মহেশপুরে ঐতিহ্যবাহী মূখার্জী বাড়ির শেষ চিহ্ন হারিয়ে যেতে বসেছে

 

মহেশপুর প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের মহেশপুরের ফতেপুর গ্রামের ঐতিহ্যবাহী মূখার্জী পরিবারের বিশাল অট্রালিকার শেষ চিহ্ন টুকু ইতিহাস থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। টিকে আছে শুধু মূল ফটক। ইতিহাসের বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায়, ফতেপুর গ্রামের কপোতাক্ষ নদের তীরে প্রায় এক একর জমির ওপর শ্রীযুক্ত বিহারী লাল মূখার্জীর ছিলো বাগান বাড়ি। ব্রিটিশ আমলে তিনি কলকাতায় উকালতি করতেন। তার ছিলো ৪ ছেলে এরা হলেন- ১। জিতেন্দ্রনাথ মূখার্জী (পেশায় ছিলেন উকিল) ২। নগেন্দ্রনাথ মূখার্জী (কলকাতা কলেজে গণিতের শিক্ষক ছিলেন তাকে অংকের বিশারত বলা হতো) ৩। কালীশাহার মূখার্জী (তিনি ছিলেন তৎকালীন সময়ের ভারতে রেলের নামকরা ইঞ্জিনিয়ার তিনি কলকাতার আলীপুরে বসবাস করতেন) ৪। জগেন্দ্রনাথ মূখার্জী (তিনি ছিলেন একজন বড় ব্যবসায়ী)। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর পরিবারের সকলেই ভারতে পাড়ি জমায়। এরমধ্যে জিতেন্দ্রনাথ বনগায়ে বসবাস করতেন। এই পরিবারের ৫০ শতক জমির ওপরে ৩৪ কামরার একটি দ্বিতল ভবন ছিলো যা ছিলো নাটরের রাজবাড়ির জমিদারদের আদলে তৈরি। বাড়ির দক্ষিণ মুখে ছিলো ঠাকুর ঘর। কপোতাক্ষ নদ পর্যন্ত ফাঁকা জায়গায় পূজার সময় বসতো মেলা। ব্রিটিশ আমলে এই পরিবারটি ছিলো উচ্চ শিক্ষিত পরিবার।

জানা গেছে, তারা নড়াইল কালনা থেকে একশ টাকায় একশ মন চিকন চাল নৌকা যোগে আমদানী করতো। বাড়ির সাথেই নৌকার ঘাট ছিলো তারা কখনো কখনো পানি পথে কলকাতায় যাতায়াত করতো। ফতেপুরের ঐতিহ্যবাহী চড়ক পূজাটি তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় তৎকালীন সময়ে জাকজমকপূর্ণভাবে পালন করা হতো। কথিত আছে, ভারতে যাওয়ার সময় তাদের একটা বিশাল সিন্দুক ইন্দারার ভিতরে ফেলে রেখে যায়। অনেক লোক চেষ্টা করেও সেটা তুলতে পারেনি। তারা চলে যাওয়ার পর ওই ভবনে পাকিস্থান আমলে সৈয়দ শামছুল আলম মাস্টারের নেতৃত্বে কয়েক বছর হাই স্কুল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। দেশ স্বাধীনের পর স্কুলটি আর টিকে থাকেনি। বর্তমানে কয়েকটি ভূমিহীন পরিবার দখল করে বসবাস করছে। বাড়িতে ঢোকার প্রধান ফটকটি এখনও ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। এলাকাবাসীর দাবি এটি একটি শিশু বিনোদন কেন্দ্র অথবা বিদ্ধাশ্রম গড়ে তুলে এখনও ইতিহাস সংরক্ষণ করা সম্ভব। মহেশপুর উপজেলার ইতিহাসের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হিসেবে মূখার্জী বাড়ির শেষ চিহ্ন টুকু সংরক্ষণের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ব বিভাগের কাছে এলাকাবাসীর জোর দাবি।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More