আখকর্তন যান্ত্রিকীকরণ হলে উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে সাশ্রয়ী হবে অর্থ ও সময়
দর্শনা কেরুজ কৃষি খামারে আখ কর্তন পরিদর্শনে করপোরেশনের চেয়ারম্যান অপু
দর্শনা অফিস/বেগমপুর প্রতিনিধি : দর্শনা কেরুজ চিনিকলের আওতাধীন আকন্দবাড়িয়া বীজ উৎপাদন খামারে হারভেস্টার দিয়ে আখ কর্তন পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান (গ্রেড-১) আরিফুর রহমান অপু। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে তিনি এ পরিদর্শনে যান। এসময় আরিফুর রহমান অপু বলেন, বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। এর সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। আধুনিক প্রযুক্তি বা যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ফলে কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। বর্তমানে কৃষিতে কায়িক শ্রম কমিয়ে সবকিছুতেই যন্ত্রের ব্যবহার হচ্ছে। চাষাবাদ, বীজ বপন, নিড়ানি, সার দেয়া, ফসল কাটা, মাড়াই, ঝাড়া এমনকি প্যাকেটিং পর্যন্ত সবই হচ্ছে আধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে। কৃষির যান্ত্রিকী কারণের ফলে একদিকে যেমন উৎপাদনের পরিমাণ বাড়ছে অন্যদিকে তেমনি উৎপাদন ব্যয় ও সময় কমছে। একই সঙ্গে ফসলের অপচয়ও কমছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে দিন দিন আবাদী জমির পরিমাণ কমে আসছে। আবাদী জমি ব্যাপকহারে কমলেও কৃষিপণ্য উৎপাদন দ্বিগুণেরও বেশি হচ্ছে। এই সাফল্য অর্জনের পেছনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তি। বর্তমানে দেশের মোট আবাদী জমি প্রায় যান্ত্রিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ হচ্ছে। আখ চাষে সব পর্যায়ে অর্থাৎ জমি তৈরি থেকে চিনি উৎপাদন পর্যন্ত সকল পর্যায় যন্ত্রের ব্যবহারের আওতায় আনতে পারলে উৎপাদন আরো বৃদ্ধি পাবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির প্রধান কৃতিত্ব অবশ্যই কৃষকদের। তারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে আখ উৎপাদন করে। কৃষি তাদের জীবিকার অবলম্বন। তবে আখ উৎপাদনে লাভ ছাড়া টিকে থাকা ভবিষ্যতে কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। তাই আখ উৎপাদন বাড়াতে হলে এবং লাভজনক করতে হলে কৃষির সর্ব পর্যায়ে যন্ত্রপাতির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি উদ্ভাবিত উন্নত উচ্চ ফলনশীল জাতের আখের আবাদ বাড়াতে হবে। কৃষিতে সাফল্যের পেছনে কৃষিপ্রযুক্তিবিদদের বিরাট অবদান রয়েছে। এটা কৃষক পর্যায়ে পৌঁছানো একটা বড় চ্যালেঞ্জ। কাজেই কৃষিতে উন্নত প্রযুক্তি বা যন্ত্রপাতি ব্যবহারের অপরিহার্যতা সহজেই অনুমেয়। যান্ত্রীকরণের মাধ্যমে কৃষিকে সহজ ও লাভজনক করতে হবে জাতীয় স্বার্থেই। এ সময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আখ কাটার সময় আখকাটা লেবার পাওয়া কঠিন হয়ে যায়। ঘণ্টায় ২০ টন আখ কর্তন করতে পারে হারভেস্টার মেশিন। লেবার দিয়ে এক একর জমির আখ কাটতে প্রায় ১১ হাজার টাকার মত খরচ পড়ে। সেই একই পরিমাণ আখ হারভেস্টার মেশিন দিয়ে কাটলে খরচ পড়বে ৩ হাজার টাকা। এতে একর প্রতি সাশ্রয় হবে ৮ হাজার টাকা। শুধু তাই নয় হারভেস্টার দিয়ে আখ কাটতে পারলে চিনির রিকভারীও বৃদ্ধি পাবে। দেখা গেছে লেবার দিয়ে এক একর আখ কাটলে তাতে ফলন আসে ১৭ টন। মেশিন দিয়ে কাটলে ফলন হয় ২০ টন। ৩ টন আখের বাজার মূল্য ১৩ হাজার ৫শ টাকা। শিল্পমন্ত্রণালয়ের সচিব জাকিয়া সুলতানার একান্ত উদ্যোগে প্রনোদনা হিসেবে চিনিশিল্প করপোরেন এ হারভেস্টার মেশিনটি উপহার হিসেবে পেয়েছে। এর জন্য করপোরেশন কৃতজ্ঞা প্রকাশ করছে। দর্শনা কেরুজ চিনিকলের ব্যবস্থপনা পরিচালক মোশারফ হোসেন বলেন, মরসুমে আখ কর্তন করতে গেলে নানা জটিলতায় পড়তে হয়। বড় সমস্যা লেবার সমস্যা। এ সমস্যা থেকে উত্তোরণ পেতে প্রাথমিকভাবে হারভেস্টার মেশিনের চলাচল উপোযোগী আখ রোপণের একটি ও কর্তনের একটি মেশিন কেনার চাহিদাপত্র সংশ্লিষ্ট দপ্তরে খুব শিগগিরই পাঠাবো। আশা করি আগামী উৎপাদন মরসুম শুরুর আগেই হাতে পেয়ে যাবো। কৃষি বিভাগটি যান্ত্রীকিকরণ হলে অনেক সমস্যার সমাধান হবে। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, চিনিকলের মহাব্যবস্থপক (প্রশাসন) ইউসুফ আলী, মহাব্যবস্থপক (অর্থ) সাইফুল ইসলাম, টারর্বো এগ্রো টেকনোলজি লিমিটেড ইন্ডিয়া গুজরাটের শক্তিমান সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ার রাজস কুমার সরকার, আলিম ইন্ডাস্ট্রিজের জেনারেল ম্যানেজার ও মার্কেটিং এবং সেলসের প্রতিতিধি ইঞ্জিনিয়ার মো. হুমায়ুন কবীর, কেরুজ চিনিকলের মহাব্যবস্থাপক (কৃষি) আশরাফুল আলম ভুইয়া, ব্যবস্থাপক (খামার) সুমন কুমার সাহা, ব্যবস্থাপক (পরিঃপ্রকৌঃ) আবু সাঈদ।