আগামী ২৩ ডিসেম্বর উদ্বোধন হতে পারে কেরুজ চিনিকলের ২০২২-২৩ আখ মাড়াই মরসুম
৫৩ দিনে আখ মাড়াই হবে ৬২ হাজার মেট্রিকটন : ফলন ভালো হওয়ায় লক্ষমাত্রা অর্জনের সম্ভাবনা
হারুন রাজু/হানিফ মণ্ডল: ৮৫ বছরের বয়সি কেরুজ চিনিকলের ২০২২-২৩ আখ মাড়াই মরসুম আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হতে পারে আগামী ২৩ ডিসেম্বর। এবার মাত্র ৫৩ দিনে আখ মাড়াই করতে হবে ৬২ হাজার মেট্রিকটন। আখের ফলন ভাল হওয়ায় লক্ষমাত্রা অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে অনেকটাই। তবে ইক্ষু রোপনের দিকে জোর দিয়েছেন কেরুজ চিনিকলের কর্মকর্তারা। জানা গেছে, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের দেয়া লক্ষমাত্রা অনুযায়ী ২০২২-২৩ আখ মাড়াই মরসুমে কেরুজ চিনিকলে ৬২ হাজার মেট্রিকটন আখ মাড়াই করে চিনি উৎপাদন করতে হবে ৩৮৪০ মেট্রিকটন। আখ মাড়াইয়ের গড়হার প্রতি মাড়াই দিবসে ১১৫০ মেট্রিকটন এবং চিনি আহরণের গড়হার নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ দশমিক ২০ শতাংশ। চিনিকল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এবার ৪২৩০ একর জমিতে আখ দন্ডায়মান রয়েছে। যার মধ্যে কেরুজ নিজস্ব জমির পরিমান ১০৫০ একর। বাকী ৩১৮০ একর কৃষকদের জমিতে আখ চাষ করা হয়েছে। আখের সঠিক পরিচর্চা, আধুনিক পদ্ধতিতে আখচাষ ও মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ কর্মকর্তাদের সার্বিক দেখভালের কারণে এবার আখের ফলন ভালো হয়েছে। যে কারণে ধারণা করা হচ্ছে আখ মাড়াইসহ চিনি উৎপাদনের লক্ষমাত্রা অর্জন হতে পারে। ২০২১ সালের ২৪ ডিসেম্বর ২০২১-২২ আখ মাড়াই মরসুম শুরু হয়েছিলো। ওই মরসুমে ৪ হাজার ৬২৭ একর জমির আখ মাড়াই করা হয়। যার মধ্যে কেরুজ নিজস্ব জমির পরিমান মাত্র ৯৮৯ একর ও কৃষকের জমিতে আখ ছিলো ৩ হাজার ৬৩৮ একর। লক্ষমাত্রা অনুযায়ী মাত্র ৪৪ দিনে ৫০ হাজার মেট্রিকটন আখ মাড়াই করে চিনি উৎপাদন নির্ধারণ করা হয়েছিলো সাড়ে ৩ হাজার মেট্রিকটন। চিনি আহরণের গড় হার নির্ধারণ করা ছিলো ৭ দশমিক শূন্য। ওই আখ মাড়াই দিবসের লক্ষমাত্রা অতিক্রম করে ৫০ দিবস পর্যন্ত আখ মাড়াই করা হয়েছিলো ৫৪ হাজার ৮৫০ মেট্রিকটন। যা লক্ষমাত্রার তুলনায় মাড়াইকৃত আখের পরিমান ছিলো ৪ হাজার মেট্রিকটন বেশি। চিনি উৎপাদন হয়েছিলো প্রায় ৩ হাজার মেট্রিকটন। চিনি আহরণের গড়হারের ক্ষেত্রে ছিলো ৫ দশমিক ৬০ শতাংশ। ২০২২-২৩ ইক্ষু রোপন মরসুম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করা হয়েছে ১ সেপ্টেম্বর। এবার ৭ হাজার জমিতে আখ রোপনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত ৭শ একর জমিতে আখ রোপন করা হয়েছে। তবে এবার আখের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। মিলস গেটে ১৪০ টাকা থেকে বাড়িয়ে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮০ টাকা। এ ছাড়া ইক্ষুক্রয় কেন্দ্রগুলোতে ১৩৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৭৬ টাকা। কেরুজ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোশারফ হোসেনসহ কর্মকর্তাদের নিয়মিত তদারকি, কৃষকদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণ, প্রায় প্রতিদিন কৃষকদের সাথে উঠান বৈঠক, সিআইসি, সিডিএদের সঠিক দিক নির্দেশনা, আধুনিক পদ্ধতিতে আখচাষ, পরিচর্চাসহ আখের মূল্য বৃদ্ধিতে কৃষকরা নতুন করে আখচাষের দিকে ঝুকেছে। ধারণা করা হচ্ছে গুণগত মানের আখ বীজ, কিটনাশক ও সার সরবরাহের কারণে চলতি রোপন মরসুমের লক্ষমাত্রা অর্জিত হতে পারে। সেক্ষেত্রে আগামী আখ মাড়াই মরসুমে যেমন আখের পরিমান বাড়বে, তেমনি চিনি উৎপাদনও হতে পারে বেশি। কেরুজ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোশারফ হোসেন জানান, আগামী মরসুমে চিনি কারখানাকে লাভজনক অবস্থায় নেয়া সম্ভব না হলেও বড়ধরণের লোকসান কমাতে প্রয়োজনীয় সবধরণের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। আখচাষে আগ্রহী করে তোলা হচ্ছে কৃষকদের। কৃষকদের সকল ধরণের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। কৃষদের সাথে সভা-সমাবেশ, উঠান বৈঠক চলমান রয়েছে। তিনি এলাকার আখচাষিদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, বেশী বেশী আখচাষ করে অধিক মুনাফা অর্জনের পাশাপাশি আপনাদের মূলবান সম্পদ কেরুজ চিনিকলটি রক্ষা করুন। এ ছাড়া বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের সচিব চৌধুরী রুহুল আমীন কায়সার স্বাক্ষরিত পত্রে জানা গেছে দেশের ৯টি চিনিকলে আখ মাড়াই শুরু হবে। এর মধ্যে ২৫ নভেম্বর নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস, ২ ডিসেম্বর নাটোর সুগার মিলস, একই দিন রাজশাহী ও জিল বাংলা সুগার মিলস, ২৩ ডিসেম্বর কেরুজ, মোবারকগঞ্জ, ঠাকুরগাও ও ফরিদপুর চিনিকল, ৩০ ডিসেম্বর শুরু হবে জয়পুরহাট সুগার মিলের আখ মাড়াই মরসুম শুরু।