মেহেরপুর অফিস: বৈরি আবহাওয়ার কারণে এবছর পাট নিয়ে বিপাকে পড়েছেন মেহেরপুরের পাট চাষিরা। আষাঢ় পার হয়ে শ্রাবণ মাসের প্রথম সপ্তাহতেও মেহেরপুরের আকাশে বৃষ্টির দেখা মিলছেনা। রৌদ্র আর খরা-তাপে মাঠের পাট গাছ পুড়ে যাচ্ছে। বাড়তি খরচ করে জমিতে পানি সেচ দিয়েও বৃষ্টির পানির মত পাট গাছের চেহারা ফিরছে না বলে হতশায় ভুগছেন জেলার পাট চাষিরা। পাটের পাশাপাশি মৌসুমী ফসল নিয়েও বিপাকে পড়েছেন জেলার চাষিরা।
পাট উৎপাদনখ্যাত জেলা মেহেরপুর। পাটের ফলন ও দাম পাওয়ার উপর ভাগ্য বদলায় এ জেলার চাষিদের। তবে বৈরি আবহাওয়ার কারণে এবছর জেলার কৃষকদের মাথায় হাত উঠেছে। লাভের মুখ দেখা হবেনা জেনেও খরচ তুলতে তারা এখনও বৃষ্টির পানির দিকে তাকিয়ে আছেন। এরই মধ্যে তাদের অনেকটা সময় পার হয়ে গেছে। আষাঢ় পার হয়ে শ্রাবণ মাসের প্রথম সপ্তাহ চলছে। আর ১৫ দিন পরে পুরাদমে পাট কাটা শুরু হবে। এতদিনে চাষিরা পাট ক্ষেতে সেচ দিয়ে এসেছেন। আর কত? এখন তারা পাট কেটে কোথায় কিভাবে পাট জাগ দেবেন? এ ভাবনায় তাদের সব আশা ফুরিয়ে যেতে বসেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের হিসেব মত এবছর জেলায় ২১ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ২৫০ হেক্টর বেশি। কৃষি বিভাগের মতে এবছরও পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবার কথা। কিন্তু এবছর আবহাওয়া বিমুখ হওয়ায় চাষিরা ঝুঁকি নিয়ে অতিরিক্ত জমিতে পাটের চাষ করেননি। কৃষি বিভাগ আরো জানান, বৃষ্টির অভাবে শুধু ক্ষেতের পাটই পুড়ছেনা। ক্ষেতের চিচিংগা, পুঁইশাক, পটল, ঢেঁড়স, পেঁপেসহ মরসুমী ফসল পুড়ছে। বর্তমান সময়ে ক্ষেতের ফসল নিয়ে চাষিদের পাশাপাশি কৃষি বিভাগও উদবিঘœ।
জেলার মুজিবনগর উপজেলার মানিকনগর গ্রামের পাটচাষি শফিউদ্দিন বলেন, পাট চাষ করে চাষীরা চিন্তিত। বৃষ্টির অভাবে ক্ষেতের পাট পুড়ে যাচ্ছে। এদিকে পানির অভাবে পাট জাগ দেয়াও সমস্যা। ভৈরব ও সরস্বতী খালসহ জেলার নদ-নদীগুলো পাট জাগ দিতে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা থাকায় পাট নিয়ে জেলার পাট চাষিদের মাথায় হাত উঠেছে।
মেহেরপুর সদর উপজেলার দীঘিরপাড়া গ্রামের পাটচাষি আকছার আলী জানালেন, বৃষ্টির অভাবে এবছর রেকর্ড পরিমাণ সেচ দিতে হচ্ছে। পাট ক্ষেতে সপ্তাহে একবার সেচ দিতে হচ্ছে। বৃষ্টির দেখা মিলবে মিলবে করে তারা সেচ বাবদ এত খরচ করেছে। এরপরও পানি সেচ দিয়ে যদি পাট জাগ দিতে হয় তবে জেলার কৃষকরা কয়েক বছরের জন্য পিছিয়ে পড়বে। এখন লাভের আশা ছেড়ে খরচ উঠবে কিনা তা নিয়ে চিন্তিত জেলার চাষীরা।
গাংনী উপজেলার গাড়াডোব গ্রামের মকবুল হোসেন বলেন, বৈশাখ মাসে সেচ দিয়ে পাটের বীজ বপন করেছেন। তিনি আরো জানান, নিজের স্যালো মেশিন দিয়ে প্রতিবিঘা জমিতে একবার পানি সেচ দিতে খরচ হয় ৫শ’ টাকা। আর অন্যের স্যালোমেশিন দিয়ে প্রতি বিঘা জমিতে একবার সেচ দিতে প্রায় ৭শ’ টাকা খরচ করতে হয়। চাষিরা একবার ক্ষতিগ্রস্থ হলে তাদের উঠে দাঁড়াতে বেগ পেতে হবে মনে করেন তিনি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক মো. সামছুল আলম বলেন, বৃষ্টির অভাবে এ মৌসুমের পাট চাষিদের কান্নার কারণ হয়ে পড়েছে। বৃষ্টির অভাবে ক্ষেতে সেচ আর সার-বিষ দিতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে। এদিকে পাট কাটা শুরু হলেও পানির অভাবে পাট পঁচানো যাচ্ছে না। এ মুহুর্তে ভৈরব সহ জেলার বিভিন্ন নদ-নদীতে পাট জাগ দেওয়া নিষেধ। তাই খরচ বেশি হলেও রিবন পদ্ধতিতে পাট জাগ দিতে হবে। অন্যথায় মাঠ কিংবা গ্রামের ছোট ছোট ডোবা বা পুকুরে পানি সেচ দিয়ে পাট জাগ দিতে হবে। এতে করে অন্ততঃ ক্ষতির হাত থেকে কিছুটা হলেও বাঁচবে কৃষক। তারপরও তিনি আশাবাদি অল্পদিনের মধ্যে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।