স্টাফ রিপোর্টার: রাষ্ট্রয়ত্ত সোনালী ব্যাংকের জীবননগরের উথলী শাখায় দিনেদুপুরে ডাকাতির ঘটনার পর ওই দিন রাতেই মামলা দায়ের করেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপক আবু বক্কর সিদ্দীক। ঘটনার পর অপরাধীরা যেনো পালিয়ে যেতে না পারে সে লক্ষ্যে জেলার প্রবেশ পথগুলোতে তল্লাশি অভিযান শুরু করে পুলিশ। ওই দিন ঘটনার সময় ব্যাংকে থাকা দুই গ্রাহককে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেয়া হয়। তেমন কোনো তথ্য না পাওয়ায় ছেড়ে দেয়া হয় তাদের। পরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয় সদর উপজেলার তিন যুবককে। তাদের কাছেও ব্যাংক ডাকাতি সংশ্লিষ্ট কোনো তথ্য না মেলায় ছেড়ে দেয়া হয়।
ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া খেলনা পিস্তলের একটি অংশের সূত্র ধরে শুরু হয় সাঁড়াশি অভিযান। ঘটনার দিন ব্যবহৃত খেলনা পিস্তল ও গুলি অনলাইন মার্কেট প্লেস দারাজ ডট কম থেকে কেনা বলে তদন্তে জানতে পারেন ওই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জীবননগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ফেরদৌস ওয়াহিদ। অনলাইন মার্কেট প্লেস দারাজ ডট কমের ডেলিভারি স্লিপ থেকে খেলনা পিস্তল ক্রেতা ডাকাতির মূল হোতা সাফাতুজ্জামান রাসেলের নাম উঠে আসে। সে অনুযায়ী পেপার ফ্লাই কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে খেলনা পিস্তল ও গুলি সাফাতুজ্জামান রাসেলকে সরবরাহ করা হয়। ওই খেলনা পিস্তল নিয়েই তারা সোনালী ব্যাংক উথলী শাখায় ডাকাতি করে। পরে ডাকাতির মূল হোতা সাফাতুজ্জামান রাসেলকে গ্রেফতার করতে সমন্বিত উদ্যোগ নেয় জেলা পুলিশ। সমন্বিতভাবে চুয়াডাঙ্গা জেলাসহ প¦ার্শবর্তী কয়েকটি জেলায় একাধিক অভিযান চালান সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (দামুড়হুদা সার্কেল) আবু রাসেল, জীবননগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ফেরদৌস ওয়াহিদ, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক এএইচএম কামরুজ্জামান খান, উপ-পরিদর্শক সুলতান আহমেদ ও সহকারী উপ-পরিদর্শক রজিবুল হক। ডাকাতির মূল হোতা সাফাতুজ্জামান রাসেল খুব চালাক প্রকৃতির হওয়ায় বারবার স্থান পরিবর্তন করে। ঢাকা, যশোর, ঝিনাইদহ, মেহেরপুরসহ একাধিক জায়গায় বিভিন্ন সময় অবস্থান করে সে। অবশেষে যশোর চৌগাছায় সে মোবাইলফোন চালু করে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মোবাইল ট্র্যাকিং ও সিডিআর অ্যানালাইসিসের মাধ্যমে গতকাল মঙ্গলবার ভোরে যশোর চৌগাছার এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে জীবননগর দেহাটি গ্রামে অভিযান চালিয়ে মোহাম্মদ রকি (২৩), মোহাম্মদ হৃদয় (২২) ও মাহাফুজ আহমেদ আকাশকে (১৯) গ্রেফতার করে পুলিশ। ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে জীবননগর দেহাটি গ্রামের মৃত সেকেন্দার ম-লের ছেলে মোহাম্মদ হাবিবুরকে (২০) আটক করা হয়। প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে ব্যাংক ডাকাতি সংশ্লিষ্ট কোনো তথ্য পায়নি পুলিশ। তেমন কোনো তথ্য পাওয়া গেলে তাকেও ওই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। অভিযানে লুট করা ৮ লাখ ৮২ হাজার ৯০০ টাকার মধ্যে উদ্ধার করা হয় ৫ লাখ ৩ হাজার টাকা। উদ্ধার করা হয় ডাকাতির সময় ব্যবহৃত একটি পিপিই, এক জোড়া হ্যান্ডগ্লাভস, দুইটি হেলমেট, একটি খেলনা রিভলবার, একটি খেলনা পিস্তলের ভাঙা অংশ, দুইটি চাপাতি, দুইটি মোটরসাইকেল, একটি ল্যাপটপ। আজ বুধবার তাদের আদালতে সোপর্দ করা হবে। আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার ও লুট করা টাকা উদ্ধারের অভিযানে অংশ নেয়া সকল পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যদের ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেন পুলিশ সুপার।