স্ত্রী ও তার স্বজনদের নির্যাতনে স্বামী সাইফুলের করুণ মৃত্যু

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার দেবীপুর গ্রামে স্ত্রী ও তার পরিবারের লোকজনের নির্যাতনে আহত স্বামী সাইফুল ইসলাম (২৬) মারা গেছেন। গতকাল মঙ্গলবার গভীর রাতে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। নির্যাতনের পর দীর্ঘ ২৪ ঘন্টা মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে তিনি হেরে যান। শুধু নির্যাতন নয় তাকে গাছে বেঁধে জোরপূর্বক কীটনাশক পান করিয়ে দেয় তারা। এমনই অভিযোগ করেছেন সাইফুলের পরিবার। নিহত সাইফুল ইসলাম বামন্দী নিশিপুরের ভাদু ম-লের ছেলে।
জানা গেছে, গত সোমবার রাতে পারিবারিক কলহের জেরে দেবীপুর গ্রামে শ^শুর বাড়িতে স্বামী সাইফুল স্ত্রী রোজিনার মধ্যে কথা কাটাকাটি ও মারধরের ঘটনা ঘটে। সাইফুলের ধারালো ক্ষুরের আঘাতে রোজিনা জখম হয়। একই সময়ে রোজিনা ইট দিয়ে সাইফুলের মাথা ফাটিয়ে দেয়। গত মঙ্গলবার সকালে রোজিনার বাবা মা রোজিনাকে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠালেও আহত সাইফুলকে চিকিৎসা না দিয়ে একটি গাছের সাথে বেঁধে রাখে। শুধু তাই নয়, মারধরের পাশাপাশি সাইফুলকে জোরপূর্বক কীটনাশক মুখে ঢেলে দেয়া হয়।
সাইফুলের পিতা ভাদু ম-ল জানান, সাইফুলকে গাছে বেঁধে মারধর ও মুখে কীটনাশক ঢেলে দেয়ার সংবাদ পেয়ে বামন্দী ক্যাম্প পুলিশের একটি টিম সাইফুলকে উদ্ধার করে গাংনী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেরণ করে। তার অবস্থার অবনতি হওয়ায় কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করলে গভীর রাতে সাইফুলের মৃত্যু ঘটে।
এদিকে নির্মম নির্যাতনের ঘটনায় এলাকাজুড়ে মানুষের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। একজন মানুষকে নির্যাতনে হত্যার ঘটনার সাথে জড়িতের দ্রুত গ্রেফতার পূর্বক দৃষ্টান্তমূলক সাজা দাবি করেছেন এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
স্ত্রী রোজিনা জানান, স্বামী সাইফুল মাদকাসক্ত। সে মাদক সেবন করে প্রায়ই নির্যাতন করতো। গত সোমবার রাতে সাইফুল ক্ষুর দিয়ে জবাই করার চেষ্টা করে। ক্ষুরের আঘাতে দু হাত জখম হয়। স্বামীর হাত থেকে রক্ষা পেতে রোজিনা ইট দিয়ে স্বামী সাইফুলের মাথা ফাটিয়ে দেয় বলেও স্বীকার করে। কীটনাশক পান করানোর ঘটনাটি মিথ্যা বলে দাবী করেন রোজিনা।
স্ত্রী রোজিনা খাতুনের দাবি, স্বামী সাইফুল ইসলাম মাদকসেবী। সে বিভিন্ন সময়ে অত্যাচার করতো। ২০২০ সালের প্রথমে সে সাইফুলকে তালাক দিয়ে বাপের বাড়িতে বসবাস করছিলো। আট মাস আগে রোজিনার ঘরের সিঁদ কেটে ঘরে ঢুকে রোজিনাকে মারধর করে ও তার বাড়িতে নিয়ে আসার চেষ্টা করে। টের পেয়ে গ্রামের লোকজন সালিস করে দু’জনকে আবারও বিয়ে দিয়ে দেন এবং রোজিনার বাবার বাড়িতে থাকার বন্দোবস্ত করেন।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে গাংনী থানার ওসি বজলুর রহমান জানান, পুলিশের একটি টিম সাইফুলকে আহত ও গাছে বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করে। পরে হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাইফুল মারা গেছে বলে তার পরিবারের লোকজন জানিয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। মামলা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More