মাজেদুল হক মানিক: স্বৈরাচার হটাও আন্দোলন থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত দলীয় বিভিন্ন ক্ষেত্রে যার নামটি নেতাকর্মীদের কাছে অতি প্রিয় তিনি মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকন। গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং মেহেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে এলাকার উন্নয়নে যিনি নিবেদিত প্রাণ হিসেবে পরিচিত। মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের পাশাপাশি এমপি হিসেবে এলাকার উন্নয়নে যার অবদান অনস্বীকার্য বলে মন্তব্য নেতাকর্মীদের। মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকন রাজনীতি করতে গিয়ে বহু মামলার শিকার হয়েছেন। আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে পালিয়ে থাকতে হয়েছে দিনের পর দিন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বুকে ধারণ করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সারাজীবন কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন তিনি।
মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকন ঢাকার মিরপুর এমডিসি মডেল ইন্সটিটিউটে মাধ্যমিকে লেখাপাড়ার করার সময় থেকেই রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েই তিনি রাজনীতিতে আসেন। এই বিদ্যালয়ে লেখাপাড়কালীন ১৯৮৩ সালে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মিরপুর ২নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের যুগ্ম-সম্পাদক নির্বাচিত হন। এই প্রতিষ্ঠান থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাশ করার পর মেহেরপুর সরকারি কলেজে বিএসসিতে ভর্তি হন। তখন থেকেই এলাকার রাজনীনিতে আরও সক্রিয় হন তিনি। এখান থেকে বিএসসি পাশ করে পরবর্তীতে পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে এল.এলবি এবং এলএলএম পাশ করেন। মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকনের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার উজ্জ্বল ও বর্ণিল বলে মনে করেন নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে দুঃসময়ে ছাত্রলীগের সঠিক নেতৃত্ব দিয়ে তিনি নেতাকর্মী ও কেন্দ্রীয় নেতাদের নজর কাড়েন।
তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার থেকে জানা গেছে, ১৯৮৬ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত গাংনী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ওই সময় ছাত্রলীগের সুবর্ণ যুগ হিসেবে উল্লেখ করেছেন ছাত্রলীগের প্রাক্তন নেতাকর্মীরা। দীর্ঘদিন বিরোধী দলে থেকেই বজ্রকঠিন নেতৃত্বের কারণে মেহেরপুর জেলায় ছাত্রলীগ একটি শক্ত অবস্থানে পৌঁছায়। অবিচল নেতৃত্ব আর সফলতার কারণে এরপর তিনি গাংনী উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক এবং পরবর্তীতে জেলা যুবলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত। ১৯৯৮ সালে গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি মূল দল আওয়ামী লীগে জায়গা করে নেন। পরবর্তীতে আরও এক মেয়াদে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। এরপর ২০০৪ সালে কাউন্সিলের মাধ্যমে গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। দলের চরম দুঃসময়ে নেতাকর্মীরা তার হাতেই তুলে দেন গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব। তখন থেকে অদ্যবদি মামলা, হামলা ও জুলুম-নির্যাতন সহ্য করেও তিনি দলের নেতৃত্বের প্রতি অবিচল।
দলের দুঃসময়ে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে রাজনৈতিক বহু মামলার শিকার হন মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকন। ১৯৮৮ সালে স্বৈরাচারী এরশাদ হটাও আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে দুটি হত্যা মামলাসহ ৯টি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার মিথ্যা মামলার আসামি হন মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকন। এরপর ১৯৯০ সালে আরও একটি মিথ্যা মামলার আসামি হিসেবে ৯০ দিনের কঠিন ডিটেনশনভোগ করেন।
১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত খালেদা হটাও আন্দোলনেও তিনি ছিলেন সক্রিয় নেতা। ফলে আবারও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা মামলায় জড়ানো হয় তাকে। এসময়ের মধ্যে ৩টি হত্যা মামলাসহ ৮টি মামলার আসামি করা হয় সাহিদুজ্জামান খোকনকে। ১৯৯৫ সালে তিনি ২৫ দিন কারাভোগ করেন।
দীর্ঘদিন বিরোধী দলের নেতৃত্ব দেয়ায় হামলা-হামলার শিকার হতে থাকেন তিনি। ২০০১ সালে চার দলীয় জোট সরকারের জুলুম-নির্যাতনেও তিনি নেতৃত্বে অবিচল ছিলেন। ফলস্বরুপ ১২টি মিথ্যা মামলার আসামি হন। এর মধ্যে হত্যা মামলা দুটি, রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা ১টি এবং জননিরাপত্তা আইনে ১টি মামলা ছিলো। এরপরও তিনি দলের নেতৃত্ব দিয়ে নেতাকর্মীদের আগলে রাখেন। চার দলীয় জোট সরকারের আমলে তিনি তিন তিনবার কারাবরণ করেন।
নেতাকর্মীরা জানান, দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে সঠিক নেতৃত্বে খুশি হয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে তাকে মেহেরপুর-২ আসনে এমপি হিসেবে মনোনীত করে। এমপি নির্বাচিত হয়ে তিনি শুরু করেন এলাকার নানাবিধ উন্নয়ন কাজ। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, কৃষি, শিল্পসহ বিভিন্ন বিষয়ে নিজের মেধা দিয়ে উন্নয়ন শুরু করেন। যা সবই এখন দৃশ্যমান। একজন যোগ্য নেতা হিসেবে এলাকার উন্নয়নে ক্রিয়েটিভ ভূমিকা রেখে এলাকার মানুষের কাছে প্রিয় পাত্র হিসেবে বিবেচিত মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকন।