আলমডাঙ্গায় গ্রেফতার ছাত্রদলের নেতা পিয়ালের বিরুদ্ধে ২৭টি মামলার সব কটিই সাজানো : দাবি পরিবারে

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা থানা-পুলিশের হাতে গ্রেফতার ২৭ মামলার আসামি জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম-সম্পাদক পিয়াল মাহমুদ ওরফে সাদ্দামকে (৩২) নির্দোষ দাবি করেছে তার পরিবার। পিয়ালের পরিবারের পক্ষ থেকে গতকাল বুধবার বেলা ৩টার দিকে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এই দাবি করা হয়।
পিয়াল মাহমুদের মা ফজিলা খাতুনের পক্ষে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন পিয়ালের মেজ বোন রেশমা খাতুন ও স্ত্রী আসমা খাতুন। এ সময় পিয়ালের দুই শিশুসন্তান দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী রোদেলা খাতুন (৮) ও দুই বছর বয়সী আব্রাহাম এবং বড় বোন লিপি খাতুন ও ছোট বোন জেসমিন খাতুন উপস্থিত ছিলেন।
পিয়ালের স্বজনদের দাবি, ২৭টি মামলার মধ্যে ২৪টিই ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ শাসনামলের। ছাত্রদলের রাজনীতি করায় প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে আওয়ামী লীগ এসব মামলা করেছিলো। এর ধারাবাহিকতায় প্রতিপক্ষের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আলমডাঙ্গা থানার ওসি মাসুদুর রহমান ও এসআই সামছুল হক ৮ এপ্রিল একই দিনে সাজানো ঘটনায় নতুন করে তিনটি মামলা দায়ের করেছেন। স্বজনদের দাবি, ‘মিথ্যা ও সাজানো’ মামলায় গ্রেফতার ছাত্রদল নেতা পিয়াল মাহমুদকে অবিলম্বে জামিনে মুক্তি এবং তার বিরুদ্ধে আনা হয়রানিমূলক মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে হবে। এ জন্য তারা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
পিয়ালের মা ফজিলা খাতুন বলেন, ৭ এপ্রিল রাতে পিয়াল আলমডাঙ্গা উপজেলার কুমারী ইউনিয়নের হাড়গাড়ী বিলে মাছ চাষের কাজে নিয়োজিত ছিলেন। সেদিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে আলমডাঙ্গা থানার ওসি মাসুদুর রহমান, এসআই সামছুল হকসহ পুলিশের অন্য সদস্যরা পিয়ালকে বিল থেকে ধরে নিয়ে আসেন। পরে তারা পিয়ালের চোখ ও মুখ বেঁধে আলমডাঙ্গা থানার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়ান। স্বজনদের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে থানা কর্তৃপক্ষ তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। বিলের অন্য লোকজনের কাছ থেকে ফজিলা খাতুন জানতে পারেন, তার ছেলেকে পুলিশ যখন ধরে আনে, তখন তার কাছে মাছ বিক্রির ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা, দুটি অ্যান্ড্রয়েড ফোন, গলায় রুপার চেইন ও হাতে একটি ব্রেসলেট ছিলো।
ফজিলা খাতুনের অভিযোগ, ৮ এপ্রিল সকাল ৯টায় আলমডাঙ্গা থানায় যোগাযোগ করা হলে পুলিশ পিয়ালের বিষয়ে কোনো তথ্য দেয় না এবং সকাল সাড়ে ১০টায় পিয়ালকে প্রায় মুমূর্ষু অবস্থায় আলমডাঙ্গা থানা থেকে আদালতে নেয়া হয়। যার প্রমাণ পিয়ালের শরীরে অসংখ্য জখমের চিহ্ন বিদ্যমান। ফজিলা খাতুন বলেন, ‘বুধবার স্থানীয় পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জানতে পেরেছি যে আলমডাঙ্গা থানার ওসি মাসুদুর রহমান ও এসআই সামছুল হক পরস্পর যোগসাজশে পরিত্যক্ত পাইপগান নিজেরা সংগ্রহ করে মামলা দিয়েছেন। যার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই। সামাজিক, পারিবারিক ও রাজনৈতিক মতবিরোধের কারণে শত্রুপক্ষের লোকজন শায়েস্তা করতে পুলিশকে হাত করে পিয়ালকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত ওসি মাসুদুর রহমান ও এসআই সামছুল হকের বিচার করতে হবে। এ জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’
ফজিলা খাতুন ২৩ বছর আগে তার স্বামী খুন হওয়ার তথ্য উল্লেখ করে বলেন, তার স্বামী আব্দুল মজিদকে গ্রাম্য দলাদলির কারণে ২০০২ সালের ২২ আগস্ট কমিউনিস্ট পার্টির সন্ত্রাসী বাহিনী নৃশংসভাবে খুন করে। ওই খুনের ঘটনার পর গ্রামে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের উদ্যোগ নিলে তারা প্রায় কোটি টাকা মূল্যের জমি দান করেন। এখন সেখানে পুলিশ ক্যাম্প অবস্থিত। যাদের কারণে তার স্বামীকে সন্ত্রাসীরা খুন করেছিলো, তারাই পুলিশকে দিয়ে মিথ্যা মামলা সাজিয়ে তাদের ক্ষতিগ্রস্ত করার পাঁয়তারা করছে বলে দাবি করেন পিয়ালের মা।
পিয়ালের স্ত্রী আসমা খাতুন ওরফে ঝুমুরের দাবি, তার স্বামী আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় তার বিরুদ্ধে নাশকতা ও বিস্ফোরক মামলার পাহাড় গড়ে তোলা হয়। গ্রেফতার করলেই তিন-চারটি পেন্ডিং মামলা দেয়া হয়। এমনকি রাজশাহীর একটি পেন্ডিং মামলাও দেয়া হয়েছে। এভাবেই দিনে দিনে ২৪টি মামলা দিয়ে পিয়ালকে পরিকল্পিতভাবে ‘সন্ত্রাসী’ বানানো হয়েছে। আসমার অভিযোগ, বিগত দিনে পিয়ালকে বারবার ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে পরিবারের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি কোনো রাজনৈতিক ভাষা বুঝি না। কিন্তু জানি, আমার স্বামী সন্ত্রাসী নয়। আমার স্বামী বাঁচতে চায়, আমাদের সন্তানের বাবাকে ফিরে পেতে চায়। আমি স্ত্রী হিসেবে ন্যায়বিচার চাই।’
আলমডাঙ্গা থানা-পুলিশ জেলা ছাত্রদলের নেতা পিয়াল মাহমুদ ও তার সহযোগী আতাউর রহমান ওরফে রকিকে (৩২) গত সোমবার দিবাগত রাতে গ্রেফতার করে। পুলিশের ভাষ্যমতে, ডাকাতির প্রস্তুতিকালে আলমডাঙ্গা উপজেলার কুমারী ইউনিয়নের দুর্লভপুর গ্রামের একটি মুরগির খামার থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে অবৈধ দেশীয় অস্ত্র ওয়ান শুটারগান, রামদা, চাইনিজ কুড়–ল ও মাদক জব্দ করা হয়েছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More