আলমডাঙ্গার হাড়োকান্দীতে ক্যানেলের সেচের পানি নেয়া হচ্ছে পুকুরে
ক্ষতিগ্রস্ত ধান ভুট্টা আলু ও সবজি : চাষিদের ক্ষোভ
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার হাড়োকান্দি বলেশ্বরপুর এলাকায় জিকে ক্যানেলের সেচের পানি ফসলের ক্ষতি করে পুকুরে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এলাকার ভুক্তভোগী কৃষকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়মনীতি মেনে আমাদের ধান ভুট্টা, আলু, গম, তামাকসহ মৌসুমী ফসলের জমিতে পানি সরবরাহ করি। কিন্তু অসাধু মৎস্যচাষিরা ধান, ভুট্টা ও গমের ক্ষতি করে তার ব্যক্তিগত পুকুরে সেচের পানি ভর্তি করছেন।
ভুক্তভোগী কৃষকদের এমন অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিনে গিয়ে ঘটনার সত্যতা মেলে। ভুক্তভোগী হাড়োকান্দি এলাকার কৃষক আব্দুল হামিদ, আশরাফ আলী ও দুলাল মন্ডল বলেন, আমরা আমাদের কৃষিজমির বিঘাপতি সরকারকে সেচ কর প্রদান করি শুধুমাত্র আমাদের কৃষিজাত ধান, গম, ভুট্টা, আলু সহ মৌসুমী ফসলের জন্য। কিন্তু আমাদের এলাকার একশ্রেণীর অসাধু মাছ ব্যবসায়ীরা এসব ফসলের ক্ষতি করে নিজের ব্যক্তিগত পুকুরে পানি ভর্তি করছেন। এমনিতেই এ বছর আলু সহ অন্যান্য সবজির দাম কম থাকায় আমাদের মাথায় হাত উঠে গেছে। এরপর যে অবশিষ্ট আলু, গম ও ভুট্টা চাষ আমরা করে থাকি সে জমিতে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পানি ঢুকে পড়ে আমাদের মৌসুমী ফসল ও শাকসবজির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে। আশরাফ আলী বলেন, আমার এক বিঘা বিজ আলু পানিতে পচে নষ্ট হয়ে গেছে। বর্তমানে বাজারে আলুর মৌসুমে দাম বেশি হওয়ায় আমি কিভাবে বীজ আলু কিনবো। আমরা এর ক্ষতিপূরণ চাই। আমাদের এলাকার কবীর হোসেন ও মৃত আব্দুল খালেকের ছেলে কামরুজ্জামান রুম্মন নামের দুজন মৎস্যচাষি আমাদের ফসলের ক্ষতি করে তাদের ব্যক্তিগত পুকুরে জিকে প্রকল্পের সেচের পানি ভর্তি করছেন।
এ বিষয়ে আউটসোর্সিং এ কর্মরত সেচ কর আদায়কারী জিয়াউদ্দিন বলেন, গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জি.কে) সেচ প্রকল্পের আওতায় যে পানি (জি. কে) ক্যানেলের মাধ্যমে কৃষকের জমিতে আসে সেই পানি (ইরিগেশন) ধান সহ মৌসুমী ফসলের চাহিদা পূরণ শেষে অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে অবশ্যই কৃষকের ফসলের ক্ষতি না করে সে পানি ব্যবহার করতে হবে।
মাছ চাষি কামরুজ্জামান রুম্মন বলেন, আমিও তো আমার ধানী জমির বিঘাপতি সেচ কর প্রদান করে থাকি। আমরা মাছে- ভাতে বাঙালি। ধানসহ অন্যান্য মৌসুমী ফসলের পাশাপাশি মৎস্য চাষিরাও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রেখে চলেছেন। আমি কেন মাছ চাষের জন্য আমার পুকুরে পানি নিতে পারবো না।
এ বিষয়ে (ব্লক সুপারভাইজার) উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রজনী আফরোজ বলেন, জিকে প্রকল্পের সেচের পানি শুধুমাত্র কৃষকের চাষাবাদের জন্যই ব্যবহার করা যাবে। যদি কেউ পুকুর ভর্তি বা অন্য কাজে ব্যবহার করে সে বিষয়ে আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
চুয়াডাঙ্গা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ আহাম্মেদ বলেন, কৃষি জমির সেচ কাজের জন্যই জিকে প্রকল্পের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা হয়ে থাকে। মূলত ইরিগেশনের জন্যই তা নির্দেশিত। এটি কারোর পুকুরে মাছ চাষ করার জন্য নয়। যদি কেউ পুকুরে এ সেচ কাজের পানি ভর্তি করেন সেটি বৈধ হবে না।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাসুদ আহমেদ সরকার বলেন, জিকে প্রকল্পের সেচের পানি কৃষক ও কৃষি কাজের জন্যই ব্যবহার করতে হবে। কৃষকের ক্ষতি করে সেই পানি অন্য কাজে কোনোভাবেই ব্যবহার করা যাবে না। যদি কেউ অন্য কাজে সে পানি ব্যবহার করতে চাই, সেক্ষেত্রে পানি উন্নয়ন বোর্ডের যথাযথ অনুমতি নিয়েই করতে হবে। তবে ফার্স্ট প্রায়োরিটি কৃষকেরই থাকবে।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.