আরও ৪টি শক্তিশালী বোমা উদ্ধার : এলাকাজুড়ে চরম আতঙ্ক

দর্শনার কেরুজ এলাকায় আইশৃঙ্খলা বাহিনীর তল্লাশি অভিযান

দর্শনা অফিস: দেশের সবচে বড় চিনিকল কেরু অ্যান্ড কোম্পানি চত্বরে সার্চিং অভিযান চালিয়ে লাল স্কচটেপ দিয়ে মোড়ানো আরও চারটি বোমা উদ্ধার করেছে যৌথবাহিনী। গতকাল রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে কেরু শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা জয়নাল আবেদীন নফরের অফিসের পেছন থেকে এসব বোমা উদ্ধার করা হয়। একের পর এক বোমা উদ্ধারের ঘটনায় আতঙ্ক বিরাজ করছে এলাকায়। কেরুজ চিনিকল কর্তৃপক্ষ সীমানা প্রাচীর, গেট নির্মাণসহ সিসি টিভি ক্যামেরা স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। বোমাবাজদের ধরতে মাঠ চষছেন সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশসহ আইন-শৃংখলা বাহিনীর একাধিক দল। সেই সাথে হঠাৎ বোমার ছড়াছড়ির নেপথ্যের রহস্যও উন্মোচনে কাজ করছে প্রশাসন। এবার একই স্থানে ৪টি শক্তিশালী বোমার সন্ধান মিলেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, কেরু চত্বর থেকে পর পর দুটি বোমা উদ্ধারের পর রোববার দুপুর ১টা থেকে সার্চিং অভিযান শুরু করে যৌথবাহিনী। অভিযানের দেড় ঘন্টার মাথায় উদ্ধার করা হয় ৪টি বোমা। কোনো একটি মহল আতঙ্ক ছড়াতেই এসব করছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেরু সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সদ্যস্থগিত হয়ে যাওয়া শ্রমিক ইউনিয়ন নির্বাচনকে ঘিরে পরিকল্পিতভাবে কোনো পক্ষ এই ঘটনা ঘটাচ্ছে। যাতে করে নির্বাচন বানচাল হয়ে যায়।
জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে কেরুজ ক্লাবের রান্নাঘরের পাশে লাল টেপে জড়ানো একটি বোমা স্বাদৃশ্য দেখে মিলের নিরাপত্তাকর্মীদের খবর দেয়া হয়। মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নির্দেশে ঘটনাস্থলে পৌঁছান মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) ওমর ফারুক গালিব ও নিরাপত্তা অফিসার মোফাজ্জেল হোসেন। পরে খবর দেয়া হয় পুলিশকে। চুয়াডাঙ্গা সহকারী পুলিশ সুপার (দামুড়হুদা-জীবননগর) সার্কেল জাকিয়া সুলতানা, দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জ শহীদ তিতুমীর, ইন্সপেক্টর (অপারেশন) অনুপ কুমারসহ সঙ্গীয় ফোর্স। এ সময় পুলিশ ও কেরুজ নিরাপত্তাকর্মীরা নিরাপদ দুরত্ব থাকতে সকল আহ্বানের পাশাপাশি চারদিকে দড়ি বেধে বেষ্টনি তৈরি করেন। খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও দর্শনা বিজিবি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। টানা ১০ ঘন্টা পর রাজশাহী ৫ র‌্যাবের বোমা নিস্ক্রিয় প্রশিক্ষিত দল ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। ওইদিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে ক্লাব মাঠে শক্তিশালী ওই বোমাটি নিস্ক্রীয় করা হয় বিকট শব্দে। মাঝখানে শুক্রবার বাদে শনিবার সকালে ছাগলকে ঘাষ খাওয়াতে গিয়ে ক্লাবের সামনের পানিশূন্য পুকুরে কালো টেপে মোড়ানো বোমা স্বাদৃশ্য দেখতে পান কেরুজ দারোয়ান লাইনপাড়ার জনৈক ব্যক্তি। খবর দেয়া হয় নিরাপত্তা বিভাগে। খবর পেয়ে মিলের এমডি রাব্বিক হাসানসহ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। সেই সাথে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পুলিশ, সেনাবাহিনী, র‌্যাব, ও গোয়েন্দা পুলিশের দল। একইভাবে শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাজশাহী ৫ র‌্যাবের প্রশিক্ষিত দল ক্লাব মাঠে বিকট শব্দে বোমাটি নিস্ক্রীয় করেছে।
এদিকে একের পর কেরুজ এলাকায় বোমার সন্ধান পাওয়া গতকাল রোববার দুপুর ১২টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সহকারি পুলিশ সুপার জাকিয়া সুলতানার নেতৃত্বে চুয়াডাঙ্গা গোয়েন্দা পুলিশ, দর্শনা থানা পুলিশ, চুয়াডাঙ্গা সেনাবাহিনী ও কেরুজ নিরাপত্তাকর্মীদের সমন্বয়ে গঠিত হয় তল্লাশি দল। ৮ ভাগে বিভক্তি হয়ে ওই দলের সদস্যরা ১৩৮ একর কেরুজ প্রতিষ্ঠানের আবাসিক এলাকার পরিত্যাক্ত স্থানগুলো তল্লাশি শুরু করে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কেরুজ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাব্বিক হাসান, চুয়াডাঙ্গা সেনাবাহিনী টিম, চুয়াডাঙ্গা গোয়েন্দা পুলিশের ইনচার্জ, ডিএসবি’র ডিআইওয়ান, দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জ শহীদ তিতুমীর, কেরুজ মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) ওমর ফারুক গালিব, মহাব্যবস্থাপক (কৃষি) আশরাফুল আলম ভূইয়া, মহাব্যবস্থাপক (ডিস্টিলারি) রাজিবুল হাসান, মহাব্যবস্থাপক (কারখানা) সুমন সাহা। দুপুর দুটোর দিকে কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী জয়নাল আবেদীন নফরের আনন্দ বাজারস্থ সংগঠন কার্যালয়ের পেছনে একটি পলিথিনে ৪টি শক্তিশালী বোমার সন্ধান পায় তল্লাশি দল। ফলে তিনদিনের ব্যবধানে ৩ দফায় ৬টি শক্তিশালী বোমা উদ্ধার করা হলো কেরুজ এলাকা থেকে। এ খবরে গোটা এলাকায় ছড়িয়ে পরে আতংক। বিভিন্ন স্থানে বোমা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখার রহস্য উন্মোচনসহ ঘটনার সাথে জড়িতদের চিহ্নিতপূর্বক গ্রেফতারে মাঠে রয়েছে সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশ। এদিকে রাজশাহী র‌্যাব ৫ প্রশিক্ষিতদলকে খবর দেয়া হয়েছে। তবে তারা বিশেষ কারণে গতকাল আসতে পারেনি, আজ সোমবার আসবেন জানা গেছে। তবে ইজ কখন নাগাদ আসবে তা জানা যায়নি। ফলে রাতভর পুলিশ ও কেরুজ নিরাপত্তা কর্মীদের বোমা পাহারা দিতে হয়েছে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা। কেরুজ এলাকায় হঠাৎ করেই একের পর এক শক্তিশালী বোমা পরে থাকায় জনমনে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। নেপথ্যের রহস্য উন্মোচন ও বোমারুদের গ্রেফতারের মাঠে রয়েছেন সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশের একাধিক দল। এখনো পর্যন্ত জড়িত কাউকে গ্রেফতারের কোন খবর পাওয়া যায়নি।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More