তুলে মারধর করেন বলে থানায় অভিযোগ করেছেন মহিলা সদস্য সাবিয়া খাতুন। সোমবার দুপুরে তিনি আলমডাঙ্গা থানায় লিখিতভাবে অভিযোগ করেন। ভিজিডির কার্ড বিভাজনের সময় ন্যায্য হিস্যা চাওয়ার কারণে মহিলা সদস্যকে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। থানা পুলিশ বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে।

থানা পুলিশ ও এলাকা সূত্রে জানা গেছে, রোববার দুপুরে আলমডাঙ্গার কালিদাসপুর ইউনিয়ন পরিষদে ভিজিডির কার্ড বিভাজনের মিটিং চলছিলো। এ সময় ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডের মহিলা সংরক্ষিত সদস্য সাবিয়া খাতুন তার ন্যায্য হিস্যা দাবি করেন। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ৪নং ওয়ার্ডের সদস্য মাসুদ রানা শিপন চেয়ার তুলে সাবিয়া খাতুনের গায়ে মারেন। চেয়ারটি মাথায় না লেগে সাবিয়ার হাতে লাগে। এ সময় মাসুদ রানা শিপন অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন বলেও সাবিয়ার অভিযোগ। পরে কতিপয় ব্যক্তিকে ডেকে আরেক দফা গালাগালি দেন বলে অভিযোগ সাবিয়া খাতুনের। এ বিষয়ে সোমবার দুপুরে তিনি আলমডাঙ্গা থানায় লিখিতভাবে অভিযোগ করেন। এ ব্যাপারে জানতে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য মাসুদ রানা শিপনকে কয়েকবার মোবাইলে কল দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান আশাদুল হক মিকা জানান, ‘আমি রোববারের মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলাম না। শুনেছি মিটিং চলাকালে ওয়ার্ড মেম্বার মাসুদ রানা শিপন মহিলা মেম্বারকে গালমন্দ করেছেন। ধাক্কাধাক্কি হয়েছে। এক পর্যায়ে চেয়ার তুলে মহিলা মেম্বর সাবিয়াকে মারতেও উদ্যত হন। তারা সবাই ইউপি সদস্য। মহিলারা তিনটি ওয়ার্ডের মেম্বার। তাদেরকে গালমন্দ করা উচিত হয়নি। এতে ইউনিয়ন পরিষদের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়েছে।’ এ ব্যাপারে আলমডাঙ্গা থানার ওসি বিপ্লব কুমার নাথ বলেন, ‘আমরা লিখিতভাবে থানায় অভিযোগ পেয়েছি। সঙ্গে সঙ্গে একজন এসআইকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি অভিযোগ পাওয়ার পরপরই ঘটনাস্থলে গিয়েছেন। আমরা অভিযুক্ত ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

তৃণমূল পর্যায়ের রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। তাদের মধ্যে নেতৃত্বের সব ধরনের গুণাবলীও স্পষ্ট। কিন্তু পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার কারণে কর্মক্ষেত্রে তারা উপেক্ষিত। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ।

পরিষদে নারী-পুরুষ সদস্যদের মধ্যে বৈষম্য প্রকট। তিনটি ওয়ার্ডে বণ্টনের জন্য একজন মহিলা মেম্বার যে সংখ্যক ভিজিডি কার্ড পান, পুরুষ সদস্যরা এক ওয়ার্ডের জন্য পান তার তিন/চার গুন কার্ড। এমনকি গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজেও মহিলা সদস্যদের মতামতও নেয়া হয় না। এমন সমস্যা প্রায় সকল ইউনিয়ন পরিষদে বিদ্যমান।

নারীর ক্ষমতায়ন বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশেই নারীর ক্ষমতায়নকে জাতীয় নীতিনির্ধারণে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে এবং বেশকিছু ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশের নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে। তাত্ত্বিকভাবে ক্ষমতায়নের সূচকগুলো পার করছে একের পর এক। অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন ইমপাওয়ার্ড ইউমেনের কাতারে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে নারীরা পরবর্তী সময়ে তাদের ক্ষমতার ঠিক কতটুকু ব্যবহার করতে পারছেন তা ইউনিয়ন পরিষদে মহিলা সদস্যদের অসহায়ত্ব দেখে বোঝা যায়। এখানে নারীরা তার আইনগত অধিকার ও ক্ষমতার চর্চা করতে পারছে না আদৌ।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More